শক্তি চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৩৩

আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে অন্যতম প্রধান কবির নাম শক্তি চট্টপাধ্যায়। কবিতার ছন্দে, গন্ধে, ভাষা প্রয়োগে এবং অর্থে কেউ কেউ তাঁকে জীবনানন্দ দাশের শেষ উত্তরসূরী হিসেবও অভিহিত করে থাকেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৪ সালের ২৫ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের জয়নগর-মজিলপুরের দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্রের কারণে তিনি স্নাতক পাঠ অর্ধসমাপ্ত রেখেই প্রেসিডেন্সি কলেজ ছাড়েন, এবং সাহিত্য রচনা করে জীবিকা করার উদ্দেশ্যে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেন।

প্রথম উপন্যাস লেখেন কুয়োতলা। কিন্তু কলেজ জীবনের বন্ধু সমীর রায়চৌধুরীর সাথে তাঁর বনাঞ্চল-কুটির চাইবাসায় আড়াই বছর থাকার সময়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায় একজন সফল লিরিকাল কবিতে পরিণত হন। একই দিনে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখে ফেলার অভ্যাস গড়ে ফেলেন তিনি । নিজের কবিতাকে তিনি বলতেন পদ্য ।

১৯৬১ সালের নভেম্বরে ইশতাহার প্রকাশের মাধ্যমে যে ৪জন কবিকে হাংরি আন্দোলনের জনক মনে করা হয় তাঁদের মধ্যে শক্তি চট্টোপাধ্যায় অন্যতম। অন্য তিনজন হলেন সমীর রায়চৌধুরী, দেবী রায় এবং মলয় রায়চৌধুরী। শেষোক্ত ৩জনের সাথে সাহিত্যিক মতান্তরের জন্য ১৯৬৩ সালে তিনি হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করে কৃত্তিবাস গোষ্ঠীতে যোগ দেন। তিনি প্রায় ৫০টি হাংরি বুলেটিন প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে কৃত্তিবাসের কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও শক্তি চট্টোপাধধ্যায়ের নাম সাহিত্যিক মহলে একত্রে উচ্চারিত হতো, যদিও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হাংরি আন্দোলনের ঘোর বিরোধী ছিলেন এবং কৃত্তিবাস পত্রিকায় ১৯৬৬ সালে সেই মনোভাব প্রকাশ করে সম্পাদকীয় লিখেছিলেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কারে পেয়েছেন।

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের রচিত কাব্যগ্রন্থঃ
# এ প্রেম হে নৈঃশব্দ্য (১৯৬২)
# ধর্মে আছো জিরাফেও আছো (১৯৬৭)
# সোণার মাছি খুন করেছি (১৯৬৮)
# অন্ধকার নক্ষত্রবীথি তুমি অন্ধকার (১৯৬৮)
# হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান (১৯৬৯)
# চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৯৭০) 
# পাড়ের কাঁথা মাটির বাড়ি (১৯৭১)
# প্রভু নষ্ট হয়ে যাই (১৯৭২)
# সুখে আছি (১৯৭৪)
# ঈশ্বর থাকেন জলে (১৯৭৫)
# অস্ত্রের গৌরবহীন একা (১৯৭৫)
# জ্বলন্ত রুমাল (১৯৭৫)
# ছিন্নবিচ্ছিন্ন (১৯৭৫)
# সুন্দর এখানে একা নয় (১৯৭৬) 
# কবিতায় তুলো ওড়ে (১৯৭৬) 
# ভাত নেই পাথর রয়েছে (১৯৭৯)
# আঙ্গুরী তোর হিরণ্য জল (১৯৮০)
# প্রচ্ছন্ন স্বদেশ (১৯৮১)
# যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮৩)
# কক্সবাজারে সন্ধ্যা (১৯৮৫)
# ও চির - প্রণম্য অগ্নি (১৯৮৫)
# মিষ্টি কথায়, বিষ্টিতে নয় (১৯৮৫)
# সন্ধ্যার সে শান্ত উপহার (১৯৮৬)
# এই তো মর্মর মুর্তি (১৯৮৭)
# বিষের মধ্যে সমস্ত শোক (১৯৮৮)
# আমাকে জাগাও (১৯৮৯)
# ছবি আঁকে ছিঁড়ে ফ্যালে (১৯৯১)
# জঙ্গলে বিষাদ আছে (১৯৯৪)
# বড়োর ছড়া (১৯৯৪)
# সেরা ছড়া (১৯৯৪)
# টরে টক্কা (১৯৯৬)
# কিছু মায়া রয়ে গেল (১৯৯৭) 
# সকলে প্রত্যেকে একা (১৯৯৯)
# পদ্যসমগ্র - ১ম থেকে ৭ম খণ্ড
তবে তার সবচেয়ে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম, 'যেতে পারি কিন্তু কেন যাবো (১৯৮৩)'।

১৯৯৫ সালের ২৩ মার্চ দৈহিকভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন তাঁর পাঠকদের, তাঁর ভক্তদের হৃদয়ে।
সাহসের পাঠকদের জন্য তাঁর লেখা একটি কবিতা (তাঁর ভাষায় পদ্য) দেওয়া হল,

ছেলেটা
ছেলেটা খুব ভুল করেছে শক্ত পাথর ভেঙে
মানুষ ছিল নরম, কেটে, ছড়িয়ে দিলে পারতো।
অন্ধ ছেলে, বন্ধ ছেলে, জীবন আছে জানলায়!
পাথর কেটে পথ বানানো, তাই হয়েছে ব্যর্থ।
মাথায় ক্যারা, ওদের ফেরা ... যতোই থাক রপ্ত
নিজের গলা দুহাতে টিপে বরণ করা মৃত্যু ...

ছেলেটা খুব ভুল করেছে শক্ত পাথর ভেঙে
মানুষ ছিল নরম, কেটে, ছড়িয়ে দিলে পারতো।
পথের হদিশ পথই জানে, মনের কথা মত্ত ...
মানুষ বড়ো শস্তা, কেটে ছড়িয়ে দিলে পারতো!

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত