ড. কামাল হোসেন রাজাকার দাবী করলেন বিচারপতি মানিক

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০১৮, ১৮:২০

সাহস ডেস্ক

“মিট্টা খা ২০০৮ সালে ডিফেন্স জার্নাল নামে একটি ম্যাগাজিনে লিখেছেন, (একাত্তরের) ২৮ মার্চ কামাল সাহেব মিট্টা খাকে ফোন করে বলল, ‘সবাইতে তো চলে গেছে ভারতে, আমি যেতে চাই না, আমি মুক্তিযুদ্ধ-টুদ্ধ করব না, কিন্তু আমাকে ওই মুক্তিযোদ্ধারা মেরে ফেলবে, আমাকে দয়া করে রক্ষা করুন। মিট্টা খান তাকে ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টারে নিয়ে আশ্রয় দিয়েছেলেন, প্রোটেকশন করেছিলেন এবং ২৯ মার্চ কামাল সাহেবকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।”

“তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর উনি প্রতি মাসে কামাল সাহেবের সাথে দেখা করতেন। কামাল সাহেব তখন তার শ্বশুর এবং তার সম্পর্কে শ্বশুর এ কে বদি আল্লাহবক্স-খোদাবক্স, খুব নাম করা উকিল ছিলেন, তার সঙ্গে প্র্যাকটিস করতেন।”

মিট্টা খার লেখা থেকে উদ্ধৃত করে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘সোজা কথা, ড. কামাল হোসেন একজন রাজাকার’। শুক্রবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িকতার সেকাল-একাল, আমাদের কথা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিচারপতি মানিক এ মন্তব্য করেন।

বিচারপতি মানিক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিরোধে ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ ছাড়েন কামাল হোসেন, গড়ে তোলেন নিজের রাজনৈতিক দল গণফোরাম। এখন নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে গঠিত সরকারবিরোধীদের জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের জোট গড়ার প্রসঙ্গ টেনে বিচারপতি মানিক বলেন, কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সঙ্গে আঁতাত করছেন। যারা গ্রেনেড মেরে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে আজ আঁতাত করেছেন তিনি।

আমি আশ্চর্য হইনি এজন্য যে কামাল হোসেন নিজেও তো তাদেরই একজন। সেদিন একজন (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মাদ ফরাসউদ্দিন) বলেছেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যায় কামাল হোসেন জড়িত ছিল এই মর্মে এভিডেন্স পাওয়া যাচ্ছে, কথাটা উনি কিন্তু ভুল বলেননি, উনি সেই সময় বঙ্গবন্ধুর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মামলা লড়া আইনজীবীদের একজন কামাল হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে বন্দি হলেন, কেন তাকে পাকিস্তানে নেওয়া হল- সেসব বিষয়ে ভিন্ন একটি পাঠ শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অনুষ্ঠানে হাজির করেন মিট্টা খা নামের এক পাকিস্তানি জেনারেলের লেখা থেকে উদ্ধৃত করে।

গত অগাস্টে অর্থনীতি সমিতির এক অনুষ্ঠানে সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের বক্তব্যের সূত্র ধরে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মানিক বলেন, ফরাসউদ্দিন সাহেব বলেছেন সেদিন, কামাল হোসেনকে ওখানে (পাকিস্তানে) রাখা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য। কারণ তারা সব ঠিক-ঠাক করেছিল বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসি দেবে এবং এই ফাঁসি দেওয়ার জন্য সাক্ষী দরকার ছিল। কামাল হোসেনকে সাক্ষীর জন্য রেখেছিল।

আইএসআই অত্যন্ত করিৎকর্মা একটি গোয়েন্দা সংস্থা, যখন আবার বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হল তখন আবার কামাল সাহেবকে সেই প্লেনে উঠিয়ে দিয়েছে। এই হল কামাল হোসেনের ইতিহাস, উনি একজন রাজাকার।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের আলোচনা সভায় জিয়াউর রহমানেরও সমালোচনা করেন সাবেক বিচারপতি মানিক। বলেন, কথাটা কিন্তু আমি অনেকের কাছ থেকে শুনেছি, উনি তো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণই করেননি।… এটা আজকে স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল নকশা করেছিলেন জিয়াউর রহমান।

স্বাধীনতাবিরোধীদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করায় জিয়াউর রহমানের তীব্র সমালোচনা করে মানিক বলেন, আমি বলব জিয়াউর রহমান এদেশের নম্বর ওয়ান রাজাকার। এই কুখ্যাত রাজাকারের মরণোত্তর বিচারের সিস্টেম যেহেতু আইনে নেই, তাই আমার দাবি থাকবে অন্তত তদন্ত করা হোক পঁচাত্তরে ও তারপরে জিয়াউর রহমানের কী ভূমিকা ছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যায় তার কী ভূমিকা ছিল, এটা তদন্ত হলে ইতিহাসে রেকর্ড থাকবে।

সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবিব অনুষ্ঠানে বলেন, সাম্প্রদায়িকতাকে রাজনীতিতে একটি অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাকে দুর্বল মানসিকতার মানুষ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।

অন্যদের মধ্যে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইয়াহিয়া জামান, সাংবাদিক জাফর ওয়াজেদ এ আলোচনায় বক্তব্য দেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত