মিয়ানমারে রক্তক্ষয়ী দিনে নিহত ৩৮ জন

প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২১, ১২:৩৪

বিবিসি বাংলা

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে হওয়া বিক্ষোভে বুধবার অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। একমাস আগে সামরিক অভ্যুত্থান হওয়ার পর এটিকে সবচেয়ে 'রক্তক্ষয়ী দিন' হিসেবে বলছে জাতিসংঘ।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টিন স্ক্রেনার বার্গেনার জানিয়েছেন, দেশটির বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়াবহ ভিডিও পাওয়া যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা রক্ষীরা বিক্ষোভকারীদের দিকে রাবার বুলেটের পাশাপাশি আসল গুলিও ছুঁড়েছেন।

পহেলা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর মিয়ানমারে গণ বিক্ষোভ শুরু হয়।

মিয়ানমারে সেনা শাসনের অবসান ঘটিয়ে অং সান সু কি স'হ নির্বাচিত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে মানুষজন।

সামরিক অভ্যুত্থান এবং বিক্ষোভ দমন করার উদ্দেশ্যে মিয়ানমার সরকারের নেয়া সহিংস পদক্ষেপের বিশ্বজুড়ে সমালোচনা হলেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত সব ধরণের সমালোচনা উপেক্ষা করেছে।

বুধবার (০৩ মার্চ) মৃত্যুর ঘটনার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ বৈঠক আহ্বান করেছে যুক্তরাজ্য।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার জানিয়েছেন, ‘অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন মারা গেছেন এবং 'বহু' আহত হয়েছেন।’

তিনি জানান, ‘একটি ভিডিও ক্লিপে পুলিশকে দেখা যায় একজন বিক্ষোভকারীকে গুলি করতে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অস্ত্র বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে সেগুলো ৯ মিলিমিটার সাব মেশিনগান ধরণের অস্ত্র, অর্থাৎ আসল গুলি ব্যবহার করা হয়েছে বিক্ষোভকারীদের ওপর।’

মিয়ানমারের ভেতর থেকে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে যে ইয়াঙ্গুনসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর কোন সতর্কবার্তা না দিয়ে সরাসরি গুলি করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মধ্য মায়ানমারে মনইওয়া অঞ্চলে অন্তত ছয় জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া তথ্যে স্থানীয় একজন সাংবাদিক জানান যে সেখানে আরো অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

সংবাদ সংস্থা এএফপি'কে একজন স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসক জানিয়েছেন, মিইঙ্গিয়ান অঞ্চলে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

ঐ অঞ্চলের এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘তারা আমাদের দিকে জলকামান নিয়ে আক্রমণ করেনি, ছত্রভঙ্গ হওয়ার কোন সতর্কবার্তাও দেয়নি। তারা সরাসরি আমাদের দিকে গুলি চালিয়েছে।’ খবর- রয়টার্স

মান্ডালায় এলাকার একজন বিক্ষোভকারীও জানান যে তার বাসার কাছেই বিক্ষোভকারীদের দিকে কোনো সতর্কবার্তা না দিয়েই গুলি ছোঁড়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

"তারা সরাসরি গুলি করা শুরু করে। তারা রাবার বুলেটও ব্যবহার করেছে, কিন্তু আসল বুলেটও ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ মানুষকে নির্দয়ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে।"

সাধারণ মানুষের মৃত্যুর খবরের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী কোন মন্তব্য করেনি।

সেনাবাহিনীর অনড় অবস্থান
মিয়ানমারের সংকট বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ালেও দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে সামরিক অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় প্রস্তুত তারা।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জেনারেলদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘকে 'অত্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ' নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের দূত মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপ প্রধানের সাথে আলোচনার সময় এই বিষয়ে কথা বলেন মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপ প্রধানের জবাব সম্পর্কে নিউ ইয়র্কে সাংবাদিকদের মিজ স্ক্রেনার বার্গেনার বলেন, "তার জবাব ছিল, আমাদের অল্প সংখ্যক বন্ধুর সাথে পথ চলা শিখতে হবে।"

বুধবারের সহিংসতার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, "মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দ্বারা তাদের নিজেদের দেশের সাধারণ মানুষের ওপর হওয়া নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব দেশকে একসাথে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।"

ঐতিহাসিকভাবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক থাকা চীনের প্রতি তিনি বিশেষভাবে আহ্বান জানান যেন তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনা করে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যুত্থানের সমালোচনা করেনি রাশিয়া আর চীনের বিরোধিতার কারণে। চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা হিসেবে মনে করে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত