ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী হামলায় অন্তত ২২জন জওয়ান নিহত

প্রকাশ | ০৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:২২

বিবিসি বাংলা

মধ্য ভারতের ছত্তিশগড়ে মাওবাদী বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ২২জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, জখম হয়েছেন আরও প্রায় ৩০ জন।

এর মধ্যে শনিবার (৩ এপ্রিল) মধ্যরাতেই একজন জওয়ানের দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, আজ রবিবার (৪ এপ্রিল) ভোররাতে আহত আরও চারজন হাসপাতালে মারা যান।

রবিবার সকালে গভীর জঙ্গলে তল্লাশি চালিয়ে আরও সতেরোজনের লাশ পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া গেছে একজন নারী গেরিলার লাশও।

গত দুসপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মাওবাদীরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিধ্বংসী আঘাত হানল, তবে এত বড় মাপের হামলা গত চার বছরের মধ্যে এই প্রথম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ছত্তিশগড় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাগেল উভয়েই এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং জানিয়েছেন এর পরেও মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

ছত্তিশগড় রাজ্যের মাওবাদী-অধ্যুষিত দুটি জেলা, বিজাপুর ও সুকমার সীমান্তে যে ঘন জঙ্গল - শনিবার ঠিক সেখানেই এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।

এর আগে শুক্রবার রাতেই তারেম, উসুর, পামেড, মিনপা ও নারসাপুরম - রাজ্যের এই পাঁচটি পয়েন্ট থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই হাজারেরও বেশি সদস্য বস্তারের গহীন জঙ্গলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে একযোগে যৌথ অভিযান শুরু করেছিল।

রাজ্যের অ্যান্টি-মাওয়িস্ট ফোর্সের ডেপুটি আইজি ও পি পল জানান, শনিবার দুপুর নাগাদ তারেম থেকে রওনা হওয়া একটি টহলদার বাহিনীর সঙ্গে জোনাগুডা গ্রামের কাছে মাওবাদী গেরিলাদের 'এনকাউন্টার' শুরু হয়।

বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে চলা ওই বন্দুকযুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্য হতাহত হন, তাদের অনেকেরই খোঁজ মিলছিল না।

গত মধ্যরাতের পর বস্তার রেঞ্জের পুলিশ মহাপরিদর্শক পি সুন্দররাজন সংবাদমাধ্যমকে জানান, "দুটি হেলিকপ্টার পাঠিয়ে আহতদের নিয়ে আসা হয়েছে, তারা একজনের মরদেহও নিয়ে ফিরেছে।"

"বাকি অনেকেই এখনও নিখোঁজ, তাদের সন্ধানে তল্লাসি চালানো হচ্ছে। আমাদের ফোর্স এখন ঘটনাস্থলেই আছে। পরবর্তী আপডেটের জন্য আপনাদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।"

এদিন সকালেই আহতদের মধ্যে আরও চারজন প্রাণ হারান, ওদিকে জঙ্গলের গভীর থেকে উদ্ধার হয় আরও সতেরোজনের গুলিবিদ্ধ দেহ।

'নিহত জওয়ানদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না,' বলে টুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে জরুরি আলোচনা সেরে ছত্তিশগড়ের দিকে রওনা দেন সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা সিআরপিএফের প্রধান কুলদীপ সিং।

ছত্তিশগড়ের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাগেল আসামে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন, তড়িঘড়ি নিজের রাজ্যে ফেরার আগে তিনিও ঘোষণা করেন, মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এখন অভিযান চালানো হবে দ্বিগুণ শক্তিতে।

মি বাগেল বার্তা সংস্থাকে বলেন, "আমি যা খবর পেয়েছি টানা চার ঘন্টা ধরে লাগাতার বন্দুকযুদ্ধ চলেছে। সংঘর্ষে নকশালবাদীদের বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।"

"আমাদের জওয়ানরাও শহীদ হয়েছেন, আমি তাদের পরিবারকে সমকেদনা জানাচ্ছি এবং কথা দিচ্ছি যে তাদের শাহাদাত ব্যর্থ হবে না।"

"আমরা এখন নতুন শক্তিতে লড়ব, আর মনে রাখতে হবে মাওবাদীদের এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে এবং তারা নিজেদের অস্তিত্ত্ব বাঁচানোর লড়াই লড়ছে।"

রবিবার দুপুরে রাজধানী রায়পুরে সাংবাদিক বৈঠক করে আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফের প্রধান কুলদীপ সিং দাবি করেন, বস্তার অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার নির্মাণ ঠেকাতেই মাওবাদীরা এই হামলা চালিয়েছে।

মি সিং বলেন, "সিলগেড় থেকে বাসাগুডা পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমমুখী রাস্তা তৈরি হয়ে গেলে জোন সি-র গেরিলাদের পাহাড়ের দিকে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে, আমরা জাগরগুন্ডা থানা এলাকায় অনেক বেশি জওয়ান মোতায়েন করতে পারব।"

"এটা আটকাতেই তারা বড় আকারের হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু সরকারি নীতি এতে পাল্টাবে না, ফোর্সও এগোবে এবং আমরা ক্যাম্পও বসাব - আরও দ্রুত।"

গত ২৩ মার্চ রাজ্যের নারায়ণগড় জেলায় মাওবাদীরা পুলিশের একটি বাসে হামলা চালালে পাঁচজন ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড বা ডিআরজি সদস্য প্রাণ হারিয়েছিলেন।

তবে মাওবাদীদের কোনও হামলায় কম করে বাইশজন জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনা শেষবার ঘটেছিল ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে, সেটাও এই সুকমাতেই।