এখন আদর্শিক রাজনীতির প্রয়োজন: তোফায়েল

প্রকাশ : ০৯ মে ২০১৮, ১৬:৩৭

আমরা পরিবারের দেওয়া ২০০টাকা থেকে ৫০ টাকা বাঁচিয়ে রাজনীতি করেছি। রিকশায় না চড়ে পায়ে হেঁটে রাজনীতি করেছি। ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণির কামরায় চড়ে সাংগঠনিক সফর করেছি। এখন ছাত্র নেতাদের কোটি টাকার বিষয়টি নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করবনা। তবে আদর্শিক রাজনীতির বড় প্রয়োজন এখন। যে জন্য নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব আনতে হবে সকল স্তরে। 

আমাদের বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য ৯০ এর পর থেকে ডাকসু নেই। যে ডাকসুর মাধ্যমে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরী হয়েছে। আজকের আমি তোফায়েল কিংবা আব্দুর রাজ্জাক ছাত্র নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে উঠে এসেছি। কিংবা পপি, ইকবালুর রহিমরাও তাই। অনতিবিলম্বে ডাকসুসহ সকল হল, শিক্ষাঙ্গণে নির্বাচনের মাধ্যমে আদর্শিক এবং ত্যাগী নেতৃত্ব তৈরী করতে হবে।

রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সেমিনার হলে আয়োজিত ‘তারুণ্য সম্পদ, তারুণ্যই ভবিষ্যৎ : প্রয়োজন আদর্শিক নেতৃত্ব’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমনটি বলেছেন বানিজ্যমন্ত্রী এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি তোফায়েল আহমেদ।

গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে গবেষণা এবং কর্মশালা ভিত্তিক সংগঠন হাসুমণির পাঠশালা।

গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মোখলেসুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ আলোচনার বিষয়বস্তুকে ভীষণ প্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করেন। তিনি একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, আগামসী লেনে ছাত্রলীগের অফিস ছিল। তার তিন মাসের ভাড়া জমে যায়। আমার একটি হোন্ডা ছিল। সেটি নিয়ে প্রয়াত নেতা রাজ্জাক ভাইকে নিয়ে যাই অফিসে। বাড়ির মালিক ভাড়া চাইলে সময় নেই। আমার হোন্ডায় করে বঙ্গমাতার কাছে যাই। তিনি ২০০ টাকা দেন। ভাড়া ১৮০ টাকা দেওয়ার পর যে ২০ টাকা ছিল তা দিয়ে আমরা দুজন দুপুরের খাবার খাই। এভাবে আমরা ছাত্র রাজনীতি করেছি। আজকের তারুণ্যকে আদর্শবান হতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৯ বছর বয়সেই মহান নেতায় পরিণত হয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রথম গ্রেপ্তার তিনি। ১৯৪৮ এ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যরা মুচলেকা দিয়ে মুক্তি নিলেও তিনি নেননি। ছাত্র আন্দোলনে আমরা যখন নেতৃত্ব দেই তখন আমারে বয়স ছিল ২৬। 

আসাদ-মকবুল-মতিউর-রুস্তরের আত্মদানে একসপ্তাহে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করেছিল তরুণ সমাজ। ৭০ এর নির্বাচনে জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে এই তরুণরাই। 

আগামী ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের স্বজন বিয়োগের পর দেশে ফেরার দিন। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দুটি ছবি আমার ভোলার জাদুঘরে আছে। সেই একই দৃশ্য। লাখো মানুষের অভ্যর্থনা। যেন বঙ্গবন্ধু ফিরে এসেছেন শেখ হাসিনার বেশে। আমরা তার অবর্তমানে তাকে দলের প্রধান করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছি।

তিনি আরো বলেন, কেবল শেখ হাসিনার কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। বিএনপি জামাতের অকার্যকর করে দেওয়া বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল করেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিএনপি সহায়ক সরকারের রুপরেখা দিতেই পারে, কিন্তু কাকে দেবে সেটা তারা ভালো জানে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির এ বিষয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। কারণ আওয়ামী লীগ সংবিধানে বিশ্বাস করে। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। যা পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন তাদের পূর্ণ স্বাধীনতায়। 

নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনে বিএনপির দাবী উড়িয়ে দিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এর কোন সুযোগ নেই। কারণ সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচন কমিশনে বিএনপির মনোনীত প্রতিনিধিও রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ সদস্য আব্দুর রাজ্জাক গাজীপুরের স্থগিত হয়ে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন প্রমঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোন সময়ে গাজীপুর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। তিনি বলেন, গাজীপুরে কেন নির্বাচন হবেনা? আমরা কুমিল্লায় হেরেছি, রংপুরে হেরেছি। মেনে নিয়েছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সামরিক বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লীগ কখনও ক্ষমতায় আসেনি। ৫৪ থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। আগামীতেও জনগণের রায় নিয়ে স্থানীয় এবং জাতীয় সব ক্ষেত্রে ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতায় থাকবে।

তারেক রহমানকে তারুণ্যের কলঙ্ক হিসেবে অভিহিত করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তারুণ্যের প্রতিনিধি হয়েও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের লালন-পালন করে, হাওয়া ভবন করে একটি দেশকে আতঙ্কিত করেছেন। তার কুপরামর্শে একটি দলকে নেতাশূণ্য করার চেষ্টা হয়েছে গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে। পাচার করেছেন দেশের শত কোটি ডলার। যার তথ্য দিয়েছে এফবিআই। তার ছোট ভাই স্বর্গবাসী হোন এই আশা করি, তবে সেও এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। ২০০৪ সালের ‘টাইম’ পত্রিকা বাংলাদেশকে অকার্যকর, অপমানের রাষ্ট্র বলে অভিহিত করেছিল। বাংলার মাটিতে এসব অন্যায়ের বিচার চলছে-চলবে। বিচার বাঁধাগ্রস্ত করার ক্ষমতা কারো নেই।

গোলটেবিল বৈঠকে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া ৫ ছাত্রীকে উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ তুলে দেন প্রধান অতিথি তোফায়েল আহমেদ।

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন হাসুমণি’র পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি। প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মশিউপর রহমান। 

সাহস২৪.কম/আল মনসুর/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত