২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস
প্রকাশ : ৩০ জুন ২০২০, ১৪:৫৬
![](https://www.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2020/06/30/image-63244.jpg)
জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে অর্থ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণের কর্তৃত্ব প্রদানের জন্য আনীত বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠভোটে তা পাস হয়। এরপর সংসদে উপস্থিত সবাই টেবিল চাপড়ে অর্থমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের অধিবেশনে এ বিল পাস হয়। বুধবার (১ জুলাই) থেকে নতুন বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হবে।
সংসদের অধিবেশন শুরু হলে ২০২০-২১ সালের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আনা ছাঁটাই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর একে একে অন্য মন্ত্রীরা তাদের স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কণ্ঠভোটে সে সব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। সর্বশেষ নির্দিষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে বাজেট পাস হয়। এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংসদে সরকারি বিরোধীদলীয় সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। প্রস্তাবিত বাজটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশের সমান। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বেশি। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের সহায়তা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় দুইলাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৮ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই ধরা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয় বা সরকারী কর্মচারীদের বেতন ভাতায়। যার পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধেও ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বর্হিভুত প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে যাবে ২ হাজার ৬শ ৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য উন্নয়নখাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬ শ ২৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, এবারের বাজেটে নির্দিষ্ট কিছু শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ আরও শিথিল করে গতকাল সোমবার (২৯ জুন) অর্থবিল ২০২০ অনুমোদন করেছে জাতীয় সংসদ। আগামী অথর্বছরের বাজেট প্রস্তাবে বিনিয়োগের টাকা তিন বছর বাজারে ধরে রাখার (লক-ইন) শর্ত দেওয়া হয়েছিল। দুই বছর কমিয়ে এখন শুধু এক বছর করা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে কোনও জরিমানা ছাড়া শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতির মূলধারায় অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর স্বার্থের কথা বলে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন।
সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্যান্য সিকিউরিটিজের ক্ষেত্রেও একই সুযোগ রাখা হয়। বলা হয়, অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ এসব খাতে বিনিয়োগ করলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বা সরকারের অন্য কোনো দপ্তর টাকার উৎস জানতে চাইবে না।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু শর্ত ছিল তিন বছর ধরে রাখার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বালাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) লক-ইনের শর্ত পুরোপুরি তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল।