কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:০৭
![](https://www.sahos24.com/templates/sahos-v2/images/sahosh.png)
![](/assets/news_photos/2017/10/03/image-27554.jpg)
ব্রাহ্ম সংস্কারক ব্রজকিশোর বসুর কন্যা কাদম্বিনীর জন্ম হয় ১৮ জুলাই ১৮৬১ তে বিহারের ভাগলপুরে। তাঁর মূল বাড়ি ছিল বর্তমান বাংলাদেশের বরিশালের চাঁদসিতে। তাঁর বাবা ভাগলপুর স্কুলের প্রধানশিক্ষক ছিলেন। ব্রজকিশোর বসু অভয়চরণ মল্লিকের সাথে ভাগলপুরে নারী অধিকারের আন্দোলন করেছিলেন। তাঁরা নারীদের সংগঠন ভাগলপুর মহিলা সমিতি স্থাপন করেছিলেন ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে। এই ঘটনা ছিল ভারতে প্রথম।
কাদম্বিনী তাঁর পড়াশোনা আরম্ভ করেন বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ে। এরপর বেথুন স্কুলে পড়ার সময়ে তিনি ১৯৭৮ সালে প্রথম নারী হিসাবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাস করেন। তাঁর দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে বেথুন কলেজ প্রথম এফএ (ফার্স্ট আর্টস) এবং তারপর অন্যান্য স্নাতক শ্রেণি আরম্ভ করে। কাদম্বিনী এবং চন্দ্রমুখী বসু বেথুন কলেজের প্রথম গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে। তাঁরা বিএ পাস করেছিলেন। তাঁরা ছিলেন ভারতে এবং সমগ্র ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রথম নারী গ্র্যাজুয়েট।
গ্র্যাজুয়েট হবার পর কাদম্বিনী দেবী সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি ডাক্তারি পড়বেন। ১৮৮৩ সালে মেডিকেল কলেজে ঢোকার পরেই তিনি তাঁর শিক্ষক দ্বারকানাথ গাঙ্গুলীকে বিয়ে করেন। দ্বারকানাথ ছিলেন একজন ৩৯ বছর বয়েসের বিপত্নীক। আর কাদম্বিনীর বয়স তখন ছিল মাত্র একুশ। কাদম্বিনী ফাইন্যাল পরীক্ষাব সমস্ত লিখিত বিষয়ে পাস করলেও প্র্যাকটিক্যালে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অকৃতকার্য হন। ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে তাঁকে জিবিএমসি (গ্র্যাজুয়েট অফ বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ) ডিগ্রি দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় নারী যিনি পাশ্চাত্য চিকিৎসারীতিতে চিকিৎসা করবার অনুমতি পান। মেডিক্যাল কলেজে পড়াকালীন তিনি সরকারের স্কলারশিপ পান যা ছিল মাসে ২০ টাকা।
তিনি পাঁচ বছর মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনা করার পর ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দে বিলেত যান। এক বছর পরে এল আর সি পি (এডিনবরা), এল আর সি এস (গ্লাসগো) এবং ডি এফ পি এস (ডাবলিন) উপাধি নিয়ে দেশে ফেরেন। বিলেত যাবার আগে ১৮৮৮ খ্রীষ্টাব্দে তিনি কিছুদিন লেডি ডাফরিন মহিলা হাসপাতালে মাসিক ৩০০ টাকা বেতনে কাজ করেছিলেন।
১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বে শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছয় জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাদম্বিনী ছিলেন তাঁদের অন্যতম একজন। পরের বছর তিনি কলকাতার কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম নারী বক্তা। কাদম্বিনী গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে কলকাতায় অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনের সদস্য ছিলেন।
১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই অধিবেশন মহাত্মা গান্ধীর সম্মানের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। কাদম্বিনী চা বাগানের শ্রমিকদের শোষনের বিষয়ে অবগত ছিলেন এবং তিনি তাঁর স্বামীর দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেন যিনি আসামের চা বাগানের শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পদ্ধতির নিন্দা করেছিলেন। কবি কামিনী রায়ের সাথে কাদম্বিনী দেবী ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে বিহার এবং ওড়িশার নারীশ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার দ্বারা নিযুক্ত হয়েছিলেন।
তিনি হিন্দু রক্ষনশীল সমাজের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন। ১৮৯১ খ্রীষ্টাব্দে রক্ষনশীল বাংলা পত্রিকা বঙ্গবাসী তাঁকে পরোক্ষ ভাবে বেশ্যা বলেছিল। কাদম্বিনী এর বিরুদ্ধে মামলা করে জেতেন। বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক মহেশ চন্দ্র পাল কে ১০০ টাকা ফাইন এবং ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়।
আট সন্তানের মা হওয়ার জন্য সংসারের জন্যও তাঁকে বেশ সময় দিতে হত। তিনি সূচিশিল্পেও নিপুনা ছিলেন। ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দের ৩ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়।