এবার গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেপ্তার তৃণমূলের নেতা অনুব্রত

প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২২, ১৭:৫৬

সাহস ডেস্ক:

দশবার সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে এবার গোয়েন্দাদের জালে তৃণমূলের বাহুবলী নেতা অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টা। গরুপাচার কাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে বুধবার (১০ আগস্ট) রাতেই বোলপুরে পৌঁছায় সিবিআইয়ের তদন্তকারীদল। আর বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সকাল হতে না হতেই সিআরপিএফ জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে অনুব্রতের বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই কর্মকর্তারা। জওয়ান দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতির বাড়ি।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ন’টার কিছুটা পর গ্রেপ্তার হন অনুব্রত। বোলপুরে পরপর গাড়ি এসে দাঁড়ায় নীল রঙা বাড়িটার সামনে। প্রাসাদসম বাড়ির চতুর্দিক ঘিরে রাখে বন্দুকধারী সিআরপিএফ জওয়ানরা। কমলা রঙা লোহার গেটের সামনে দাঁড়ান জনা চারেক সিআরপিএফ জওয়ান। গোটা চত্বরেই দু’হাত ছাড়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা।

গোটা দৃশ্যটা ভীষণভাবেই অপরিচিত ও অনাকাঙ্খিত ছিল বোলপুরবাসীর জন্য। যে নেতার ভয়ে এলাকায় বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, তার বাড়ির সামনেই এত জওয়ানের ভিড়। তবে কি আশঙ্কাই সত্যি হতে চলেছে? সাতসকালে বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা, পড়শি, মুদি-চা দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের চোখেমুখে তখন বিস্ময়ের ছাপ! এ দৃশ্য যেন তাদের কাছে অকল্পনীয়। অনুব্রতর বাড়িতে সিবিআই, ঘিরে ফেলা হয়েছে বাড়ি এসব খবর তখন উল্কাগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বীরভূম জুড়ে।

অনুব্রতর প্রাসাদসম বাড়ির সামনে তখন লাখো মানুষের ভিড়। অত্যুৎসাহী মানুষের জটলা আর সাংবাদিক দেখলেই নিজেদের আড়াল করার আপ্রাণ প্রয়াস। সকাল ১০টা বেজে কিছু মিনিট। সাংবাদিকদের নজর তখন অনুব্রতর বাড়ির প্রত্যেকটি গেটে। তার কিছুটা আগেই এক সিবিআই কর্মকর্তা গ্যারেজের গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকেছেন। হাঠৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ বা কারা বলে উঠলেন ‘জয় শ্রী রাম’, স্পষ্ট হলো- সেই ভিড়ের মধ্যে মিশে রয়েছেন বিরোধীরাও।

যে নেতাকে খুব কাছ থেকে দেখেন অনুগামীরা, আজ রাখির দিনে তার বাড়িতেই বিপর্যয়। বাহুবলীর এই পরিণতি যে তাদের দেখতে হবে, সেটা নিজেদেরও বিশ্বাস করাতে পারছেন না অনুগামীরা। ভিড়ে মিশে ছিলেন তারাও। তবে তারা ছিলেন নির্বাক, মুখে কুলুপ। কিছুটা হয়তো নিজেদের মাটি হারানোর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।
বেলা পৌনে বারোটা। অনুব্রত মণ্ডলকে বগলদবা করে গ্যারেজের গেট দিয়েই বের হলেন সিবিআই কর্মকর্তারা। সিআরপিএফ জওয়ানরা ঘিরে নিয়ে যান আসানসোল আদালতের দিকে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর এবার গ্রেফতার তৃণমূলের আরও এক প্রভাবশালী নেতা। বোলপুরের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে। পার্থর ক্ষেত্রে দল ক্রমশ দূরত্ব বাড়িয়েছে। মন্ত্রিত্ব, দলীয় পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রীকে। এবার অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর দলের তরফে কোনও অবস্থান জানানো না হলেও দলের একাধিক নেতা দাবি করলেন, অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে।

বৃহস্পতিবার সকালে অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, অন্যায় করলে গ্রেফতার হতেই হবে। এ ক্ষেত্রে দল কিছু বলবে না। ভালো, খারাপ সব কিছুই হতে পারে। যদি কেউ বলেন, অন্যায় করিনি, তাহলে তাকেই সেটা প্রমাণ করতে হবে।’

অন্যদিকে দলের আর এক নেতা তথা সংসদ সদস্য অর্জুন সিং স্পষ্ট জানান, কেউ অন্যায় করলে দল তার পাশে থাকবে না। দলের তরফে সেই বার্তা স্পষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। এ দিন অনুব্রতর গ্রেফতারের খবর শোনার পর বারাকপুরের সংসদ সদস্য বলেন, ‘যদি কেউ ভুল করে থাকে, তাহলে আইন আইনের পথেই চলবে। আমাদের দল স্পষ্ট বার্তা দিয়েই দিয়েছে, কেউ অন্যায় করে থাকলে, দল তার পাশে থাকবে না।’

এই বিষয়ে বিজেপি সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন অনুব্রত। প্রয়োজনে ভুবনেশ্বরেও নিয়ে যেতে হতে পারে। তিনি বলেন, ‘অনেক নাটক করেছেন। এ তো ধড়িবাজ লোক আমরা কমই দেখেছি। আজ এদের জন্য মানুষের রাজনীতি সম্পর্কে ধারনা বদলে গিয়েছে।’

অপরদিকে, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘ন্যয়বিচার মিললো। তবে অনেক দেরিতে। কয়েক বছর ধরে যা করে বেড়াচ্ছে, তাতে এটাই স্বাভাবিক পরিণতি।’

বীরভূমের হাটশেরান্দি গ্রামের ছেলে অনুব্রত মণ্ডল। সাধারণ পরিবার, আর্থিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিল না বলেই শোনা যায়। পরিচিতরা বলেন, তিনি নাকি টাকা ধার করে চলতেন। বর্তমানে সিবিআই সূত্রে তার যে সম্পত্তির হিসাব সামনে আনছে, তা শুনলে এ সব অলিক বলেই মনে হবে।

জানা গেছে, প্রথম জীবনে মাছ বিক্রি করতেন তিনি। তবে সে সব অতীত এখন। গ্রামের বাড়িতে যান পুজোর সময়। বর্তমানে তিনি থাকেন বোলপুরের নীচুপট্টিতে।

গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অনুব্রত মণ্ডলের দেওয়া চড়াম-চড়াম ঢাক বাজানোর দাওয়াই ঝড় তুলেছিল নির্বাচনি প্রচারে। এরপর তার গ্রেফতারে উচ্ছ্বসিত বিরোধী শিবির। সকালে অনুব্রতর গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিজেপি কর্মীরা হাতে গুড় বাতাসা ও নকুলদানা নিয়ে ঢাক সহযোগে মাঠে নামলেন।

সূত্রঃ এনডিটিভি

 

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত