‘বাংলাদেশের কিছু মানুষ তালেবানের সাথে যোগ দিতে হিজরত করেছে’

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ২১:১৬

সাহস ডেস্ক

আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা আগেই দখল করে নিয়েছে উগ্রপন্থী সংগঠন তালেবান। আফগানদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর দুটি ইতোমধ্যেই তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বাকী শুধু রাজধানী কাবুল, তাও ঘেরাও করে রেখেছে তালেবানরা। কাবুলের পতন এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। উগ্রপন্থী এই সংগঠনটি যে দ্রুত গতিতে একের পর এক জায়গা দখল করে নিচ্ছে, তার কিছুটা প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানের সাথে যোগ দিতে বাংলাদেশ থেকে কিছু ব্যক্তি সে দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

বিশ্লেষকরা ধারণা করেন, আফগানিস্তানের উগ্রপন্থীদের সাথে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর যোগাযোগ অনেক পুরনো।

ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আফগানিস্তানে যুদ্ধে যাবার জন্য একটি আহবান জানানো হয়েছে তালেবানদের পক্ষ থেকে। এবং বাংলাদেশ থেকে কিছু মানুষ অলরেডি তালেবানদের সাথে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য হিজরত করেছে। কিছু মানুষ আমরা ধারণা করছি যে ইন্ডিয়ায় ধরা পরেছে। আর কিছু পায়ে হেঁটে বিভিন্নভাবে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।

তবে আফগানিস্তানে যাবার পথে কোন বাংলাদেশি ভারতে ধরা পড়েছে কিনা- সেটি ভারতের দিক থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

পুলিশ বলছে, বাংলাদেশের ভেতরে উগ্রপন্থীদের একটি অংশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাদের এরই মধ্যে নানা অভিযানে আটক করা হয়েছে এবং কোন ধরণের হামলার ক্ষমতা তাদের সেই বলে পুলিশ দাবি করছে।

উগ্রপন্থীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে গবেষণা সংস্থাগুলো বলছে, আফগানিস্তানের পট-পরিবর্তন বাংলাদেশকে প্রাভাবিত করবেই- তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হবার কারণ আছে জানিয়ে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পিস এন্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের চেয়ারপার্সন মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ১৯৯০’র দশকের শুরুর দিকে যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হয়, সে লগ্ন থেকে আফগান জিহাদের সাথে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সরাসরি একটি যোগসূত্র আমরা দেখতে পেয়েছি।’

১৯৯০'র দশকে আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তান গিয়েছিল।

জেনারেল মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘যারা তখন আফগানিস্তানে গিয়েছিল, তারা সেখান থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশে সন্ত্রাসের গোড়াপত্তন করে।’

আফগানিস্তান এই অঞ্চলের দেশ হলেও বাংলাদেশের সাথে তাদের কোন সীমান্ত নেই। বাংলাদেশ থেকে কেউ অবৈধ পথে আফগানিস্তানে যেতে চাইলে তাকে ভারত ও পাকিস্তান পাড়ি দিতে হবে।

গত ১২ বছর যাবত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ে যে জোরালো সহযোগিতা আছে - তাতে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারত হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত যাওয়া উগ্রপন্থীদের জন্য কতটা সহজ হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে জেনারেল মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘ব্যাপারটা আপাতদৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ডের সাথে লিপ্ত- তাদের জন্য এটা বেশ সহজ। সিরিয়াতে যখন আইএস যুদ্ধ করছিল, তখনও বাংলাদেশ থেকে যোদ্ধাদের যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। কাজেই বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে যাওয়াটা অপেক্ষাকৃত সহজ।’

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি

এর আগে আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম শহর দুটি দখলে নিয়ে তালেবান যখন রাজধানী কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে- তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি টিভিতে দেয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, সামরিক বাহিনীকে পুনরায় সংহত করা এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, যুদ্ধ অবসানের চেষ্টায় "আলোচনা" চলছে। আন্তর্জাতিক অংশীদার ও স্থানীয় নেতাদের সাথে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে পরামর্শ চলার কথাও বলেন তিনি।

তালেবানের অগ্রাভিযানের মুখে যে আফগান সামরিক বাহিনী অন্যত্র তেমন কোন প্রতিরোধই গড়তে পারেনি, তাদেরকেই এখন দৃশ্যত রাজধানী কাবুলকে রক্ষার শেষ লড়াইয়ে নামতে হবে।

সূত্র: বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত