দেশের দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বরিশালে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৭

সাহস ডেস্ক

দক্ষিণাঞ্চলে দেশের দ্বিতীয় পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা ২৪শ’ মেগাওয়াট পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছি রূপপুরে। আমরা ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের কয়েকটি দ্বীপ সার্ভে করেছি। আমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা রয়েছে বরিশালের এই দ্বীপগুলোর একটিকে বেছে নিয়ে ভবিষ্যতে আরেকটি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র করবো।’

সোমবার বিকালে (৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (বিএসএমসি) সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বরিশালসহ সারাদেশে সরকার একশ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। ভোলা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বরিশালে যেন গ্যাস আসে, তার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা ইতোমধ্যেই শুরু করা হয়েছে। এই অঞ্চলে কিছু শিল্পাঞ্চল গড়ে ওঠা একান্তভাবেই প্রয়োজন এবং আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

গবেষণায় সরকারের প্রণোদনার ফলে দেশীয় বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই লবণাক্ততা সহিষ্ণু ধানের বীজ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জলমগ্ন ধান উৎপাদনেরও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, আর আমাদের গোপালগঞ্জের ধাপের ওপর করা সবজির চাষ বা ফ্লোটিং চাষ পদ্ধতি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছি। এক সময় শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত বরিশালে যেন আবার সুদিনে ফিরতে পারে, সেজন্যও আমরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

জনগণের দোড়গোড়ায় সব ধরনের সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার ব্যাপক কর্মসূটি বাস্তবায়ন করে যচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের সাথে সাথে তাদের পুষ্টি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে মানুষ যেন আরও উন্নত হয়, সমৃদ্ধশালী হয়; সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং যার উন্নয়নের ছোঁয়াটা দেশের মানুষ পাচ্ছে। জিনিসপত্রের দামও আমরা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, তেমনি মানুষের মাথাপিছু আয়ও আমরা বৃদ্ধি করেছি।’

এসময় সরকার প্রধান বলেন, ‘নদীগুলো ড্রেজিং করে নৌপথগুলোকে আমরা পুনরায় চালু করছি। তার ফলে অল্প খরচে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণ হতে পারবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’

বরিশালসহ পুরো দক্ষিণ জনপদ এই সরকারের শাসনামলে আর অবহেলিত নয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি পায়রা সমুদ্র বন্দরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ভবিষ্যতে ওটা গভীর সমুদ্রবন্দরে রুপান্তরিত হবে এবং ইতোমধ্যেই সেখানে ১৩শ’ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে।’

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ এক হাজার বেডের করাসহ সরকারের অন্যান্য পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাশাপাশি আমাদের একটা পরিকল্পনা রয়েছে- প্রত্যেক বিভাগে আমরা একটি করে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করবো। ইতোমধ্যে ৪টি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করেছি। এ অঞ্চলেও করবো। তবে, একটি কথা আমি স্পষ্ট বলে দেই- কোনও মেডিক্যাল কলেজকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তর করবো না। বিশ্ববিদ্যালয় হবে সম্পূর্ণ আলাদা। আর বিশ্ববিদ্যালয় হবে গবেষণামূলক, বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে পোস্ট গ্রাজুয়েশন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কেবল পোস্ট গ্রাজুয়েশন এবং গবেষণা থাকবে এবং সেখানে শুধু নার্সিং ট্রেনিয়ের ব্যবস্থাটা থাকবে, এটা সম্পূর্ণ আলাদাভাবে করবো। সব মেডিক্যাল কলেজগুলো সেখানকার নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এফিলিয়েটেড থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘দেশের মানুষ যেন সেবা পায়, সেজন্য সরকার একের পর এক ডাক্তার এবং নার্স  নিয়োগ দিয়ে চললেও দুঃখজনক যে- আমাদের উপজেলাগুলোতে ডাক্তার থাকছে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু প্রতিষ্ঠান করে যাব আর সেগুলি অবহেলিত থাকবে, এটা কিন্তু হতে পারে না। মানুষের সেবা দেওয়াটা প্রত্যেকের দায়িত্ব। আমি আশা করি এই সেবাটা প্রত্যেক মানুষই পাবে।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় প্রত্যক উপজেলায় বহুতল ভবন নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এসব ভবনে চিকিৎসকরা ভাড়ায় আবাসন সুবিধা লাভ করতে পারবেন।’

সূত্র: বাসস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত