নাইজেরিয়ায় তিন শতাধিক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৬:৫৯
![](https://www.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2021/02/27/image-68673.jpg)
নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের একটি স্কুল থেকে তিন শতাধিক স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করেছে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকধারীরা। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এটি কোন স্কুল থেকে গণ অপহরণের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে নাইজেরিয়ার জামফারা রাজ্যের জাঙ্গেবে শহরের ওই বোর্ডিং স্কুল থেকে মেয়েদের অপহরণ করা হয়।
তবে বন্দুকধারীরা তাদের একটি বনে নিয়ে গিয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এই ঘটনাটি কোন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। জানা গেছে, সশস্ত্র দলগুলো প্রায়ই মুক্তিপণের জন্য স্কুলছাত্রীদের আটক করে।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি এই অপহরণের ঘটনাকে "অমানবিক এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য" বলে নিন্দা জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন, ডাকাতরা বিপুল পরিমাণ মুক্তিপণের আশায় নিরীহ স্কুল শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে আমাদের ব্ল্যাকমেইল করতে চাইছে। তাদের বলতে চাই এই প্রশাসনকে ব্ল্যাকমেইল করে দমিয়ে রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য জিম্মিদের জীবিত অবস্থায়, কোন ক্ষতি হতে না দিয়ে, নিরাপদে উদ্ধার করা।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, কর্তৃপক্ষ ওই দস্যুদের বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী মোতায়েন করতে পারলেও আশঙ্কা আছে যে তারা স্কুল ছাত্রীদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারে।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি
এর আগে গত সপ্তাহে প্রতিবেশী নাইজার রাজ্যের কাগারা থেকে ২৭ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪২ জন অপহৃত হন। যাদের আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা যায়নি।
২০১৪ সালে ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর চিবক থেকে ২৭৬ জন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে। যে ঘটনা সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছিল।
যে ভাবে অপহরণ করা হলো-
শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। একদল বন্দুকধারী পিক-আপ ও বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে জাঙ্গেবে শহরের সরকারী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, ছাত্রীদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। স্কুলটির একজন শিক্ষক সংবাদমাধ্যম 'পাঞ্চ'কে এ তথ্য জানান।
বোর্ডিং স্কুল থেকে ছাত্রী অপহরণ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দুকধারীদের মধ্যে কয়েকজন সরকারী সুরক্ষা বাহিনীর পোশাক পরে ছিল এবং তারা স্কুল ছাত্রীদের জোর করে গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যায়।
তবে অন্য প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন যে সশস্ত্র বাহিনী কোন গাড়ি করে নয়, বরং পায়ে হেঁটে স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরো জানিয়েছেন যে শতাধিক বন্দুকধারী এই স্কুলে প্রবেশ করেছিল।
"তারা স্কুলের গেটটি ভেঙে নিরাপত্তাকর্মীর ওপর গুলি চালায়। তারপরে তারা হোস্টেলে প্রবেশ করে এবং নামাজের সময় হয়েছে বলে মেয়েদের জাগিয়ে তোলে। সব মেয়েদের জড়ো করার পরে অস্ত্রধারীরা তাদেরকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়। এ সময় মেয়েগুলো ভীষণ কাঁদছিল। জঙ্গলের দিকে যাওয়ার সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ছিল অস্ত্রধারীরা," জানান ওই প্রত্যক্ষদর্শী।
নাইজেরিয়ায় এই অপহরণের ঘটনায় নারী শিক্ষা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্কুলটির এক শিক্ষক জানান, এই সময়ে বিদ্যালয়ের ৪২১ জন শিক্ষার্থী ছিলেন। তারমধ্যে কেবল ৫৫ জনের খোঁজ মিলেছে।
পুলিশ বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, ওই মেয়েদের খুঁজে বের করতে পুলিশের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর একটি দল জাঙ্গেবেতে মোতায়েন করা হয়েছে।
সন্তানদের ফিরে পাওয়ার দাবিতে পরিবার
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ বলেছে, নাইজেরিয়ায় আবারও ছাত্রীদের গণ অপহরণের ঘটনায় তারা একইসাথে ক্ষুব্ধ ও শোকগ্রস্ত। এই ঘটনাকে তারা “পাশবিক” এবং “শিশু অধিকার লঙ্ঘন” বলে আখ্যা দিয়েছে।
তবে কোন দল বা গোষ্ঠী এখন পর্যন্ত এই অপহরণের দায় স্বীকার করেনি।
সূত্র: বিবিসি