পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নির্বাচন: তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল ব্যবধানে জয়ের আভাস

প্রকাশ : ০২ মে ২০২১, ১৮:১৬

বিবিসি বাংলা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের ফলাফলের যে ট্রেন্ড তাতে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে বিপুল ব্যবধানে জিতে টানা তৃতীয়বারের মত আবারো রাজ্যের ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর দল তৃণমূল কংগ্রেস।

দুপুরে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশন যে ২৮৪টি আসনের ফলাফলের ট্রেন্ড জানিয়েছে, তাতে ২০২টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল, প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি বিজেপি পেতে যাচ্ছে মোটে ৭৭টি আসন।

দেখা যাচ্ছে যে ২৯২টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার অধিকাংশের ব্যাপারেই স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে এরই মধ্যে।

কলকাতা থেকে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা আমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত কোনো আসনের চূড়ান্ত ফলাফল না জানানো হলেও অধিকাংশ আসনে এগিয়ে থাকা দলের ব্যবধান এত বেশি যে পরবর্তীতে ফল অন্যরকম হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তবে দল জিতবে বলে আশা তৈরি হলেও দলের প্রধান মমতা ব্যানার্জী একমাত্র যে আসনটি থেকে লড়ছেন, সেই নন্দীগ্রামে এখন পর্যন্ত যতদূর ভোট গণনা হয়েছে তাতে বেশ পিছিয়ে আছেন তিনি। এখানে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছেন বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী, যিনি একসময় তৃণমূলেই ছিলেন।

মমতা ব্যানার্জী যদি শেষ পর্যন্ত হেরেই যান এবং তার দল যদি জেতে তাহলে আবার মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে তাকে ছয় মাসের মধ্যে কোন একটা আসনে উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসতে হবে।

আনুষ্ঠানিক ঘোষনা না এলেও প্রধান দলগুলোর শিবিরে এরই মধ্যে বার্তা পৌঁছে গেছে জয়-পরাজয়ের।

কলকাতা থেকে বিবিসির সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ আর অমিতাভ ভট্টশালী জানাচ্ছেন, কলকাতার রাস্তায় এই মধ্যে আগাম বিজয় উদযাপন তারা করতে দেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের।

কলকাতায় তৃণমূলের মিডিয়া সেন্টার সমর্থকদের ভীড়ে সরগরম থাকলেও বিজেপির নির্বাচনী অফিস করছিল খাঁ খাঁ।

তবে ফলাফলে হঠাৎ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংবাদদাতা অমিতাভ ভট্টশালী।

গত নভেম্বরের বিহার নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, "বিহারের নির্বাচনের ফলাফল যখন দেয়া হচ্ছিল, তখন দুপুর ১টা পর্যন্ত হিসেব একরকম ছিল। তারপর থেকেই বিজেপি'র পাল্লা ভারী হওয়া শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত কিন্তু বিজেপি ও তার মিত্র দলগুলোই জয় পায়।"

আজ পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তামিলনাড়ু, আসাম, কেরালা ও পন্ডিচেরিতে ভোট গণনা ও ফলাফল দেয়া হলেও সবার নজর পশ্চিমবঙ্গের দিকে।

মূল লড়াই বিজেপি ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। সকাল থেকে চলছে ভোট গণনা ও ফলাফল প্রকাশ।

গত ২৭শে মার্চ থেকে ২৯শে এপ্রিল পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়েছে ২৯২টি আসনে। মোট ২৯৪টি আসনে ভোট হওয়ার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে দু'জন প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় ২৯২টি আসনে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে যেভাবে হয়েছে ভোট গ্রহণ

রাজনীতি সচেতন কলকাতায় যে কোনও ভোট গণনার দিনে সকাল থেকৈই পাড়ার মোড়ে মোড়ে জটলা, বিভিন্ন দলের কর্মী-সমর্থকদের আড্ডা-এগুলো খুব পরিচিত দৃশ্য।

কিন্তু এবারের মহামারি বিধ্বস্ত এই মহানগর ভোট গুণছে একেবারে সুনশান নিস্তব্ধতায়, রাস্তাঘাটেও নেই গাড়িঘোড়া বা মানুষজন।

সকাল থেকে শহরের এমাথা থেকে ওমাথা, নানা গণনাকেন্দ্রে ঘুরে খালি চোখে পড়েছে পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনী আর হতোগোনা মিডিয়া কর্মী।

কোভিডের আতঙ্ক আর বিধিনিষেধ ভোট গোনার দিনের রাজনৈতিক উম্মাদনায় যেন পুরোপুরি উধাও।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এবারের নির্বাচনে যেই মাত্রার লড়াই দেখা গেছে, তা এর আগে কখনো দেখা যায়নি।

কোভিড মহামারির মধ্যেও নির্বাচনের আগে জনসভা ও রোড শো করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ। ভাষণ দিয়েছেন অন্তত ৫০টি জনসভায়।

কোভিড মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ সামলানোর ব্যাপারে যে বিপর্যয়কর ব্যর্থতা দেখানো হয়েছে, তার জেরে নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের আরও যেসব সভা করার কথা ছিল সেগুলি শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয়।

তবে রাজ্যে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রচারণা চালিয়ে গেছেন বিজেপি প্রেসিডেন্ট জে. পি. নাড্ডা।

রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল জিতলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, সেটা এখন পর্যন্ত একবারও উল্লেখ করেননি। আজ ভোট গণনা শুরু হওয়ার সময় পর্যন্তও সেটা কেউ জানে না।

ফলে দায়িত্ব হাতে পেলেও সেটা পালনের জন্য তারা একেবারেই প্রস্তুত নয়, বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যেসব বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে এবারের নির্বাচনে

ভারতের রাজনীতিতে ধর্ম অনেক রাজ্যেই একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে থেকেছে অনেকদিন থেকেই। কিন্তু বামপন্থীদের শক্ত ঘাঁটি ছিল যে পশ্চিমবঙ্গে, সে রাজ্যে রাজনীতিতে তা ছিল বিরল।

ধর্মের প্রসঙ্গ খুব একটা কোনও দলই নিয়ে আসত না রাজনীতিতে। কিন্তু এবছরই সে রাজ্যের ভোটে কোনও না কোনও ভাবে ধর্ম বেশ প্রকটভাবে উঠে আসছে প্রচারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগে বিজেপি নেতৃত্ব যেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির প্রচারণা ও রাজনীতি চালিয়ে এসেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত হবে।

এছাড়া বিজেপি ক্ষমতায় এলে পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব সংস্কৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে - এমন প্রশ্নও তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা।

উত্তর ও মধ্য ভারতের দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে বিজাতীয় সংস্কৃতি আমদানি করতে চাইছে, যার সাথে পশ্চিমবঙ্গের নিজস্ব ভাষা-শিল্প-মননের মিল নেই, এমনটা অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের।

এই ভোট শুধু যে ২৯৪ জন বিধায়ক বা জনপ্রতিনিধিকে নির্বাচন করবে তাই নয়। পর্যবেক্ষকরা প্রায় সবাই এক বাক্যে বলছেন রাজ্যের সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক চরিত্রেও সম্ভবত একটা বড়সড় পরিবর্তনের দিশা দেখাতে পারে এই ভোট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত