নির্বাচনী ইশতেহারেই অন্ধকারে রেখেছিলেন মেয়র সাদিক, চুপ ছিলো প্রশাসন

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২১, ২২:৪৪

সাহস ডেস্ক

নিজের নির্বাচনী ইশতেহারেই ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্। প্রচ্ছন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা এড়িয়ে যান নির্বাচনী ইশতেহারেই। ইলেকশন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন সাদিক আবদুল্লাহ্। যার আইনত কোনও বিধান নেই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা একেবারেই অপ্রাতিষ্ঠানিক এবং গণবিরোধী।

বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট; এই তিন সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপনকালে নির্বাচনী হলফনামায় ‘স্ব-শিক্ষিত’ লেখার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন সুজনের (সুশাসনের জন্য নাগরিক) নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছিলেন,  নির্বাচনী প্রার্থীরা ‘স্বশিক্ষিত’ বলে একটি শব্দ ব্যবহার করছেন। স্ব-শিক্ষার একটা অংশ সবার মধ্যেই আছে। আমাদের কিছু শিক্ষা হয় প্রতিষ্ঠানিকভাবে আর আমরা অপ্রতিষ্ঠানিকভাবেও শিক্ষিত হই। তা না-হলে আমাদের ব্যবহার, আচরণ কই থেকে আসে? আমরা সবাই স্বশিক্ষিত। কিন্তু নির্বাচনী হলফনামায় স্বশিক্ষিত লেখার কথা বলা হয়নি। এখানে আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার কথা বলা হয়েছে।

তখন বসিক মেয়র প্রার্থী আবদুল্লাহ্কে জেনে-বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজটি করছেন কি না তা প্রশ্ন তুলে এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রার্থীরা এতই স্বশিক্ষিত হয়ে গেছেন, জেনে-শুনে তারা সব আইন-কানুনকে ফাঁকি দিচ্ছেন। কিন্তু এটার কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

আরও বলেন, এই তিন সিটি নির্বাচনের কাউন্সিলর, মেয়রদের প্রায় ৫০ ভাগ স্কুল (এসএসসি) পাস করেননি। শিক্ষাই একমাত্র যোগ্যতা, তা আমি বলব না। কিন্তু আধুনিক নগর গড়ার জন্য যে মানুষ প্রয়োজন, তার শিক্ষাগত যোগ্যতাটাও থাকতে হবে। তা না-হলে প্রার্থীর পক্ষে অনেক কিছুই বোঝা সম্ভব হবে না। কিন্তু এই প্রশ্নগুলো মানুষের মধ্যে আসছে না।

নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন নগর পিতা হলফনামায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত যোগ্যতার জায়গায় নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করলে সেটা প্রচলিত আইনকে ফাঁকি দেওয়া; জনগণকে অন্ধকারে রাখা। এ জন্য তার প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে।

‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’-এ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের হলফনামার যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ আছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী যদি তার হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেন, তাহলে অসদাচরণের দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল করবে নির্বাচন কমিশন। অথচ ন্যূনতম ঝামেলাও পোহাতে হয়নি মেয়র আব্দুল্লাহ্কে। অনায়াসেই দাপুটে নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা গেছে সময়ে সময়ে। এমনকি নির্বাচনের দিন একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনীষা চক্রবর্তীসহ অন্যান্য প্রার্থী এবং তাদের সহকারীদের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর মত ঘটনা ঘটায় মেয়র সেরনিয়াবাত আব্দুল্লাহ্ গ্রুপের কর্মীরা। 

২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ভোট হতে যাওয়া বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাত জন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণে জানা যায়, শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থানে কাস্তে প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আবুল কালাম আজাদ বিএ (এলএলবি), হাত পাখা প্রতীকের ওবায়দুর রহমান দাওরা হাদিস, হরিণ প্রতীকের বশির আহমেদ ঝুনু এসএসসি, মই প্রতীকের মনীষা চক্রবর্তী এমবিবিএস, লাঙ্গল প্রতীকের মো. ইকবাল হোসেন বিএসসি, ধানের শীষ প্রতীকের মো. মজিবর রহমান সরওয়ার এলএলবি তথা প্রত্যেকেই স্ব স্ব শিক্ষাগত যোগ্যতা লিখলেও এড়িয়ে যান দাপুটে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্। এ বিষয়ে সচেতন মহল আলাপ তুললেও পাত্তা দেননি সংশ্লিষ্টরা। অনেকে মনে করেন দীর্ঘদিন ত্রাসের ক্ষমতা খাটিয়ে যাওয়া এ নেতার ভয়ে আলোচনায় আনেননি কেউ। আবার আলোচনায় তুললেও তিনি প্রশাসনের মদদে ভীতির ব্যবস্থাও করতে পারেন বলেও জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত