আন্তর্জাতিক আদালতে ১৫০ রোহিঙ্গাকে হত্যার কথা স্বীকার করলো মিয়ানমারের ২ সেনা

প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:৩১

সাহস ডেস্ক

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যার বিষয় স্বীকার করে নেওয়ার পর মিয়ানমারের দুই সেনাসদস্যকে নেদারল্যান্ডের হেগ শহরে নেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর কীভাবে বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে তা নিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন মিয়ানমারের দুই সেনা সদস্য। 

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুটি সংবাদমাধ্যম ও একটি মানবাধিকার সংস্থা এ তথ্য জানিয়েছে। প্রাইভেট পদাধিকারী ওই দুই সেনার নাম মিও উইন তুন (৩৩) ও জ নায়েং তুন (৩০)।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চলতি বছরে মিয়ানমারে ধারণ করা কিছু ভিডিওতে ওই দুজন নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিবৃতি দেয়। গত মাসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার পর ওই দুই সেনাকে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে নিয়ে যাওয়া হয়। এ শহরেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চলছে।

আইসিসিতে দেয়া সাক্ষ্যে ওই দুই সেনা জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালিয়েছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেসময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সৈনিকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘যত রোহিঙ্গাকে দেখবে, সবাইকে গুলি করবে’। এসময় দু’জনে একের পর এক গ্রাম ধ্বংস, হত্যা ও গণকবর দেয়ার বীভৎস বর্ণনা দিয়েছেন।

মিও উইন তুন জানিয়েছেন, তিনি কর্মকর্তাদের নির্দেশে অন্তত ৩০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যায় অংশ নিয়েছিলেন। সেসময় সেল টাওয়ার ও একটি সামরিক ঘাঁটির কাছে নিহতদের গণকবর দেয়া হয়েছিল। আমরা প্রায় ২০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন করেছিলাম। পরে শিশু ও বৃদ্ধদের মরদেহ একটি গণকবরে ফেলা হয়।

প্রায় একই সময় পার্শ্ববর্তী আরেকটি এলাকায় একই ধরনের হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিলেন জ নায়েং তুন। তার ওপরও নির্দেশ ছিল, শিশু থেকে বৃদ্ধ যাকেই দেখবে সবাইকে হত্যা করবে।

ভিডিও স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই দুই সদস্য অন্তত ১৫০ রোহিঙ্গাকে হত্যা এবং কয়েক ডজন গ্রাম ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত। এসময় তারা ১৯ জনের নাম উল্লেখ করেছেন যারা সরাসরি এ ধরনের নৃশংসতায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া, সেনাবাহিনীর ছয়জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ গণহত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তারা।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ দুই সদস্যের বক্তব্যের সঙ্গে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বর্ণনার বেশ মিল রয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস। পার্থক্য শুধু, আগের বর্ণনাগুলো ছিল ভুক্তভোগীদের আর এবারের কথাগুলো বেরিয়েছে সরাসরি অপরাধীদের মুখ থেকেই।

মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা ফরটিফাই রাইটসের প্রধান নির্বাহী ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জনগণের কাছে এটি একটি স্মরণীয় মুহূর্ত। এই দু’জন আইসিসিতে উপস্থিত মিয়ানমারের প্রথম অপরাধী এবং আদালতের হেফাজতে থাকা প্রথম অভ্যন্তরীণ সাক্ষী হতে পারেন।

প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, ওই দুই সেনাসদস্য বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হেফাজতে ছিল। গোষ্ঠীটির সঙ্গে বর্তমানে রাখাইনে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সংঘর্ষ চলছে। আরাকান আর্মির হেফাজতে থাকার সময় ওই দু’জন ভিডিও বিবৃতি দেয়। পরে তাদের নেদারল্যান্ডের হেগে নেওয়া হয়। সেখানে রোহিঙ্গা নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে তাদের সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করা হতে পারে।

তবে ওই দুই সেনা সদস্য কীভাবে আরাকান আর্মির হাতে ধরা পড়লো, কেন তারা বিবৃতি দিয়েছে, কিংবা কীভাবে এবং কার তত্ত্বাবধায়নে তারা হেগে পৌঁছালো-বিষয়গুলো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

এ বিষয়ে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মুখপাত্র ফাদি এল আবদাল্লাহ বলেন, উল্লেখিত দুই সেনা সদস্যকে এখনো তারা হেফাজতে পাননি। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো সঠিক নয়।

আইসিসিতে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মামলায় বাংলাদেশের পক্ষের আইনজীবী পায়াম আখাভান বলেন, দুইজনকে নিরাপত্তার মধ্যে একটি সীমান্ত পোস্টে আনা হয়। তারা ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নরনারীদের গণহত্যা ও ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। আমি এটুকুই বলতে পারি, তারা এখন আর বাংলাদেশে নেই।

এ বিষয়ে খিন থু খা নামের আরাকান আর্মির এক মুখপাত্র বলেন, দুই ব্যক্তিকে পরিত্যাক্ত করা হয়েছিল, তাদের যুদ্ধবন্দি হিসেবে আটক করা হয়নি। তবে তারা এখন কোথায় আছে তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত