কথাসাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৩৩

১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৯ মে পিতার কর্মস্থল বিহারের সাঁওতাল পরগনার দুমকা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের নিকট মালবদিয়া গ্রামে। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের গ্রাজুয়েট । তিনি সেটেলমেন্ট বিভাগে চাকরি করতেন এবং শেষজীবনে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকৃত নাম প্রবোধকুমার, ‘মানিক’ তাঁর ডাকনাম। তাঁর মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল পূর্ববঙ্গের গাউদিয়া গ্রামে। এই গ্রামটির পটভূমিতে তিনি রচনা করেন তার প্রসিদ্ধ উপন্যাস পুতুলনাচের ইতিকথা।

পিতার চাকরিসূত্রে মানিককে দুমকা, আড়া, সাসারাম, কলকাতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বারাসাত, টাঙ্গাইল ও মেদিনীপুরের নানা স্কুলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। শেষপর্যন্ত তিনি মেদিনীপুর জেলা স্কুল থেকে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরপর তিনি বাঁকুড়া ওয়েসলিয়ন মিশন কলেজ থেকে ১৯২৮ সালে আইএসসি পাস করেন এবং সে বছরই কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএসসি-তে ভর্তি হন। কিন্তু পাঠ অসমাপ্ত রেখেই তিনি পেশাগত জীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর সহোদর ভাইয়ের সঙ্গে একটি প্রিন্টিং প্রেস ও প্রকাশনব্যবসা স্থাপন করেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি সহোদরের সঙ্গে যৌথভাবে ‘উদয়াচল প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং হাউস’ নামের প্রকাশনী ব্যবসা পরিচালনা করেন। একইসঙ্গে তিনি বঙ্গশ্রী (১৯৩৭-৩৯) পত্রিকার সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া কিছুদিন তিনি ভারত সরকারের ন্যাশনাল ওয়ার ফ্রন্টের প্রভিন্সিয়াল অরগানাইজার এবং বেঙ্গল দপ্তরে প্রচার সহকারী পদেও কর্মরত ছিলেন।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ত্রিশোত্তর বাংলা কথাসাহিত্যের একজন শক্তিমান লেখক। তিনি সত্যান্বেষীর মতো মানব মনের গভীর থেকে তুলে এনেছেন অকথিত গল্পের ভাণ্ডার। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নের সময় বিচিত্রা পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প ‘অতসী মামী’ (১৯২৮) প্রকাশিত হলে পাঠক মহলে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। পরে নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের ফলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মর্যাদা লাভ করেন। উল্লেখ্য যে, কুড়ি শতকের তিরিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ -শরৎচন্দ্র ধারার বিরোধিতা করে কল্লোল গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল। সেই কল্লোলগোষ্ঠীর একজন লেখক হিসেবে মানিক স্বতন্ত্র পরিচয় গড়ে তোলেন।

১৯৫৪ সালে ‘কেন লিখি’ নামে একটি সংকলন বেরিয়েছিল ফ্যাসিস্টবিরোধী লেখক ও শিল্পী সংঘের পক্ষে। সংকলনটির সম্পাদক ছিলেন হিরণকুমার সান্যাল ও সুভাষ মুখোপাধ্যায় । ‘বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পীদের জবানবন্দি’- এই ঘোষণা থাকলেও সংকলনটিতে কথাশিল্পীদের সঙ্গে কবিরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই সংকলনটিতে অন্যদের সঙ্গে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একটি লেখা লিখেছিলেন। নিতান্তই ফরমায়েশি রচনা। কিন্তু বাস্তবিকই সেটি ছিল তাঁর অসাধারণ রচনা। তার মধ্যে প্রতিভাসিত হয়েছে শিল্পীমাত্রই, কিন্তু বিশেষভাবে প্রতিবিম্বিত হয়েছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে সুন্দর সমাজ সচেতন জীবন ঘনিষ্ঠ সাহিত্যকর্মে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

পূর্ববঙ্গের জীবনের গতিধারা, নদীনালা, খালবিল, তেলে-জলেই তিনি বড় হয়ে ওঠেন। তাই সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কথা, জীবন, পারিপার্শ্বিক চিত্রগুলো নিপুণ দক্ষতার সাথে প্রকাশ সক্ষম হন। অসংখ্য অভিজ্ঞতার ভারে নুয়ে পড়া মানিক পাঠককে তাঁর অভিজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ রাখতেই লেখা শুরু করেন। সামাজিক শ্রেণি বৈষম্য, শোষণ, নিপীড়ন, অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সোচ্চার তাঁর লেখনি মার্কসবাদে দীক্ষা নেয়। জীবনের একটা পাঠান্তর হিসেবে ধরে নেয়া যায়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৫ সাল থেকেই লেখক হিসেবে অাত্মপ্রকাশ করেন। তিনি যখন সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন, তখন ফ্রয়েডীয় মনোবিকারতত্ত্ব সাহিত্যিক মহলে খুব জনপ্রিয়তা পায় এবং পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মূলত তাঁর লেখনীতে বিশাল বিস্তীর্ণ নদ-নদীর পটভূমিকায় সাধারণ মানুষের কথা যেমন বস্তুনিষ্ঠ জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন, তেমনি মানুষের কর্মে পিপাসায় জীবনচিত্র তুলে ধরতে গিয়ে আদিমতার অন্ধকারে ফিরে গেছেন বার বার। অদ্ভুত নিরাসক্তভাবে তিনি মানুষের জীবন ও সমস্যাকে দেখেছেন, সমাধানের চেষ্টাও করেছেন বুদ্ধি ও লেখনীতে। নর-নারীর জৈবসত্তা বিকাশের নানাদিক তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। সাহিত্যসৃষ্টিতে জৈবসত্তা ও দৈহিক বর্ণনায় তিনিছিলেন কিছুটা বেপরোয়া প্রকৃতির।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনের প্রথম পর্বে মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড, ইয়ুং, অ্যাডলার প্রমুখ দ্বারা প্রভাবিত হলেও পরবর্তী সময়ে তিনি মার্কসবাদে দীক্ষা নেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হন এবং আমৃত্যু এই দলের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পী সঙ্ঘের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। সাহিত্যের মাধ্যমে মার্ক্সের শ্রেণিসংগ্রাম তত্ত্বের বিশ্লেষণ এবং মানুষের মনোরহস্যের জটিলতা উন্মোচনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষশিল্পী। শহরের পাশাপাশি গ্রামজীবনের দ্বন্দ্বসঙ্কুল পটভূমিও তাঁর উপন্যাস ও গল্পে গুরুত্ব পেয়েছে। অর্ধশতাধিক উপন্যাস ও দুশো চব্বিশটি গল্প তিনি রচনা করেছেন।

প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র থাকার সময় ১৯২৮ সালে 'অতসীমামী' নামে মানিকের প্রথম গল্প রচনার সংবাদ পাওয়া যায়। ১৯৩৫-এ 'অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প' নামে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৯২৯ সালে উপন্যাস 'দিবা রাত্রির কাব্য আদি রচনা' শুরু হয়। ১৯৩৪ সালে এটি বঙ্গশ্রী পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর ১৯৩৫-এ। তবে 'জননী' একই সালের মার্চে প্রকাশিত হয়। এদিক থেকে 'জননী' মানিকের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস। 'পদ্মা নদীর মাঝি' পূর্বাশা (১৯৩৪) এবং 'পুতুল নাচের ইতিকথা' ভারতবর্ষ পত্রিকায় (১৯৩৫) ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত হয়। ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এই দুটিসহ 'জীবনের জটিলতা' নামে আরো একটি উপন্যাস। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ 'প্রাগৈতিহাসিক'। প্রাথমিক গ্রন্থ প্রকাশনায় কথাসাহিত্যিক হিসেবে সাফল্য অর্জনের পর যথাক্রমে প্রকাশিত হয় : 'অমৃতস্য পুত্রাঃ' (১৯৩৮), 'মিহি ও মোটা কাহিনী' (১৯৩৮), 'সরীসৃপ' (১৯৩৯), 'বৌ' (১৯৪০), 'শহরতলী' (১৯৪০-৪১), 'অহিংসা' (১৯৪১), 'ধরাবাঁধা জীবন ' (১৯৪১), 'চতুষ্কোণ' (১৯৪২), 'সমুদ্রের স্বাদ' (১৯৪৩) এবং 'প্রতিবিম্ব' (১৯৪৩)।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'চিহ্ন' (১৯৪৭) একটি অসাধারণ উপন্যাস। ভারতবর্ষের গণআন্দোলনের সঙ্গে জনজীবনের সম্পৃক্ততা এ উপন্যাসে শৈল্পিক অভিব্যক্তি লাভ করেছে। এ পর্বে আরো প্রকাশিত হয়েছে : 'আজ কাল পরশুর গল্প' (১৯৪৬), 'চিন্তামণি' (১৯৪৬), 'পরিস্থিতি' (১৯৪৬), 'আদায়ের ইতিহাস ' (১৯৪৭), 'খতিয়ান' (১৯৪৭), 'মাটির মাশুল' (১৯৪৮), 'ছোটবড়' (১৯৪৮), 'ছোট বকুলপুরের যাত্রী' (১৯৪৯), 'জীয়ন্ত' (১৯৫০), 'পেশা' (১৯৫১), 'স্বাধীনতার স্বাদ' (১৯৫১), 'সোনার চেয়ে দামী' (১৯৫১-৫২), 'ছন্দপতন' (১৯৫১), 'ইতিকথার পরের কথা' (১৯৫২), 'পাশাপাশি' (১৯৫২) ও 'সার্বজনীন' (১৯৫২)।

১৯৫২ সালের পর মানিক গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অর্থাভাব ও অতিরিক্ত পরিশ্রম তাঁর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করে। তাঁর লেখা ডায়েরির সাক্ষ্য অনুসারে ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তাঁকে লেখা অব্যাহত রাখতে হয়েছে অ্যালকোহলের উপর নির্ভর করে। এ সময় প্রকাশিত হয় : 'নাগপাশ' (১৯৫৩), 'আরোগ্য' (১৯৫২), 'চালচলন' (১৯৫৩), 'তেইশ বছর আগে পরে' (১৯৫৩), 'ফেরিওলা' (১৯৫৩), 'হরফ' (১৯৫৪), 'শুভাশুভ' (১৯৫৪), 'লাজুকলতা' (১৯৫৪), 'পরাধীন প্রেম' (১৯৫৫), 'হলুদ নদী সবুজ বন' (১৯৫৬), 'মাশুল' (১৯৫৬), 'প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান' (১৯৫৬)। শেষ পর্বের এসব উপন্যাসের শিল্প সার্থকতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একজন সাহিত্যিকের অবিরাম সৃজন প্রচেষ্টার দ্যোতক এসব রচনা। অবশ্য 'প্রাণেশ্বরের উপাখ্যান' মরণোত্তর প্রকাশিত উপন্যাস। মরণোত্তর আরো প্রকাশিত হয় 'মাটি-ঘেঁষা মানুষ' (১৯৫৭), 'শান্তিলতা' (১৯৬০) প্রভৃতি উপন্যাস। 'পেশা', 'স্বাধীনতার স্বাদ', 'সোনার চেয়ে দামী', 'ছন্দপতন', 'ইতিকথার পরের কথা', 'পাশাপাশি', 'সার্বজনীন', 'নাগপাশ', 'চালচলন', 'তেইশ বছর আগে পরে', 'শুভাশুভ' প্রভৃতি উপন্যাসে ও অজস্র ছোটগল্পে দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, দাঙ্গা, কৃষক-শ্রমিক-মজুর এবং কালোবাজারির বাস্তব চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। 'হলুদ নদী সবুজ বন' উপন্যাসে বাংলার কৃষক ও মজুর শ্রেণীর চিত্র পাওয়া যায়। এমনকি কলকারখানার শ্রমিকদের কৃষক সত্তার পরিচয় দিয়েছেন মানিক।

১৯৪৯ সালে পিতৃগৃহ বিক্রির পর ভাইদের সঙ্গে যৌথ পরিবারের আশ্রয় ছেড়ে বৃদ্ধ পিতাসহ ভাড়াবাড়িতে উঠার পর মানিকের জীবনে দারিদ্র্যের সূচনা হয়। মারাত্মক আর্থিক সঙ্কট, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার অন্ধকারে প্রবেশ করেন তিনি। নিজের রোগের প্রকোপ বৃদ্ধিতে এবং বিরূপ রাজনীতিক বিতর্কে নিজের সহযাত্রীর কাছ থেকে আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি আরো বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। তবে এখানে উল্লেখ্য যে, প্রথম জীবনে মানিক সাহিত্য সাধনায় খ্যাতি লাভের সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য ও দুঃসহ ব্যাধি অর্জন করেন। কিন্তু ১৯৩৮-৪৮ কালপর্বে পরিস্থিতি ১৯৪৯-এর পরবর্তী বছরগুলোর মত ছিল না। কলকাতায় ৪ ভাইয়ের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি বিক্রির একবছরের মাথায় ছয়জনের সংসারে নিজের পিতাকে ঠাঁই দেন তিনি। ১৯৫০ সালে পঞ্চম বারের মতো তাঁর গর্ভবতী স্ত্রী মৃত সন্তান প্রসব করেন। ১৯৫২ সালে আর্থিক সঙ্কট আরো মারাত্মক হয়ে ওঠে। সুদের বিনিময়ে স্ত্রীর অলঙ্কার বন্ধক রেখে ঋণ করেন তিনি। ১৯৫৩-৫৬ তিন বছরের জীবন ছিল দুর্বিষহ। নিজের অসুস্থতা, পুত্র-কন্যার অসুস্থতা, পাওনাদার ও দোকান মালিকদের খারাপ আচরণ এবং বাকি ভাড়ার জন্য বাড়িওয়ালার উকিল নোটিশ নিয়ে বিব্রত মানিককে অতিমাত্রায় পানাসক্ত করে তোলে। ১৯৫৫ সালে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিন মাস ছিলেন। হাসপাতাল ত্যাগের পর জ্যেষ্ঠ কন্যার ভাঙা পায়ের চিকিৎসা ও বাড়িওয়ালার মামলায় বিচলিত হতে হয়েছে তাঁকে। এ সম্পর্কে অরুণকুমার মুখোপাধ্যায় 'কালের প্রতিমা' গ্রন্থে লিখেছেন : ''উদয়াস্ত খাটুনি, অর্থাভাব, আরো খাটুনি, তা থেকে মুক্তির জন্য সুরাসক্তি, অসুস্থতা, আরো খাটুনি এই অন্ধ বৃত্তের মধ্যে পাক খেয়ে চলতে থাকে তাঁর জীবন। দারিদ্র্য থেকে মুক্তির জন্য অনবরত লেখা, উদ্বেগ থেকে মুক্তির জন্য সুরাসক্তি- এই অন্ধ চক্রাবর্তনকে মানিক খুব দ্রুত আপন করে নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত যকৃতের রোগ, রক্ত আমাশয় ও মৃগীরোগ একসঙ্গে আক্রমণ করে এই প্রতিভাবান লেখককে ভূপাতিত করল।'' ৩১ জুলাই ডায়েরিতে তাঁকে লেখতে দেখা যাচ্ছে : ''কদিন থেকে শরীর খুব খারাপ... কী যে দুর্বল বলা যায় না... বিছানা থেকে উঠবারও যে শক্তি নেই... এদিকে ঘরে পয়সা নেই... জোর করে তো বেরোলাম ফিরব কিনা না জেনে।'' এই বাস্তবতা মানিকের নিজের সৃষ্টি অনেক চরিত্রের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়।

মানিক পদ্মার তীরবর্তী জেলেপাড়ার পটভূমিতে রচনা করেন পদ্মানদীর মাঝি উপন্যাসটি। তাঁর অমর শিল্পকীর্তি 'পদ্মানদীর মাঝি' অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ইংরেজি ছাড়াও বহু বিদেশি ভাষায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনাসমূহ অনূদিত হয়েছে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে তিনি মৃগী রোগে আক্রান্ত ছিলেন যা পরবর্তী কালে জটিল অবস্থায় গমন করে। জীবনের শেষদিকে তীব্র আর্থিক কষ্টে ভুগেছেন তিনি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৩রা ডিসেম্বর, মাত্র আটচল্লিশ বছর বয়সে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে।

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত