এরশাদ: মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত সেনা অফিসার

প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১৪:২৫

বিতর্ক কখনোই পিছু ছাড়েনি রাজনীতিতে 'ইম্পরট্যান্ট ফ্যাক্টর' হিসেবে আলোচিত একসময়ের স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। তবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এরশাদ নিজেই। মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বেশ অনেকবার।

এরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫০ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ল' কলেজে ভর্তি হলেও ১৯৫১ সালে তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অফিসার্স ট্রেনিং স্কুলে যোগ দেন। ১৯৫২ অফিসার হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত ছিলেন এরশাদ। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করার পর ১৯৬৮ সালে এরশাদ শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন তিনি। ১৯৭১-১৯৭২ সালে ৭ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযুদ্ধে তার কোনো ভূমিকা ছিল না।

জানা যায়, ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, সেই সময়টিতে এরশাদ রংপুরে গ্রামের বাড়িতে ছুটিতে ছিলেন। সেখান থেকেই এপ্রিলের প্রথম দিকে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যান এরশাদ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েও দেশে এসেছিলেন এরশাদ। সেপ্টেম্বরে রংপুর এসে অসুস্থ পিতা মোহাম্মদ মকবুল হোসেনকে দেখতে এসেছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েও এরশাদ আবার চলে যান পাকিস্তানে। 

মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের লেখা ‘প্রতিরোধের প্রথম প্রহর’ বইটিতে দাবি করা হয়, পাকিস্তানে আটকেপড়া বাঙালি অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে যারা পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, দেশদ্রোহিতার অভিযোগে তাদের পাকিস্তানে বিচার শুরু হলে এরশাদ সেই ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

কিছু অফিসারের এরূপ আচরণের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার পাকিস্তান প্রত্যাগত অফিসারদের সেনাবাহিনীতে আত্তীকরণের জন্য যে নীতিমালা প্রণয়ন করেন সে অনুযায়ী তার চাকুরীচ্যুতি হওয়ার কথা। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যারা বাংলাদেশে এসে যুদ্ধে যোগদানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তানে ফিরে গেছেন তাদেরকে এই নীতিমালা অনুযায়ী অব্যাহতি দেয়া হয়। জনা পঞ্চাশেক অফিসারকে এ কারণে চাকরি হারাতে হয়। কিন্তু একই অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার পরও এরশাদ চাকুরীচ্যুত তো হনই নি বরং প্রমোশনসহ পদে অধিষ্ঠিত হন।

তিনি পাকিস্তানে বসে তার গ্রামের বাড়ি রংপুরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দামী মূল্যবান সামগ্রী পাঠাতেন। এখানে বলে রাখা ভাল ৭১-পরবর্তী সময় বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের নিয়মিত বিমান চলাচলও ছিল না। কিন্তু তিনি কোন ঝামেলা ছাড়াই তার মূল্যবান পণ্য বাড়িতে পাঠাতে পেরেছেন। কর্নেল শাফায়াত জামিল বলেন- আমার ধারণা এরশাদ ছিলেন পাকিস্তানী ISI আর্শীবাদপুষ্টদের অন্যতম প্রধান। তিনি ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে অন্তত চারবার বিমানযোগে বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী পাকিস্তান থেকে রংপুরে তার বাড়িতে পাঠান। আটকে পড়া বাঙালি সামরিক অফিসাররা তখন তো বিভিন্ন বন্দীশিবিরে নানারকম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। তখন পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে কোন নিয়মিত বিমান চলাচলও ছিল না। তথাকথিত বন্দি এরশাদের পক্ষে ISI-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এধরনের কাজ কোনক্রমেই সম্ভব ছিল না। আমার জানা মতে আটকে পড়া প্রায় ১২’শ অফিসারের কারোই তার মতো সুযোগ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি।

মেজর (অব:) রফিকুল ইসলাম বলেন- বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর প্রাণভয়ে এরশাদ বাংলাদেশে ফেরত আসেন , এবং চাকুরী ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়েন । তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী ও কুড়িগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন মিয়া একদিন সন্ধ্যায় এরশাদকে পাজামা- পাঞ্জাবি পরিয়ে তার উপর একটি মুজিব কোট পরিয়ে তার হয়ে তদবিরের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমার ভাগ্নের চাকরিটা না থাকলে যুদ্ধ করে আমার কি লাভ হল!!” এ কথা বলার সাথে সাথে এরশাদ শেখ মুজিবের পা ছুঁয়ে সালাম করেন । শেখ মুজিব এতে খুশি হয়ে এরশাদের আপাদমস্তক তাকিয়ে দেখে খাটো বাঙ্গালীর মধ্যে লম্বা চেহারার অধিকারী এরশাদের দিকে তাকিয়ে আরও খুশি হয়ে তাকে চাকরিতে বহাল রাখার নির্দেশ দেন ।

যদিও ২০১৪ সালে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা নিয়ে এসব অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানান এরশাদ। তিনি দাবি করেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানে বন্দি ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারে গঠিত সামরিক আদালতে বিচারকের দায়িত্বেও ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল অভিযোগকে তিনি ভিত্তিহীন, অপপ্রচার ও বানোয়াট আখ্যায়িত করেন।

এরশাদ বলেন, ‘দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতাযুদ্ধে আমি অংশ নিতে পারিনি। যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক মাস আগে আমাকে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করা হয়। যদি দেশে থাকতাম, তাহলে জীবন বাজি রেখেই স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতাম।’  তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সময় এবং স্বাধীনতার পরে পাকিস্তানে স্ত্রীসহ বন্দি ছিলাম। বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক সাফল্যে আমরা দেশে ফিরতে পেরেছি।’

বিভিন্ন সূত্রমতে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে অন্যান্য আটকে পড়া বাঙালি অফিসারের সঙ্গে ফিরে এসেছিলেন এরশাদ। যারা ফিরে এসেছিলেন তাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র। তবে দেশে ফিরে আসার পর মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে লবিংয়ের মাধ্যমে তিনি পুনরায় চাকরিতে বহাল হন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। এরপর তাকে প্রথম বাংলাদেশি সামরিক অফিসার হিসেবে ভারতে পাঠানো হয় এনডিসি কোর্স করতে।

১৯৭৩ সালের শেষের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদে কর্মরত বাঙালি অফিসার ও সদস্যদের পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। পাকিস্তান-ফেরত অফিসারদের মধ্যে তৎকালীন লে. কর্নেল এরশাদও আসেন। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তিনটি পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন। শান্তিকালীন সময়ে এরকম পদোন্নতি নজিরবিহীন। পাকিস্তান ফেরত সেনাবাহিনী ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সেনাদের মধ্যে মানসিকভাবে এক-যুদ্ধ চলতে থাকে। এর মূল কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক সরকারি আদেশে সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে সরকারী চাকরিজীবী মুক্তিযোদ্ধাদের দুই বছরের জ্যেষ্ঠতা দেওয়া হয়। যা পাকিস্তান ফেরত কোন সেনা অফিসার ও সদস্য মেনে নিতে পারেনি। এখানে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, এরশাদ বাংলাদেশে আগমনের পর আর্মি হেড কোয়ার্টার-এর প্রথম কনফারেন্সে মুক্তিযোদ্ধাদের দুই বছরের সিনিয়রটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও অ-মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এক স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়। বিভিন্ন সেনা কর্মকর্তা লিপ্ত হন বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে। সেই খেলায় এরশাদও বসে ছিলেন না। শোনা যাক কর্নেল সাফায়াত জামিল (অব:) এর মুখে-“৭৪ সালের শেষ দিকের কথা। মেজর ডালিমের সঙ্গে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা গাজী গোলাম মোস্তফার একটি পারিবারিক দ্বন্দ্বকে তদানীন্তন কর্নেল এরশাদ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতলব আঁটেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তিনি একদল তরুণ অফিসারকে নেতৃত্ব দিয়ে তৎকালীন সেনা উপ-প্রধান মেজর জেনারেল জিয়ার অফিসে যান এবং ঐ ঘটনায় সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপের দাবি করেন। অথচ এরশাদ তখন সেনাবাহিনীর সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত।”

এরপর ঘটে যায় ১৫ অগাস্টেই সেই ভয়াবহ দুঃখজনক ঘটনা। কিছু উচ্ছৃঙ্খল জুনিয়র অফিসারদের হাতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। এরপর খন্দকার মোশতাকের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বগ্রহণের পর সেনা প্রধান শফিউল্লাহকে অব্যাহতি দিয়ে তাঁর চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হোল রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিয়ে। উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হয় এবং তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার এইচ এম এরশাদকে নিয়ম ভেঙ্গে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হল। ভারতে প্রশিক্ষণে থাকাকালে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে তিনি কর্নেল থেকে দুইটি পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হন যা সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। এখানে বলে রাখা ভাল বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হন তখন এরশাদ ভারতে প্রশিক্ষণ-রত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু নিহত ও পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পেলে এরশাদ কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে আসেন। ১৫ অগাস্টের ষড়যন্ত্রের সাথে এরশাদ জড়িত আছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে মিটিংয়ের জন্য তিনি কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে আসেন। শোনা যাক কর্নেল সাফায়াত জামিল (অব:)-এর মুখেই- মেজর জেনারেল জিয়ার সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পরবর্তী দ্বিতীয় দিনের ঘটনা। আমি সেনাপ্রধানের অফিসে তাঁর উল্টো দিকে বসে আছি। হঠাৎ করেই রুমে ঢুকলেন সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত ডেপুটি চিফ মেজর জেনারেল এরশাদ। এরশাদের তখন প্রশিক্ষণের জন্য দিল্লীতে থাকার কথা। তাকে দেখা মাত্র জিয়া অত্যন্ত রূঢ়ভাবে জিগ্যেস করলেন, তিনি বিনা অনুমতিতে কেন দেশে ফিরে এসেছেন। জবাবে এরশাদ বলেন- তিনি দিল্লীতে অবস্থানরত তার স্ত্রী জন্য একজন গৃহ-ভৃত্য নিতে এসেছেন। তা শুনে জিয়া রেগে গিয়ে বলেন, আপনার মতো সিনিয়র অফিসারদের এই ধরনের লাগামছাড়া আচরণের জন্যেই জুনিয়র অফিসাররা রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে দেশের ক্ষমতা দখলের মতো কাজ করতে পেরেছে। জিয়া এরশাদকে পরবর্তী ফ্লাইটেই দিল্লী ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাকে বঙ্গভবনে যেতেও নিষেধ করলেন। এরশাদকে বসার কোন সুযোগ না দিয়ে জিয়া তাকে এরকমভাবেই তাড়িয়েই দিলেন। কিন্তু সেনা প্রধানের নির্দেশ অমান্য করে রাতে এরশাদ বঙ্গভবনে যান এবং অনেক রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থারত অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরদিন ভোরে এরশাদ তার প্রশিক্ষণ-স্থল দিল্লীতে চলে গেলেন ঠিকই, কিন্তু সেনাপ্রধান জিয়ার নির্দেশ অমান্য করে রাতে তিনি বঙ্গভবনে যান। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থানরত অভ্যুত্থান-কারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এর থেকেই মনে হয় এরশাদ আসলে তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করার জন্যই ঢাকায় আসেন। এখানে বলে রাখা ভাল পরবর্তীকালে, জেনারেল এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর অভ্যুত্থান-কারীদের মধ্যে যারা চাকরি করতে চেয়েছিলেন, এরশাদ তাদেরকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে পূর্নবহাল করেন। দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্বাসিত হোল ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থান-কারীরা। পোস্টিং নিয়ে তাদের অনেকে বিভিন্ন দূতাবাসে যোগ দেয়। জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে জেনারেল এরশাদ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান উপদেষ্টা হন। যদিও তিনজন সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা অফিসার ঢাকায় চাকরিরত ছিল। অতঃপর জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর এরশাদ নিহত জিয়ার বিচারের নামে এক ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেন। জিয়া’র বিচারের নামে তিনি সেনাবাহিনীতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের বিচার, হত্যা এবং অনেক সেনা অফিসারকে জোর করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেন। জিয়াউর রহমানের খুনিদের বিচারের নামে জেনারেল মঞ্জুরকে হত্যা করা হয়। বর্তমানে জেনারেল মঞ্জুর মামলার কোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এবং এরশাদ এই মামলার একজন আসামী। জিয়া হত্যার সুযোগে এরশাদ ও কিছু অ-মুক্তিযোদ্ধা সিনিয়র সেনা অফিসার পাকিস্তান-প্রত্যাগত মেজর জেনারেল (বর্তমানে অব:) সামাদকে সভাপতি করে প্রহসনমূলক-ভাবে মুক্তিযোদ্ধা আর্মি অফিসার ছাঁটাই করার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়। এ বোর্ডের মাধ্যমে আরও প্রায় ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে বিভিন্ন অজুহাতে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয়। অদ্ভুত বিষয় হল পরবর্তী সরকারগুলো এসব মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে কেন ও কি কারণে ফাঁসি, জেল ও চাকরীচ্যুত করা হোল তা কোন নিরপেক্ষ তদন্তের অগ্রহণ দেখায়নি কিংবা একটুও উদ্বেগ প্রকাশ করেননি। তবে এরশাদের মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার বিদ্বেষ এখানেই শেষ নয় তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে এক অলিখিত নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নিকট আত্মীয়দের সেনাবাহিনীর অফিসার কোরে যোগদান নিষিদ্ধ করেছিলেন। পক্ষান্তরে একাত্তরে পরাজিত পাকবাহিনীর দোসরদের সন্তানদের জন্য সেনাবাহিনীর দুয়ার অবারিত করা হয়। এভাবেই ক্ষমতার লোভে সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের বিপক্ষে আরেকটি প্রতিপক্ষ সৃষ্টি করে সবসময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন উচ্চাভিলাষী এরশাদ।

মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা প্রসঙ্গে ২০১৭ সালে জাতীয় সংসদের এক অধিবেশনেও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পারাকে জীবনের বড় দুঃখ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

তথ্য:
১। https://blog.mukto-mona.com/2014/05/04/41314/
২। http://www.deshrupantor.com/specially/2019/07/15/155040
৩। এক জেনারেলের নীরব সাক্ষ্য- মেজর জেনারেল মইনুল হোসেন চৌধুরী (অব:) বীর বিক্রম
৪। তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা- লে: কর্নেল (অব) এম.এ.হামিদ পিএসসি
৫। http://www.ntvbd.com/arts-and-literature/26147/

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত