ব্রহ্মপুত্র নদীতে বাঁধ দিচ্ছে চীন, আপত্তি ভারতের

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:৪৪

সাহস ডেস্ক

ভাটির দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের আপত্তি উপেক্ষা করেই ব্রহ্মপুত্র নদীর উৎসের কাছে তিব্বতে বিশাল বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছে চীন। নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাটিতে অবস্থানরত ভারত ও বাংলাদেশ পানি সংকটের মুখোমুখি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনা গণমাধ্যমকে উদৃত করে ভারতের ‘ইনডিয়া টাইমস’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিশাল এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

নদীটির বেশিভাগই ভারতীয় ভূমির ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চীনা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি ভারতকে ভাবিয়ে তুলেছে। দেশটির আশঙ্কা, বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর উজানে তেমন কোনো পরিবর্তন না এলেও, ভাটির দেশের ব্রহ্মপুত্র-নির্ভর মানুষা নানা সমস্যায় পড়তে পারেন। শুষ্ক মৌসুমে নদীর ভাটির অংশে পানির প্রবাহ হ্রাস পায়। ফলে প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় নয় মাস ভাটির দেশগুলো পানি সংকটে পতিত হয়। 

চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়ং জানিয়েছেন, ইয়ারলাং জাংবো (ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীকে তিব্বতে এই নামেই ডাকা হয়) নদীর ওপর এই যে প্রকল্পটি তৈরি হচ্ছে ‘ইতিহাসেই তার কোনও তুলনা নেই’। চীনের জলসম্পদ রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্যও এটির গুরুত্ব অপরিসীম হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তার মতে, আর সব অর্থেই এটি হতে যাচ্ছে একটি ‘সুপারড্যাম’।

ইয়ান ঝিয়ং বলেন, নদীর ভাটিপথের শুরুতেই একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি একাধিক দেশের পানি সরবরাহের মূল উৎস হিসেবে বিবেচিত হবে। একই সাথে এটি বিদ্যুৎ সরবরাহ ও নিরাপত্তায়ও সাহায্য করবে। এটি চীনের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াবে।  

চীন ২০১৫ সাল থেকে তিব্বতে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের একটি বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিচালনা করছে। নতুন বাঁধকে “উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র” হিসেবে অভিহিত করে চীনের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাঁধটি “ইয়ারলুং জ্যাংবো” নদীর মেডং এলাকায় নির্মাণ করা হবে।

আসামে গৌহাটি আইআইটি’র অধ্যাপক ও জলসম্পদ বিশেষজ্ঞ ড. অরূপ কুমার শর্মাও মনে করছেন, ব্রহ্মপুত্রে উৎসের কাছে এত বড় আকারের বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হলে ভাটিতে ভারত ও বাংলাদেশের জন্য তা অশনি সংকেত বয়ে আনতে পারে।

অরূপ কুমার শর্মার কথায়, চীন এতদিন বলে এসেছে ব্রহ্মপুত্রের ওপর তারা যা-ই করছে, সেগুলো রান-অব-দ্য-রিভার প্রজেক্ট, অর্থাৎ নদীর জল ব্যবহার করে আবার নদীতেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই সুপারড্যাম দিয়ে তারা যে এবার ইয়ারলাং জাংবো-র জলসম্পদকে অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাইছে তাতে আর কোনও লুকোছাপা নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত