তালেবান নৈরাজ্য: সংবাদ সংগ্রহে মারধরের শিকার সাংবাদিকরা

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৩:১১

সাহস ডেস্ক
ছবি: মারকাস ইয়াম, প্রতিনিধি, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী তালেবান দখলকৃত আফগানিস্তানে নারীদের বিক্ষোভের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে বেধরক মারধরের শিকার হয়েছেন দেশটির দেশি বিদেশি একাধিক সাংবাদিক। সূত্র বিজনেস ইনসাইডার।

আহত সাংবাদিকরা বিভিন্ন সূত্রে বলেছেন, 'বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিক্ষোভ কাভার করতে গিয়ে তাদের মারধর, আটক এবং বেত্রাঘাত করেছে তালেবানরা।'

গত মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় তালেবানরা। এরপরই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হতে থাকে তালেবানের হাতে সাংবাদিকদের মারধরের শিকার হওয়ার একাধিক চিত্র।

আফগানিস্তানে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার বৈদেশিক প্রতিনিধি মারকাস ইয়াম টুইটারে মারধরের শিকার দুজন সাংবাদিকের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি শেয়ার করেছেন।

আরেকটি ছবি ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছে একটি আফগান সংবাদমাধ্যম।

ইয়ামের পোস্ট করা ছবিতে ইটিলাট্রোজ পত্রিকার দুই সাংবাদিককে ক্ষতবিক্ষত ও ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়।

তাদের মধ্যে একজন তাকি দরিয়াবি বিবিসিকে বলেছিলেন, তাকে একটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যেখানে তাকে বৈদ্যুতিক শক, চাবুক, লাথি মেরে বেদম মারধর করা হয়েছিল।

এরপর বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিবিসির দলকেও চিত্রগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

আফগানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের পোস্ট করা ছবিতে মারধরের শিকার একই ব্যক্তিদের দেখা যায়। ছবিতে ওই একই সাংবাদিকের আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়।

বিবিসি সূত্রে জানা যায়, যাদের ছবি পোস্ট করা হয়েছে তারা হলেন, মি. দরিয়াবি, ইটিলাট্রোজ ফটোগ্রাফার নেমাতুল্লাহ নাকদী। তারা দুজনেই একসাথে গত বুধবার কাবুলে নারীদের একটি বিক্ষোভের সংবাদ কাভার করছিলেন। তাদের একজন ভিডিও এডিটর ও আরেকজন রিপোর্টার। সেখান থেকে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় তালেবান বাহিনী। পরে তাদের একটি কক্ষে নিয়ে বেদম মারধর করা হয়। কয়েক ঘন্টা পরে, তালেবানরা তাদের কোনও রকম শর্ত ছাড়াই ছেড়ে দেয়।

নাকদি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘একজন তালেবান আমার মাথায় তার পা রাখেন। তারপর কংক্রিটের সঙ্গে আমার মুখমণ্ডল পিষে দেন। তারা আমার মাথায় লাথি মারেন। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবেন।’

বিবিসি সূত্রে মি. দরিয়াবি বলেন, মারধরের পর তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। এবং প্রায় দুই ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, 'আমি খুব কমই হাঁটতে পারতাম কিন্তু তারা আমাদের দ্রুত হাঁটতে বলছিল। আমি খুব খারাপ যন্ত্রণায় ছিলাম।'

নেমাতুল্লাহ নাকদী বলেন, 'বিক্ষোভের ছবি তোলা শুরু করার সাথে সাথেই আমার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল তালেবান যোদ্ধারা।'

এএফপি নিউজ এজেন্সিকে নাকদী বলেন, 'একজন তালেবান আমার মাথায় পা চেপে ধরেছিলো। আমার মুখ পিষে দিয়েছে কংক্রিটের সাথে। তারা আমার মাথায় লাথি মেরেছে [...] আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে।'

ছবি: মারকাস ইয়াম, প্রতিনিধি, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস

কেন তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে- এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে নাকদীকে তালেবানরা বলেন, 'আপনি ভাগ্যবান যে আপনার শিরশ্ছেদ করা হয়নি।'

নাকদী জানান, কাজ ও শিক্ষার অধিকারের দাবিতে আফগান নারীদের বিক্ষোভ–সমাবেশের ছবি তোলা শুরু করেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে এসে একজন তালেবান যোদ্ধা আগ্রাসীভাবে কথা বলতে থাকেন। 

আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা সিপিজে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে গত দুই দিনে আটক হয়েছেন অন্তত ১৪ জন সাংবাদিক। পরে তাদের ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।

সিপিজে-এর এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর স্টিভেন বাটলার বিবিসিকে বলেন, 'তালেবান খুব দ্রুতই দেখিয়ে দিয়েছে আদোতে কেমন হবে আফগানের স্বাধীন গণমাধ্যম। স্বাধীন এবং নিরাপদে গণমাধ্যম পরিচালনার অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মূলত মূল্যহীন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, তারা সেই আগের প্রতিশ্রুতিগুলো মেনে চলবে। সাংবাদিকদের মারধর এবং আটক করা বন্ধ করবে এবং গণমাধ্যমকে কোনও প্রকার প্রতিশোধের ভীতি ছাড়াই স্বাধীনভাবে কাজ করার অনুমতি দেবে।'

উল্লেখ্য, ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে তালেবান। চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় তালেবান। তারপর থেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কার্যকরভাবে সবধরণের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ও অবৈধ ঘোষণা করেছে।

প্রসঙ্গত, এই সরকারের মন্ত্রিসভায় কোনো নারী নেই। এর প্রতিবাদে গত বুধবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ একাধিক স্থানে বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ হয়। এসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই ছিলেন নারী।

সাহস২৪.কম/এসটি/এসকে.

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত