বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা ও বিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রেমকাহিনী

বিল-অ্যানঃ প্রেমের ঘটনার নেপথ্যের সবচেয়ে দামী জুটি

প্রকাশ : ০৭ মে ২০২১, ০৩:২৭

সাহস ডেস্ক

বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা অ্যান উইনব্ল্যাড তাকে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। ১৯৮৭ সালে অ্যানের সাথে বিচ্ছেদের পর বিল মেলিন্ডাকে বিয়ে করেন ১৯৯৪ সালে। অতঃপর ২৭ বছর সংসারের পর গত ৩ মে  বিল গেটস এবং মিসেস গেটস শেষ পর্যন্ত তাদের বিবাহিত জীবনের ইতি ঘটান। ইতোমধ্যে তারা তাদের ১৩০ বিলিয়ন ডলার সম্পদ নিজেদের মধ্যে ভাগ করা শুরু করেছেন।

তবে এই বিবাহ-বিচ্ছেদ তাদের দীর্ঘ দিনের গড়ে তোলা গেট্স দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির উপর কোন রকম প্রভাব ফেলবে না। এমনকি তারা একসাথে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবেন। এই সব তথ্য ছাড়াও চারপাশে বেশ গুঞ্জন তুলেছে এই উচ্চ-শ্রেণিলর বিবাহ-বিচ্ছেদ । সর্বোপরি, অতিমাত্রায় সফল ব্যক্তিদের জীবন ঘুরিয়ে নেয়া একটি সিদ্ধান্তই যথেষ্ট ইতিহাস তৈরি করার জন্য।

আসুন ঘটনাটির পটভূমি উন্মোচন করা যাক।

কে এই বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা
অ্যান উইনব্ল্যাড একজন সফ্টওয়্যার উদ্যোক্তা এবং একটি পুঁজি বিনিয়োগকারী সফ্টওয়্যার ফার্মের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি আইবিএম এবং মাইক্রোসফ্টের প্রযুক্তি বিষয়ক একজন পরামর্শকও ছিলেন। এমনকি তিনি মাইক্রোসফ্টে বিনিয়োগও করেছিলেন।

১৯৮৪ সালে বেন রোজেন-এস্টার ডাইসন নামক এক কম্পিউটার কনফারেন্সে বিল গেটসের সাথে তার পরিচিয় হয়। যদিও অ্যান বিলের চেয়ে পাঁচ বছরের বড় ছিলেন, তবুও তাদের মধ্যে গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। অবশ্য এই বয়সের ব্যবধানের কারণেই পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে এই প্রেমের সমাপ্তি ঘটে । তবে তা তাদের বন্ধুত্বে কোনও প্রভাব ফেলেনি।

যাইহোক, অ্যান পরে সান ফ্রান্সিসকোর বেসরকারী গোয়েন্দা অ্যালেক্স ক্লিনকে বিয়ে করেন। তার সেই পুঁজি বিনিয়োগকারী ফার্মটি পরবর্তীতে ১৬টি নতুন ব্যবসা সফলভাবে চালু করেছিল। এরই জের ধরে ২০০০ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হল অফ ফেমে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন।

বিল এবং অ্যান-এর মধ্যকার ভাবাবেগের আদান-প্রদান
মাইক্রোসফ্টের অধিকর্তা বিল গেটস এবং মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ তাদের বিবাহের সময় একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করেছিলেন। চুক্তিটি ছিল এই যে, বিল প্রতি বছর সাপ্তাহিক ছুটির একটি দীর্ঘ সময় অ্যানের সাথে অতিবাহিত করবেন।

অ্যান উইনব্ল্যাডের উত্তর ক্যারোলিনার একটি দ্বীপে তীর ঘেষা একটি কটেজ আছে। তিনি সেখানে বিলের সাথে সৈকতের বালিতে গাড়িতে চড়তেন, হ্যাং গ্লাইডিং করতেন এবং সৈকতে হেটে বেড়াতেন। তারা গোটা বিশ্ব এবং নিজেদের সম্পর্কে চিন্তাভাবনাগুলো ভাগাভাগি করে নিতেন। স্বল্প পরিচিত জায়গায় ব্যবসার নিমিত্তে তাদের অভিযান কীভাবে তাদেরকে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছে- তা নিয়ে তারা অবাক হতেন।

মেলিন্ডার সাথে বিয়ের আগে, বিল ছুটি কাটাতে অ্যানের সাথে ব্রাজিল যেতেন, যেখানে তারা একসাথে বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতেন। বোনফায়ার এবং গেমসের জন্য প্রতিটি ট্রিপে সৈকতে যেতেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- তারা অন্য দম্পতিদের সাথে সেখানে সিং-ডাউন নামে একটা খেলা খেলতেন, যেটা সেখানে রীতিমতো একটা ঐতিহ্য ছিল। প্রতিটি দম্পতি একটি শব্দ নেবে এবং এটি দিয়ে গান করতে হবে। এই ঐতিহ্যকে পালন করতেই মেলিন্ডার সাথে বিয়ের পরে বিল তার সাথে প্রতি বছর অ্যানের সাথে ওখানে যাওয়ার জন্য চুক্তিটি করেছিলেন।

এই কারণটি সেই দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ন্যায্যতা পূরণ করুক আর নাই বা করুক, বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা অ্যানের যে তার প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছিল যে ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।

বিল যখন মেলিন্ডাকে বিয়ে করার ব্যাপারে ঠিক মতো সিন্ধান্ত নিতে পারছিলেন না, তখন তিনি অনুমোদনের জন্য অ্যানের কাছে এসেছিলেন। অ্যান তাকে বলেছিলেন যে মেলিন্ডা বেশ বুদ্ধিমতী একটি মেয়ে এবং সে বিলের জন্য উপযুক্ত হবে।

বিল এবং মিসেস গেটসের মধ্যকার বৈবাহিক সম্পর্ক
বিল এবং মেলিন্ডার বিবাহ বন্ধনের আগেও তাদের মাঝে বেশ দারুণ একটি সম্পর্ক ছিল। মেলিন্ডা মাইক্রোসফ্টে যোগ দিয়েছিলেন পণ্য ব্যবস্থাপক হিসাবে। অতঃপর নিউইয়র্কে একটি বাণিজ্য সম্মেলন চলাকালে একটি ডিনার পার্টিতে তাদের দেখা হয়।

তারা যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি পেতে তাদের বেশি সময় লাগেনি। দুজনেই ছিলেন দারুণ রসবোধের অধিকারী যার কারণে তারা যে কোনো গুরুতর পরিস্থিতিকে খুব সহজ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারতেন।

বিল একবার সাদা বোর্ডে বিবাহের পক্ষে ও বিপক্ষে কিছু নির্দেশনা তালিকাভুক্ত করেছিলেন। বিলের আসলে বিয়ে করার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না কিন্তু মাইক্রোসফ্ট চালানোর পাশাপাশি বিয়ের প্রাসঙ্গিকতাটা ঠিক বুঝতে পারতেন না।

একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করাটা তাদের জন্য সত্যিই খুব আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল। শেষমেষ বিল বলেছিলেন, তাদের একে অপরের প্রতি অনেক যত্ন নিতে হবে এবং এখন কেবলমাত্র দুটি উপায় আছে, হয়, ব্রেকআপ নয়ত বিয়ে করা।

২০১৯ এ নেটফ্লিক্সের একটি ডকুমেন্টারি সিরিজ করতে যেয়ে এই ব্যাপারগুলো সবার সাথে শেয়ার করেন এই সুখী দম্পতি। আড়াই দশকেরও বেশি দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে তারা তিন সন্তান পেয়েছিলেন: জেনিফার, ররি এবং ফোবি।

২০২১ এর ৩ মে সোমবার, এই দম্পতি সোশ্যাল মিডিয়া টুইটারে সম্মিলিতভাবে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্তটি প্রকাশ করেন। তারা বলেছিলেন যে, তারা দুজনেই এক লক্ষ্যে বিশ্বাসী। কিন্তু জীবনের এই পর্যায়ে দম্পতি হিসেবে একসাথে সামনের দিনগুলো কাটানোর ব্যাপারে তাদের আর কোন আস্থা নেই।

বৈবাহিক ভালোবাসার চড়াই-উৎরাই
যদিও বিলের মাইক্রোসফ্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন মেলিন্ডা বাড়িতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা করছিলেন। মেলিন্ডার কথা ছিল যে, এটি কোনও অর্থবোধ করে না যে শুধুমাত্র একজনকেই সিইও হয়ে সব ঝামেলা পোহাতে হবে। বাচ্চাদের বাবা-মার মূল্যবোধ সম্পর্কে শেখানোর জন্য কোনো একজনের বাড়িতে থাকা দরকার। অন্যথায়, বাচ্চাদের অন্য কারও আদর্শে বেড়ে উঠতে পারে।

এটি হতে হবে একেবারে সমান অংশীদারিত্ব। বিশ্বকে বোঝানো দরকার যে বাবা-মা এই পুরো ব্যাপারটাকে একসাথে পরিচালিত করছেন। মূল বিষয় হলো বিশ্বজুড়ে যৌথ মূল্যবোধের ব্যাপারটি প্রতিষ্ঠা করা। এই অংশীদারিত্ব বলতে এমনকি প্রত্যেকটি ছোট ছোট গৃহস্থালী কাজও দুজনের মাঝে সমবণ্টন করতে হবে।

এভাবে গেটস দম্পতি ২০১৭ সালে সিবিএসের সানডে মর্নিংএর সাথে শেয়ার করেছিলেন তাদের মতামতগুলো।

বিল গেটস সম্পর্কে অ্যান এবং মেলিন্ডার কিছু কথা
বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা হিসাবে নয়, অ্যান ২০০৫ সালে সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নিজের স্বপক্ষে কথা বলেছিলেন। অ্যান জানিয়েছিলেন যে, গেটসের সাথে প্রথম ডেট করার সময়ে তিনি ব্যাপারটাকে খুব বড় করে ভাবতেন না। এমন এক সময় ছিল যখন তার সম্পদের পরিমাণ বিলের চেয়েও বেশি ছিল এবং তাকেই সব কিছু চালাতে হতো। এটি খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও ভুলে যাওয়ার মতো কিছু ছিল না।

২০১২ সালের একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে, মেলিন্ডা বিলের সাথে তার সম্পর্কের কথা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি যখন জানতে পারলেন যে মাইক্রোসফ্টের অফিসে বিলের সাথে তার দেখা হতে যাচ্ছে, তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করেননি যে এই সাক্ষাৎ পরবর্তীতে প্রণয়ের দিকে এগোবে।

তিনি যখন মাইক্রোসফ্টে যোগ দিতে সিয়াটলে চলে এসেছিলেন, তখন তিনি জানতেন যে বিলের সাথে দেখা হওয়াটা এখন অবশ্যম্ভাবী কারণ প্রতিষ্ঠান ছিল বেশ ছোট। কিন্তু তিনি বিলের প্রেমে পড়বেন বা তাদের বিয়ে হবে এ নিয়ে তিনি মোটেই ভাবতে পারেননি।

এমনকি যখন তারা প্রথম দিকে ডেটিং করছিলেন, তখনও তার একবারের জন্যও বিয়ে করার চিন্তা আসে নি। এটি অবশ্যই তার জন্য এক অবাক করা ব্যাপার ছিল।

পরিশিষ্ট
হয় বিল গেটসের সাবেক প্রেমিকা বা অন্য কোনও মাত্রাতিরিক্ত সফল মহিলা, এই বিলিয়ন ডলারের প্রেমের গল্পটি মোর ঘুরে যে কোনো দিকেই এগোতে পারে। ৬৫ বিলিয়ন ডলার সম্পদের পাশাপাশি ৬৫ বছর বয়সের কথা বিবেচনা করে, গেট্স ভক্তদের গুঞ্জন শেষ পর্যন্ত ৭০ বছর বয়সী অ্যান উইনব্ল্যাডকেই নির্দেশ করে। তাছাড়া, বিলের পূর্ব সম্পর্কের সাথে তার বিবাহ-বিচ্ছেদের কোন সম্পর্ক আছে কিনা- সে প্রশ্নটি এখন ভক্তকুলের চাঞ্চল্যের খোরাক যোগিয়ে যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত