রিপাবলিকান কনভেনশন ট্রাম্পের পরিবারিক ‘রিয়েলিটি শো’

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২০, ১৬:৪১ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২০, ১৬:৪৬

অনলাইন ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘এ বছর নভেম্বরের নির্বাচনে নির্ধারিত হবে আমরা আমেরিকার স্বপ্ন রক্ষা করতে সক্ষম হব, নাকি একটি সমাজতান্ত্রিক অ্যাজেন্ডা গ্রহণ করব, যার ফলে আমাদের কাঙ্ক্ষিত নিয়তি ভেঙে চুরমার হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির কনভেনশনের চতুর্থ দিন গত বৃহস্পতিবার (২৭ আগস্ট) হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রার্থীপদ গ্রহণ করে এ কথা বলেন।

প্রায় এক হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ৭০ মিনিট স্থায়ী ভাষণে ট্রাম্প ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনকে একজন ভয়ানক ও ক্ষতিকর প্রার্থী বর্ণনার পাশাপাশি নিজের পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে ‘স্বপ্নের আমেরিকা’ ধরে রাখার শেষ সুযোগ হিসেবে উপস্থাপন করেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘এই নির্বাচনে ঠিক হবে আমরা যাকে মার্কিন জীবনপদ্ধতি বলি, তা রক্ষা সম্ভব হবে, না সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হবে। এটা আমরা হতে দেব না।’

বাইডেন নিজে মধ্যপন্থী, তাকে কমিউনিস্ট বলে চালানো সহজ নয়, সে কারণে বাইডেনকে দলের বামপন্থীদের হাতে জিম্মি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ট্রাম্প বলেন, ‘বাইডেন হলো ট্রয়ের ঘোড়া, নির্বাচিত হলে তার দলের বামপন্থীদের চাপে আমেরিকায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, বাইডেন মোটেই আমেরিকার রক্ষাকর্তা নন, সুযোগ পেলে তিনি এই দেশের মহত্ত্ব ধুলায় মিশিয়ে দেবেন।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘বাইডেন ক্ষমতায় এলে সহিংস অরাজকতাকারী, বিক্ষোভকারী ও দুষ্কৃতকারীদের হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে এবং তারা আমাদের পরিচিত মার্কিন জীবনব্যবস্থা ধ্বংস করবে।’

এক সপ্তাহ আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির যে কনভেনশনে জো বাইডেন ও তার রানিং মেট হিসেবে সিনেটর কমলা হ্যারিসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তা ছিল দর্শকবিহীন ও পুরোপুরি ভার্চ্যুয়াল। রিপাবলিকান কনভেনশন আংশিক ভার্চ্যুয়াল হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প দর্শকের উপস্থিতিতে হোয়াইট হাউস থেকেই ভাষণ দেন। ‘জনতার গৃহ’ হিসেবে পরিচিত হোয়াইট হাউস এই প্রথম কোনো দলের রাজনৈতিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হলো।

মার্কিন আইন অনুসারে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ। মার্কিন সরকারের অফিস অব গভর্নমেন্ট এথিকসের সাবেক পরিচালক ওয়াল্টার শ্যব এই ব্যবহারকে ‘ঘৃণিত একটি কাজ’ বলে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহারে এর চেয়ে বড় নজির আর নেই।

তবে রিপাবলিকান কনভেনশনের এটিই একমাত্র অভিনব ব্যাপার ছিল না। ট্রাম্প ছাড়াও এই সম্মেলনে ভাষণ দেন তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য। এমনকি তার বড় ছেলে ডোনাল্ড জন ট্রাম্প জুনিয়রের বান্ধবীও ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পান। একজন ভাষ্যকারের কথায়, এটি ছিল ট্রাম্প কর্তৃক প্রযোজিত ট্রাম্প পরিবারের একটি ‘রিয়েলিটি শো’।

সম্মেলনের চার দিন অধিকাংশ বক্তা পরবর্তী চার বছর এই দল কী অ্যাজেন্ডা অনুসরণ করবে, অথবা দলের সামনে কী চ্যালেঞ্জ, তার ফিরিস্তি দেওয়ার বদলে শুধু ট্রাম্পের অপরিহার্যতা বর্ণনায় ব্যয় করেন। এই প্রথম কোনো দলের নির্বাচনী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো যেখানে কোনো নির্বাচনী ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়নি। তার বদলে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ কর্মসূচিকে বাস্তবায়নই হবে এই দলের লক্ষ্য।

সবাইকে টেক্কা দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা তার বক্তব্যের মূল কথা বর্ণনায় লিখেছে, সম্মেলনে মাইক পেন্স যা বললেন তা হলো ট্রাম্প মহান, তিনি মহান এবং তিনি আবারও মহান। ট্রাম্পের রানিং মেট হিসেবে পেন্স আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত, আগামী নির্বাচন হবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চার বছরের ওপর একটি রেফারেনডাম বা গণভোট। তিনি নিজেই অভিযোগ করেছেন, মিডিয়ার নেতিবাচক প্রচারণার কারণে ‘আমাকে কেউ পছন্দ করে না’। বস্তুত, গত সাড়ে তিন-চার বছরে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন কার্যত একই জায়গায় রয়েছে। ৪০ শতাংশের মতো মানুষ তার কাজে সন্তুষ্ট, ৫২ শতাংশ মানুষ তার বিরোধী। প্রধানত শ্বেতকায় ও কৃষিনির্ভর অঞ্চলগুলোতেই তার সমর্থন সীমাবদ্ধ। শহর ও শহরতলির নারী ভোটার ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে তার প্রতি প্রবল বিতৃষ্ণা রয়েছে। জিততে হলে তাকে এই ভোটারদের একাংশকে নিজের পক্ষে পেতে হবে। কিন্তু কনভেনশনের কোনো পর্যায়েই এদের পক্ষে টানার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি। পক্ষান্তরে, নিজের শ্বেতকায় সমর্থকদের খুশি করবে, এমন বক্তব্যেই তাকে আগ্রহী দেখা গেছে।

আমেরিকার সামনে এই মুহূর্তে প্রধান সমস্যা তিনটি—বল্গাহীন করোনাভাইরাস, অর্থনীতির মন্দাবস্থা ও দেশজুড়ে পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আফ্রিকান-আমেরিকানদের তীব্র ক্ষোভ। আমেরিকায় ইতিমধ্যে করোনার কারণে ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এখনো প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। রিপাবলিকানরা করোনাভাইরাসকে কার্যত একটি ‘বিগত সমস্যা’ হিসেবেই উপস্থাপন করে।

ট্রাম্প ঘোষণা করেন, এ বছর নাগাদই করোনার টিকা আবিষ্কৃত হবে এবং ‘আমরা তাকে গুঁড়িয়ে দেব’। অর্থনীতি প্রশ্নে বলা হয়, ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অর্থনীতি গড়েছেন। ক্ষমতায় ফিরে এলে আগের চেয়েও শক্তিশালী অর্থনীতি গড়বেন তিনি। বর্ণ-সংশ্লিষ্ট সমস্যাটিও পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া হয়। উল্টো তিনি দাবি করেন, আফ্রিকান-আমেরিকানদের স্বার্থ রক্ষায় প্রেসিডেন্ট লিংকনের পর তার মতো এত কাজ আর কেউ করেননি।