জনগণের হৃদয় জয় করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৯, ১৭:৪৯

সাহস ডেস্ক

জনকল্যাণে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একবার ভোটে জিতে যাচ্ছেন। এবারই শেষ না। জনগণের হৃদয় জয় করতে হবে। যেন জনগণ ভবিষ্যতেও আপনাদের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস রাখে। সেদিকে আপনারা বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন সেটাই আমরা চাই।

সোমবার (২৭ মে) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নবগঠিত ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের (মসিক) নির্বাচিত মেয়র ইকরামুল হক টিটু ও কামউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারি অর্থের সঠিক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিপুল পরিমাণ যে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সেটা জনগণেরই অর্থ। সেটা যেন জনগণের কাছে পৌঁছায়। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমরা যে সমস্ত কর্মসূচি নিয়েছি সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় আপনারা সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবেন। কারন আপনারা জনগণের প্রতিনিধি।

শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের ওপর বিরাট দায়িত্ব। এটা মনে রাখতে হবে যে জনপ্রতিনিধি হওয়া মানে জনগণের জন্য… শুধু যারা আপনাকে ভোট দিয়ে শুধু তারা না। আপনি যখন জনপ্রতিনিধি তখন আপনি এলাকার সব মানুষেরই প্রতিনিধি। হ্যাঁ, আমি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। আমি আওয়ামী লীগ করি। কিন্তু আমি যখন প্রধানমন্ত্রী তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দলমত নির্বিশেষে সবার কল্যাণ করাই আমার দায়িত্ব। আপনারাও নিজেকে সেইভাবে মনে করবেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা  বলেন, পঁচাত্তরের পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে, বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবক, জনগণের কল্যাণে কাজ করে।

বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়কার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ বাংলাদেশে আরেক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা; এই ময়মনসিংহেই তো সিনেমা হলে বোমা হামলা হয়ে কত মানুষ মারা গেল। আমাদের নেতা-কর্মীদের কত অত্যাচার করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে। জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে, দুর্নীতে চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে, আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত হয়। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে যে বাংলাদেশ ঘাতকের দেশে পরিণত হয়েছিল সেই বাংলাদেশে আবার যখন জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের দেশ, মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের উন্নয়নের গতিধারা আমরা অব্যাহত রেখেছি। 

দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ ভাগের উপরে উন্নীত হয়েছে, মাথা পিছু আয় বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার ৪১ ভাগ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে এনেছি। ইনশাল্লাহ, আমরা ভবিষ্যতে আরও কমাতে পারবো। 

তিনি বলেন, ২০২১ এর মধ্যে বাংলাদেশ যেন আরও উন্নত হয়, দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে এনে বাংলাদেশে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ যেন উন্নত সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠে আমরা সে পরিকল্পনা নিয়েছি। 

এবার সরকার পাঁচ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের টাকা আমাদের দেশের মানুষের টাকা, মানুষের অর্থ। প্রায় দুই লাখ টাকার উন্নয়ন বাজেট করছি। উন্নয়ন বাজেটের ৯০ ভাগ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করি। কারো কাছে হাত পেতে, ভিক্ষা করে বাংলাদেশ চলবে না।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ব্যাপক বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়নের কাজ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। কাজেই আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় সে উন্নয়নের কাজটা যেন যথাযথভাবে হয় এবং সে কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ যেন খুশি হয় সেদিকেই আপনাদের কিন্তু দৃষ্টি দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, কোনও মানুষ ভূমিহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে। 

অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত মেয়র ইকরামুল হক টিটুকে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ১১ নারীসহ ৪৪ জন কাউন্সিলরকে শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

গেল বছরের অক্টোবরে ১২তম সিটি করপোরেশন হিসেবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। নতুন এই সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন হয় গত ৫ মে। 

শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত