মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আউয়ালের সংবাদ সন্মেলন

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২০, ১৭:৫৭

সাহস ডেস্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংবাদ সন্মেলন করেছেন দুদকের দুর্নীতির মামলায় জামিনে থাকা পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল।

বুধবার (০৪ মার্চ) দুপুরে পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।

এ কে এম এ আউয়াল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের বিরুদ্ধে যে তিনটি মামলা করেছে তা মিথ্যা। এ মামলায় হাইকোর্টে আট সপ্তাহের জামিন নেই। এরপর শ ম রেজাউল করিম দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে রিট টু আপিল দায়ের করে এবং শুনানিতে জামিন খারিজ হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বিচারক আবদুল মান্নানকে নিয়ে মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের নাজিরপুরের বাসায় গোপন বৈঠক করেন। পরদিন ১ মার্চ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এস এম বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক খান পাননা এবং প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মুজিববর্ষ পালনের জন্য জেলা জজের আমন্ত্রণে তার সঙ্গে আলাপ করতে যান। সেদিন আলোচনার এক পর্যায়ে জজ সাহেব বলেন, আমার ও আমার স্ত্রীর জামিনের বিষয়ে তিনি বিবেচনা করতে পারবেন না, শ ম রেজাউল করিমের নিষেধ আছে।

আউয়াল বলেন, প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম প্রভাব খাটিয়ে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিভিন্ন স্থানে মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন। এছাড়া মন্ত্রী তার ভাইদের ঠিকাদারি কাজে যুক্ত করে কয়েকশ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন।

আউয়াল আরও দাবি করেন, শ ম রেজাউল করিম গণপূর্তমন্ত্রী হওয়ার পর তার ভাই ও  ভাইয়ের বন্ধু ক্যাসিনো সম্রাট জি কে শামীমের কাছ থেকে গাড়ি নিয়েছে।

আউয়ালের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ ম রেজাউল করিম বলেন, এমপি এ কে এম আউয়াল আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তার সবই মিথ্যা। মন্ত্রী হওয়ার পরে কোনও নিয়োগবাণিজ্য, কমিশনবাণিজ্য করি নাই, করবোও না ইনশাআল্লাহ। আমি আইন পেশায় নতুন নই। এ পেশা থেকে স্বচ্ছতার সঙ্গে আয় করেছি। সে আয় থেকে জমি কিনেছি।

মন্ত্রী বলেন, গাড়ি নেওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন তাও মিথ্যা অভিযোগ। তিনি আরও যেসব অভিযোগ করেছেন তাও ভিত্তিহীন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (৩ মার্চ) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর সদর ও নেছারাবাদ) আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আ’লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা ইরাদকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। কারাগারে যাওয়ার চার ঘণ্টার ব্যবধানে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে জামিন পান তিনি ও তার স্ত্রী। ওই আদেশের ঘণ্টাখানেক পর বদলি করা হয় বিচারক আবদুল মান্নানকে।

এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের করেন। এর ১টিতে আউয়ালের স্ত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়। ৭ জানুয়ারি উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জন্য জামিন লাভ করেন তিনি ও তার স্ত্রী। ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে উচ্চ আদালতের আদেশে আজ স্থানীয় আদালত থেকে জামিন নিতে পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হন তারা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, জেলার নাজিরপুরের থানার সামনে ও উপজেলা সদরের ভূমি অফিসের পেছনে ৬টি ভূয়া নামে ৩ শতাংশ সরকারি খাস জমি নিজের দখলে নেন। পরে সেখানে তিনি দ্বিতল পাকা ভবন তৈরি করে পল্লী বিদ্যুৎকে তাদের অফিস হিসেবে  ভাড়া দেন। এতে চুক্তি করেন এমপি পত্নী লায়লা পারভীন।

দুদকের ওই সূত্র আরো জানান, সরকারি খাস জায়গা লিজ নিয়ে ওই জায়গায় স্ত্রী লায়লা পারভীনের নামে দ্বিতল পাকা ভবন করে তা পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে ভাড়া দিয়ে অবৈধভাবে দখলে রাখার অপরাধে দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একেএমএ আউয়াল ও তার স্ত্রী লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দুদক।

এছাড়াও জেলার নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠী) উপজেলার ডাকবাংলোর কাছে একটি সরকারি খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে সেখানে তিন তলার একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। যা পরে আউয়াল ফাউন্ডেশন নামে নামকরণ করা হয়।

দুদক সূত্র জানায়, পিরোজপুরের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ, গণপূর্ত বিভাগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানিউন্নয়ন বোর্ডসহ যে বিভাগে কাজ হয়েছে তাদের প্রতিটি থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন নিয়েছেন। এছাড়াও ইন্দুরকানি ও মঠবাড়িয়া উপজেলায় ৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ কালে তিনি নগদ ৮০ লাখ টাকা ও ২ হাজার ডলার উৎকোচ নেন।

অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক নির্বাচন কমিশন, উপ-কর কমিশনারের কার্যালয় (পিরোজপুর), একাধিক ব্যাংকসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠনের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মো. আলী আকবর।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত