পুতিনের মেয়ের শরীরে অ্যান্টিবডি

প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২০, ১৫:১২

সাহস ডেস্ক

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমার পুতিন বলেছেন, ‘আজ আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত স্পষ্ট যে এই টিকাটি একটি স্থিতিশীল প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে এবং আমার মেয়ের মতো অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এটি ক্ষতিকর নয়। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমার মেয়ে ভালো আছে।’

রশিয়া ২৪ নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একথা বলেন পুতিন।

পুতিন বলেন, ‘তার মেয়ের টিকা নেওয়ার পর প্রথম দিন তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছিল আর দ্বিতীয় দিন তা ৩৭ ডিগ্রির কিছুটা বেশি। ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর তাপমাত্রা সামান্য বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।’

পুতিন তার সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, রাশিয়ার তৈরি আরেকটি কোভিড-১৯ টিকা সেপ্টেম্বর মাসে প্রস্তুত হয়ে যাবে।

গত ১১ আগস্ট ২ মাসের কম সময়ে মানব শরীরে পরীক্ষার পরই করোনার প্রথম টিকার ঘোষণা করেন পুতিন৷ তিনি জানান, স্পুটনিক-ভি টিকাটি সব প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে৷ ১২ আগস্ট থেকে টিকা উৎপাদন শুরু করে দেশটি।

মস্কোর দাবি, বিশ্বের প্রথম স্যাটেলাইটের নামে নামকরণ করা টিকাটি বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে তারা অনুমোদন দিয়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ২০টি দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে মোট ১০০ কোটি ডোজ টিকার আবেদন করেছে।

তবে টিকা নিয়ে পরীক্ষার ফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷ ফলে টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন ফের টিকাটির প্রশংসা করে বলেছেন, এটি কার্যকর।

করোনা ভ্যাকসিন কবে আসছে তাই নিয়ে যখন দুশ্চিন্তায় গোটা বিশ্ব, তখনই বিশ্বের প্রথম টিকার অনুমোদন দিয়ে বাজিমাত করে রাশিয়া। ১১ আগস্ট প্রেসিডেন্ট জানান, তার স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই টিকাটি অনুমোদন দিয়েছে।

পুতিনের দাবি, তার দেশই প্রথম করোনার টিকা তৈরি করেছে। রাশিয়া যে টিকা তৈরি করেছে, তা স্থায়ী বা টেকসই প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম বলেও দাবি করেন পুতিন। এই টিকা যৌথভাবে তৈরি করেছে রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এই টিকা রাশিয়ার সরকারি নিবন্ধন পেয়ে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার প্রথম ও দ্বিতীয় পরীক্ষায় মূলত এর স্বল্পমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হয়। এই কারণে এই দুই ধাপে কয়েক শ মানুষের শরীরে টিকা প্রয়োগ করা হয়। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সাধারণত হাজার হাজার মানুষের ওপর চালাতে হয়। এ ক্ষেত্রে টিকার দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং রোগে আক্রান্ত-অনাক্রান্তের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। এই ধাপের পরীক্ষার পরই কার্যত একটি টিকার পূর্ণ সক্ষমতা ও নিরাপদ কি না, তা বোঝা যায়। এই ধাপেই বোঝা যাবে যে কোনো নির্দিষ্ট টিকা কোভিড-১৯ রোগ প্রতিহত করতে পারে কি না। এ কারণেই পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়ার টিকাটি তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে অনুমোদন পেতে হলে এ ধাপ সম্পন্ন করা প্রয়োজন। রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, টিকাটি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে স্থিতিশীল প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির প্রমাণ দিয়েছে।

গত মঙ্গলবার টিকাটির প্রস্তুতকারক গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট করোনভাইরাস ড্রাগের রেজিস্ট্রেশন–পরবর্তী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালনা করার অনুমতি পেয়েছে। রাশিয়ার বারবার দাবি করা সত্ত্বেও পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমে একে অনিরাপদ ও অকার্যকর বলা হচ্ছে।

রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাস্কো বলেন, বিদেশি সমালোচনা সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ভয় থেকে সৃষ্ট তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

স্পুটনিক নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার সময় সংক্ষিপ্ত করার আদেশ দেন। এর মধ্যে করোনার টিকার পরীক্ষার বিষয়টিও ছিল। শুরুতে গত ১৭ জুন টিকাটি ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে অর্ধেককে তরল টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয় আর বাকি অর্ধেককে দ্রবণীয় পাউডার হিসেবে টিকাটি দেওয়া হয়। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে প্রতিরোধী সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার শিল্পমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমরা টিকাটির ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য সময় গুনছি।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরে জনগণের বড় অংশের মধ্যে টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির সরকার এমন তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ দেশটির তাস সংবাদ সংস্থাকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি মাসে তাঁরা কয়েক লাখ টিকার ডোজ তৈরি করবেন বলে আশা করছেন।

সূত্র: স্পুটনিক নিউজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত