জর্ডানের সাবেক যুবরাজ প্রিন্স হামজার ভিডিও বার্তা: 'আমাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে'

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২১, ২১:১০

বিবিসি বাংলা

জর্ডানের সাবেক যুবরাজ প্রিন্স হামজা বিন হুসেইন এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এবং এটা দেশের বর্তমান নেতাদের সমালোচকদের ওপর এক ক্র্যাকডাউনের অংশ।

প্রিন্স হামজা হচ্ছেন জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সৎভাই।

সম্প্রতি জর্ডানে উচ্চপর্যায়ের বেশ কিছু লোককে গ্রেপ্তার করা হয় - যা একটি কথিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সাথে সম্পর্কিত বলে বলা হচ্ছে।

প্রিন্স হামজার আইনজীবীর মাধ্যমে বিবিসির কাছে পাঠানো এক ভিডিওতে তিনি তার দেশের নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অদক্ষতা ও হয়রানির অভিযোগ আনেন।

জর্ডানের সামরিক বাহিনী এর আগে প্রিন্স হামজাকে গৃহবন্দী করার কথা অস্বীকার করেছিল। তবে তারা বলেছে, জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে এমন কিছু কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য প্রিন্স হামজাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি প্রিন্স হামজা কিছু উপজাতীয় নেতার সাথে দেখা করেছিলেন - যাদের মধ্যে থেকে তিনি কিছু সমর্থন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রিন্স অবশ্য কোন রকম অন্যায় করার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি কোন ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন না।

এর মধ্যে মিশর ও সৌদি আরবের মত আরব বিশ্বের আঞ্চলিক শক্তিগুলো বাদশাহ আবদুল্লাহর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র - যারা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জর্ডানকে মিত্র হিসেবে নিয়েছে - তারা বাদশাহ আবদুল্লাহকে একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করে তার প্রতি তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছে।

জর্ডান দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ খুবই কম, এবং তাদের অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির কারণে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিবেশী সিরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ শরণার্থীও জর্ডানে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

ভিডিও বার্তায় কী বলেছেন প্রিন্স হামজা?
শনিবার রেকর্ড করা ভিডিওটিতে প্রিন্স হামজা বলেন, জর্ডানের সেনা প্রধান তাকে জানিয়েছেন যে তিনি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না, এবং লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন না - কারণ তিনি উপস্থিত ছিলেন এমন কিছু সভায় সরকার ও বাদশাহর সমালোচনা করা হয়েছে। তবে তিনি নিজে এরকম সমালোচনা করেছেন এমন কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি।

তবে প্রিন্স হামজা বলেন, গত ১৫-২০ বছরে জর্ডানের প্রশাসন যেভাবে ভেঙে পড়েছে, সরকার কাঠামোয় যে অদক্ষতা ও দুর্নীতি দেখা গেছে তার জন্য তিনি দায়ী নন। "জনগণ যে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো র ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে তার জন্যও আমি দায়ী নই" - বলেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, "পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে কেউ কথা বলতে পারে না, নিগ্রহ-হুমকি-হয়রানি-গ্রেফতার শিকার না হয়ে কেউ কোন মত প্রকাশ করতে পারে না।"

প্রিন্স হামজা বলছেন, তার সব কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তিনি ও তার পরিবারকে আম্মানের বাইরে আল-সালাম প্রাসাদে গৃহবন্দী করা হয়েছে, এবং তার যোগাযোগ ব্যবস্থা সীমিত করে দেয়া হয়েছে।

ভিডিওতে তিনি বলছেন, দেশে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে যেখানে কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই গোপন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হবার আতংকে থাকতে হয়।

রাজপরিবারের ভেতরে উত্তেজনা চলছিল
জর্ডানের একজন সাংবাদিক রানা সোয়েইস বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই রাজপরিবারের ভেতরে উত্তেজনা চলছিল।

তিনি বলেন, "সাবেক যুবরাজ হামজাকে জনপ্রিয় বলে মনে করা হয়। তার সাথে বাদশাহ হুসেইনের চেহারার অনেক মিল আছে, তিনি স্থানীয় উপজাতিগুলোর মধ্যেও জনপ্রিয়।"

জর্ডানে মহামারি শুরু হবার পর থেকেই দেশটির শক্তিধর গোয়েন্দা সংস্থাকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল এবং এজন্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এর সমালোচনা করছিল।

তবে জর্ডনে উচ্চস্তরের রাজনৈতিক লোকদের গ্রেপ্তারের ঘটনা খুবই বিরল।

বিবিসির বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, মনে হচ্ছে রাজপরিবারের এই সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

তিনি বলছেন, দেশটির অর্থনীতি কোভিড মহামারির আগে থেকেই খারাপ অবস্থায় ছিল এবং সেখানে এখন গণঅসন্তোষ বাড়ছে। দেশটির প্রয়াত বাদশাহ হুসেইনের ছেলে এখন যেভাবে ভিডিও বার্তায় সরকারের সমালোচনা করছেন - তা অনেকটা দুবাইয়ের বন্দী প্রিন্সেস লতিফার বার্তার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে।

শনিবার জর্ডানে আরো যারা গ্রেফতার হয়েছেন তার মধ্যে আছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসেম আওয়াদাল্লাহ এবং রাজপরিবারের একজন সদস্য শরিফ হাসান বিন জায়েদ।

কে এই প্রিন্স হামজা?
প্রিন্স হামজা হচ্ছেন প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন ও তার প্রিয় স্ত্রী রানি নূরের সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র।

তিনি ব্রিটেনের হ্যারো স্কুল ও স্যান্ডহার্স্টের মিলিটারি এ্যাকাডেমির গ্রাজুয়েট, এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছেন। কাজ করেছেন জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনীতে।

তিনি বাদশাহ হুসেইনের প্রিয় পুত্র ছিলেন এবং ১৯৯৯ সালে তাকেই জর্ডানের যুবরাজ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।

কিন্তু বাদশাহ হুসেইনের মৃত্যুর পর তাকে উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করা হয়নি, কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল - তার বয়স অনেক কম এবং তিনি অনভিজ্ঞ।

ফলে তার পরিবর্তে তার সৎভাই আবদুল্লাহ সিংহাসনে আরোহণ করেন, এবং তিনি ২০০৪ সালে প্রিন্স হামজার যুবরাজ খেতাব বাতিল করেন।

রানি নূরের জন্য এটি ছিল এক বড় আঘাত - কারণ তিনি আশা করেছিলেন যে তার ছেলেই একদিন রাজা হবেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত