‘আমাদের এগিয়ে যাওয়া থমকে যাবে যদি পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি’
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০১৯, ০০:৩২
![](https://www.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2019/04/29/image-50640.jpg)
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বললেন, ‘আমাদের দেশের অর্থনীতি অত্যন্ত চাঙ্গা ও শক্তিশালী। বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফ আমাদের অর্থনীতি দেখে উচ্ছ্বসিত। তারা অন্যান্য দেশকে বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে বলেছে। আমাদের এ এগিয়ে যাওয়া থমকে যাবে যদি পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি।’
২৮ এপ্রিল (রবিবার) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে ব্যাংকিং খাতের সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে এবং সম্ভাব্য সমাধানও নির্ধারণ করা হয়েছে, এর ফলে কোনো কমিশন লাগবে না। কারণ পুঁজিবাজার এখন নিয়ন্ত্রণে নেই বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘পুঁজিবাজারটি এখন নিয়ন্ত্রণে নেই। তবে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই, সেটাও বলবো না। পুঁজিবাজারের যেসব সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করেছি। একে একে সবগুলো সমস্যার সমাধান দেব। সরকার সামস্টিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে যেমন যত্নশীল, ঠিক তেমনিভাবে পুঁজিবাজার নিয়েও ততটাই যত্নশীল।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্তদের নিয়ে আমি এক-দুই দফা মিটিং করেছি। আরও মিটিং করব। মিটিং করে আর ১০টি দেশে পুঁজিবাজার যেভাবে চলে আমরাও সেভাবে চালানোর চেষ্টা করব। এ ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় বিচ্যুতি আছে তা অবশ্যই দূর করা হবে। যেহেতু পুঁজিবাজার আর অর্থনীতি একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কাজেই সঙ্গত কারণেই পুঁজিবাজারের জন্য আগামী বাজেটে প্রণোদনা থাকবে। তবে কতটা থাকবে তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালীভাবে চালানোর জন্য যা কিছু উপজীব্য, সেটাই করা হবে।’
অপর সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আর্থিকখাত সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ১৯৯০ সালের জানুয়ারি হতে একটি বাজার ভিত্তিক সুদহার নীতিমালার প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে অর্থনীতিকে উদারীকরণের লক্ষ্যে কৃষিখাত ব্যতিত অন্যান্য খাত হতে সুদহার সর্বোচ্চ সীমা প্রত্যাহার করা হয়। শিল্পখাতসহ বিভিন্ন খাতের ঋণের সুদহার সহনীয় পর্যায়ে রাখার নিমিত্তে উচ্চতর ঝুঁকিবাহী ভোক্তাগণ ও ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্যান্যখাতে ঋণের সুদের হার এবং আমানত সংগ্রহের গড় সুদের হার ৪ পার্সেন্টের মধ্যে সীমিত রাখার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনশীল সুদহার, বিশেষ ঋণের সুদহার বছরে একবারের বেশি বৃদ্ধি না করার নির্দেশনা রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংক ঋণ সুদহার ১ জুলাই ২০১৮ থেকে এক অঙ্কের নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বিগত ২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিবি কর্তৃক ইতোপূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত ৯ আগস্ট ২০১৮ তারিখের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ঐক্যমত পোষণ করা হয়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে অধিকাংশ ব্যাংক তিন মাস মেয়াদী আমানতের সুদহার ৬ পার্সেন্ট এবং এক-তৃতীয়াংশ ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে মেয়াদী ঋণ খাতে সুদের হার ৯ পার্সেন্ট নামিয়ে এনেছে। এছাড়া অনেক ব্যাংকে ঋণের সুদের হার হ্রাস করণের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। ব্যাংক সমূহ যাতে তাদের অঙ্গীকার মোতাবেক সুদের হার হ্রাস করে সে বিষয়ে নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে।’
একই সংসদ সদস্যের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সুদহার এ মুহূর্তে আমাদের সবারই একটা দুঃশ্চিন্তার জায়গা। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমরা সুদহার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসবো। এখন যে ১২/১৪ পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট রেট দিয়ে আপনারা ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিচ্ছেন সেই ঋণ আর নিতে হবে না। এ বছরই এর সুফল পাবেন বলে আশা করছি।’
সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লুৎফুনন্নেসা খানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাংকিং কমিশন করার বিষয়ে আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী মহোদয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এই সংসদে বলেছিলেন। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আমরা অতীতে অনেক কমিটি করেছি। অনেক কমিটি করেও আমরা কোনো দিনও কোনো কিছুর সুরাহা করতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে আমরা যে কাজটি করতে শুরু করেছি, আমার বিশ্বাস, সমস্যাগুলো আমরা আইডেন্টিফাইড করতে পেরেছি।’
সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ভালো ঋণ গ্রহীতা এবং খারাপ ঋণ গ্রহীতা এক নয়। অনেকে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ব্যবসায়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে যায় অথবা ঋণ শোধ দিতে পারে না। আবার কেউ কেউ আছে যারা নিচ্ছেনই ঋণটা শোধ না করার জন্য। আমরা এরই মধ্যে কয়েকটি ফার্মকে দায়িত্ব দিয়েছি, শুধু এটা খুঁজে বের করার জন্য। যারা ভালো তারা উৎসাহিত হবে আর যারা খারাপ তারা আমাদের কাছে সহায়ক কোনো অবস্থান পাবে না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে অবশ্যই আমাদের ব্যবস্থার প্রয়োজন। আমাদের দেশে ঋণ নিলে প্রথমেই সুদের টাকা কাটে। প্রিন্সিপাল অব মানি এটা সারা জীবন থেকেই যায়। এই জিনিসগুলো আমরা কিন্তু হাত দেব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ব্যাংকিং খাতে কোনো প্রকার সংস্কার আনা হয়নি। আমরা প্রথমবারের মতো উই আর কমিটেড এ বেসিক ফর্ম অব রিফর্মস ইন দ্য ব্যাংকিং সেক্টর।’