মার্কিন বাহিনী চলে গেলে আফগানিস্তানের কি হবে?

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৪৯

সাহস ডেস্ক

গত ছয় মাস ধরে নানা টানাপোড়েন আর সময়ক্ষেপণের পর আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দেশ পরিচালনার পদ্ধতি নিয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনায় বসেছেন আফগান সরকার ও তালেবান প্রতিনিধিরা।

গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন-তালেবান সমঝোতায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, পরবর্তী মে মাসের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র। এর জন্য শর্ত ছিল, আল-কায়েদার মতো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে তালেবানদের। তবে ওই চুক্তির সময় আফগান সরকারের উপস্থিতি ছিল না। ফলে এবারের আলোচনায় উঠে আসবে মূলত মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তান কীভাবে চলবে সেটাই।

১৯৭৮ সালের এক অভ্যুত্থানে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীকে উৎখাতের পর থেকে যুদ্ধ আর রক্তপাতের ধারা বইছে আফগানিস্তানে। এতে প্রাণ হারিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, ঘরছাড়া হয়েছেন কয়েক লাখ। দেশটিতে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি আরও খারাপই হয়েছে শুধু।

সেই অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে আফগান-তালেবান শান্তি আলোচনা। দোহায় বিলাসবহুল হোটেলের বলরুমে আন্তরিক ব্যবহার দেখিয়েছে দুই পক্ষই। একে অপরের সঙ্গে তারা মোলাকাত করেছেন পুরোনো বন্ধুর মতো। আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল অস্টিন মিলার ছিলেন তালেবান ঘাতকদের অন্যতম লক্ষ্য। সেই ব্যক্তিই হৃদ্যতা দেখিয়ে গ্রহণ করেছেন ‘শত্রুপক্ষকে’। 

ওইদিন বেশ শান্তশিষ্ট পরিবেশেই শুরু হয় আলোচনা পর্ব। কথা হয় মূলনীতি ও বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে। তবে শান্তি আলোচনা বিনষ্ট হওয়া ঠেকাতে দুই পক্ষই একে অপরকে ধৈর্য ও সহশীলতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। আফগান সরকার পক্ষের মূল দাবি ছিল যুদ্ধবিরতি। দেশটিতে এখনও প্রতি সপ্তাহেই অসংখ্য বেসামরিক নাগরিক হতাহত হচ্ছেন। আশা করা হচ্ছে, এবার হয়তো সেই ধারা কিছুটা কমে আসবে।

আফগানিস্তান অ্যানালাইসিস্ট নেটওয়ার্কের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার-তালেবান দুই পক্ষই সহিংস কর্মকাণ্ডের দায় নেয়ার হার অনেক কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আগের চেয়ে দায় স্বীকারবিহীন হামলার ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। তবে হত্যাযজ্ঞ খুব একটা কমেনি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহিংসতাই তালেবানদের আলোচনার একমাত্র অবলম্বন। তারা জানে, একমাত্র অস্ত্রের শক্তিই তাদের ওই আলোচনার টেবিলে জায়গা করে দিয়েছে। ফলে এটি তারা সহজে ত্যাগ করবে না।

তাহলে দেশ চলবে কীভাবে? ক্ষমতার ভাগাভাগিই বা হবে কীভাবে? সংবিধানে কীসের অধিকার নিশ্চিত করা হবে? এগুলোর জবাব পেতে কয়েক মাস, এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে। তাছাড়া, তালেবানরা কী চায় সেটা তারা এখনও পরিষ্কার করে জানায়নি।

তালেবান নেতারা বলছেন, ইসলাম ধর্মের অধীনে নারীর অধিকার রক্ষা করা হবে। তবে তাদের এমন অস্পষ্ট কথায় ভরসা পাচ্ছেন না অনেকেই। কারণ, ৯০-এর দশকে তালেবানরা মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিল। এধরনের গোঁড়ামি থেকে তারা কতটা সরে আসবে সেটি এখনও নিশ্চিত নয়।

আবার আফগান সরকারও বেশি কিছু বলছে না। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বিস্তারিত না জানিয়ে মুখে শুধু ‘একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক ও ঐক্যবদ্ধ দেশ’ গড়ার কথা বলেছেন মাত্র।

দুই আফগান শক্তির মধ্যে শান্তিচুক্তিতে বিলম্ব হলে তাতে সমস্যা শুধু বাড়বেই। আল-কায়েদার সঙ্গে তালেবানদের সুসম্পর্ক বজায় থাকলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও হয়তো আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার না করার অজুহাত পেয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে আলোচনার দৌঁড় শুরু হলেও সেটি শেষ পর্যন্ত কোন লক্ষ্যে পৌঁছাবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত