ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ৯

প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৮, ১১:২৯

সাহস ডেস্ক

সারাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের দেশের আট জেলায় আরও অন্তত ৯ জন গুলিতে নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল।

এর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে পুলিশের গুলিতে নেত্রকোণায় দুইজন এবং সাতক্ষীরা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, কুমিল্লা ও শেরপুরে একজন করে মোট ৮জন নিহত হয়েছেন। আর রাজধানী ঢাকায় একজন নিহত হয়েছেন র‌্যাবের গুলিতে। বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দিবাগত রাতে এসব ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

আজসহ ছয়দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে অর্ধ শতাধিক মানুষ সন্দেহভাজন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলো।

ঢাকা
রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিজি প্রেস হাইস্কুল মাঠ এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামরুল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত কামরুল মহাখালীর দক্ষিণ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে রাত পৌনে ২টায় চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।  তিনি আরো জানান, নিহত কামরুল মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন।

নেত্রকোনা
চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে নেত্রকোনা সদরের মদনপুর ইউনিয়নের মনাং বাজার বাগান এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন খান বলেন, মদনপুর ইউনিয়নের মনাং বাজার বাগান এলাকায় মাদক কেনাবেচা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে মাদক ব্যবসায়ীরা। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি পাইপগান ও ৭০৫ গ্রাম হেরোইন, তিন হাজার পাঁচ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ
শহরের পুরোহিতপাড়া রেল কলোনি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে রাজন নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে ৪০০টি ইয়াবা, তিনটি গুলির খোসা, দুটি ধারাল অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. আশিকুর রহমান এবং কনস্টেবল কাওছার গুরুতর আহত হন। 

ওসি মো. আশিকুর রহমান জানান, নিহত রাজন ময়মনসিংহের শীর্ষ মাদক সম্রাট। তার বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ কোতুয়ালী মডেল থানায় মাদকসহ ৯টি মামলা রয়েছে।

কক্সবাজার
মহেশখালীতে সন্দেহভাজন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে মোস্তাক আহামদ (৩৭) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। রাত ১০টার দিকে বড়মহেশখালী ইউনিয়নের দেবেঙ্গাপাড়া পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোস্তাক আহামদ মুন্সিরডেইল গ্রামের বাসিন্দা।

মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, দেবেঙ্গাপাড়া পাহাড়ি এলাকায় ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের গোলাগুলির খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা গুলি ছুড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি ছুড়ে। পুলিশের সঙ্গে আধা ঘণ্টা গোলাগুলির একপর্যায়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ইয়াবা ব্যবসায়ী মোস্তাকের লাশ উদ্ধার করা হয়। এসময় এক হাজার ইয়াবা, চারটি দেশীয় তৈরি বন্দুক, সাতটি গুলি ও ৩০টি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। নিহত মোস্তাক ইয়াবা ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় তিনটিসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। মোস্তাকের মৃতদেহ উদ্ধার করে মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে।

এর আগে ভোরে কক্সবাজার শহরের কলাতলী থেকে ইয়াবা ও অস্ত্রসহ গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ হাসান নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ঝিনাইদহ 
জেলার কালীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। তার নাম জাহাঙ্গীর আলম ওরফে শামিম (৪৫)। পুলিশ দাবি করেছে, নিহত ব্যক্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, উপজেলা সদরের আড়পাড়ায় বিদ্যুৎ অফিসের একটি পরিত্যক্ত ভবনে মাদক ব্যবসায়ীরা অবস্থান করছে, এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান পরিচালানা করা হয়। সেসময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে শামীম গুলিবিদ্ধ হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়। গুরুতর অবস্থায় তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। শামীমের বিরুদ্ধে অন্তত ৯টি মাদক মামলা বিচারাধীন বলে জানান ওসি। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, ৩টি গুলি, ৫০০ ইয়াবা এবং ১৭ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা জানায় পুলিশ।

কুমিল্লা
বুড়িচংয়ে ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে কামাল নামের এক সন্দেহভাজন মাদকব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোজ কুমার দে জানান, গতকাল রাত ১২টায় গোয়েন্দা পুলিশ ও থানা পুলিশের একটি দল বুড়িচং উপজেলার মহিষমাড়ায় এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। সেখানে মাদক পাচার হচ্ছিল। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে মাদক ব্যবসায়ী কামাল গুরুতর আহত।  গ্রেপ্তার হয় তার দুই সহযোগী হানিফ ও ইলিয়াস। গুরুতর আহত কামালকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।

নিহত কামাল আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় আহত হন গোয়েন্দা পুলিশের তিন সদস্য। তারা হলেন হলেন এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার, এসআই সাহাবুল ইসলাম ও কনস্টেবল মো. সুমন মিয়া।  

শেরপুর 
জেলা সদরের সাতপাকিয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে একজন নিহত হয়েছেন। তার নাম  আজাদ। তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

এ সময় উপপরিদর্শক (এসআই)আবদুল ওয়াদুদ এবং অন্য দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নিহত আজাদের মৃতদেহের পাশ থেকে একটি পাইপগান এবং কয়েক বোতল ফেনসিডিল এবং কিছু ইয়াবা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন শেরপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম।

আমিনুল ইসলাম আরো জানান, নিহত আজাদ ওরফে কালু ডাকাত শেরপুর-জামালপুর সড়কে সংঘটিত ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ ডাকাতির বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। পুলিশ আজাদের লাশ উদ্ধার করে শেরপুর সদর থানায় নিয়ে এসেছে।

সাতক্ষীরা
রাতে সাতক্ষীরায় কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি গ্রামে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। 

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ জানান, এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়।

সাহস২৪.কম/মশিউর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত