প্রতিরোধের মার্চ
১৯৭১ এর উত্তাল ১১ মার্চ
প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০১৮, ১৩:২০
![](https://www.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2018/03/11/image-33445.jpg)
১১ মার্চ সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সকল সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাড়ির শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ানো হয়। সকল দোকানপাট, অফিস-আদালত, কোর্টকাচারি ও কলকারখানা বন্ধ রাখা হয়। সিনেমা হলগুলোতে বাংলাদেশের নতুন পতাকা প্রদর্শন এবং ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো অব্যাহত থাকে।
২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান পাকিস্তান সরকার বাতিল ঘোষণা করে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে ৩২ হাজার টন ‘ভিনটেজ হরাইজন’ নামক একটি মার্কিন খাদ্যবোঝাই(গম) জাহাজ গতি ঘুরিয়ে পাকিস্তানের করাচি প্রেরণের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠা ও নিন্দা প্রকাশ করে।
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন অনেকেই এবং বাড়তে থাকে শহীদদের তালিকা। একেকটি মৃত্যু বাঙালির রক্তে প্রতিশোধের ইচ্ছা আরো বেড়ে যায় এবং একটি নিশ্চিত স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এদিকে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে পথসভা ও খন্ড মিছিল বের হয় এবং স্বাধীন পূর্ববাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আরো দুর্বার করে গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে একটি লিফলেট বিতরণ করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ পালন করতে মওলানা ভাষানীও আহ্বান জানান। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাষানী টাঙ্গাইলের এক জনসভায় মুজিবকে বাঙালির নেতা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি জনতাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন-“ সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ পালন করুন।”
পাকিস্তানিরা গোপনে সামরিক শক্তি ও অস্ত্র গোলাবারুদ মজুদ করতে থাকে। সকল ষড়যন্ত্রের নায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য মায়াকান্না কেঁদে বঙ্গবন্ধুর কাছে একটি তারবার্তা পাঠান।
জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট বাংলাদেশে অবস্থানকারী জাতিসংঘের সকল কর্মচারীকে নিউইয়র্কে ফিরে আসার নির্দেশ দিলে বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হন এবং উথন্ট-এর কাছে প্রশ্ন তোলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের কী হবে?
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাহজাহান সিরাজ, আ স ম আবদুর রব ও আবদুল কুদ্দুস মাখন এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানি ব্যাংক কর্মকর্তাদের টাকা পাচার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন।
পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর হিসেবে টিক্কা খানের শপথ নেবার কথা থাকলেও বিচারপতি বি.এ.সিদ্দিকী শপথ বাক্য পাঠ করাননি তাই এ নিয়ে চট্টগ্রামে আনন্দ মিছিল বের হয়। এরকম একটি মিছিল দেওয়ানহাট হয়ে হালিশহরের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎ পথে বিহারীরা তলোয়ার আর গুলি নিয়ে মিছিলরত নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের আক্রমন করে। পনেরো-বিশজন বাঙারি নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহত হবার খবর আসে। পরে কিছু বাঙালি যুবক টাইগার-পাসে দুজন বিহারীকে গুলি করে। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় পাকিস্তান আর্মি সারা শহরে টহল দেয়। থমথমে হয়ে যায় পুরো শহর। আর্মির গাড়িতে বিহারী জল্লাদরাও ছিল। আগ্রাবাদ মোড় হতে পাঁচ-ছয়জন বাঙালি যুবককে তুলে নেয়ার খবর পাওয়া যায় এবং এদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জননেতা তাজউদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষার আহবান জানান। অসহযোগ আন্দোলনের নেতা-কর্মী সমর্থকদের তিনি অভিনন্দন জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বিশ্ববাসীর সমর্থন চান। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা দুটি বিবৃতিতে বলেন- ১০ মার্চ ভোরে চট্টগ্রাম বন্দরে ‘এম.এন সোয়াত’ নামে একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ থেকে শ্রমিকরা জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাস করতে অস্বীকার করায় সামরিক বাহিনীর সদস্যরাই তা খালাস করেন এবং এর মধ্যে একজন বাঙালি সেনা অফিসারও ছিলেন। জানা যায় আরো পাঁচটি অস্ত্র ও সৈন্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা হবে। সামনে কী ভয়াবহতা অপেক্ষা করছে- স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার মুসলমান আমরা সবাই বাঙালি- ঠিকই তা স্পষ্ট বুঝতে পারছি।