শব্দ মুছে 'গণমাধ্যমের স্বাধীনতা' রক্ষায় প্রতিবাদ

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৯, ১২:২৮

সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করে নতুন একটি আইন প্রণয়ন করার প্রতিবাদে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্র গুলো প্রথম পাতার শব্দ মুছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সোমবার (২১ অক্টোবর) অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সকল দৈনিক পত্রিকা একই ভাবে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানায়।

এদিন সকল পত্রিকা তাদের প্রথম পাতার শব্দ মুছে দিয়ে শুধুমাত্র 'সিক্রেট' লেখা একটি সিল প্রকাশ করেছে প্রথম পাতায়।

অস্ট্রেলিয়া সরকারের দাবি, তারা বাক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পক্ষে। তবে সরকারের মন্তব্য 'কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়'। এদিকে নতুন এই আইনের ব্যাপারে দেশটির সাংবাদিকরা বলছে, নতুন এই আইনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে এবং অস্ট্রেলিয়ার 'গোপনীয়তার সংস্কৃতি' তৈরী হয়েছে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, গত জুনে পুলিশ অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে (এবিসি) এবং নিউজ কর্প অস্ট্রেলিয়ার এক সাংবাদিকের বাড়িতে অভিযান চালালে তা নিয়ে কঠোর সমালোচনা হয়।

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করেছে, হুইসেলব্লোয়ার বা সতর্কতাকারী ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়া গোপনীয় তথ্য পেয়েছিল তারা। এর মধ্যে একটি ছিল যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য। আরেকটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকদের ওপর সরকারি সংস্থার গুপ্তচরবৃত্তির চেষ্টার অভিযোগ নিয়ে।

এদিকে, সংবাদপত্রগুলোর সাথে এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছে বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল, রেডিও ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যম।

মিকাইল মিলার, এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান নিউজ কর্প অস্ট্রেলিয়া, এক টুইট বার্তায় #righttoknow লিখে জানিয়েছেন, "তারা আমার কাছ থেকে কী লুকানোর চেষ্টা করছে?"

তিনি একটি ছবি পোস্ট করে আরও লিখেছেন, "সাংবাদিকেদের প্রতিবেদনের ওপর প্রতিবার সরকার নতুন নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। অস্ট্রেলিয়াবাসীদের জিজ্ঞেস করা উচিত “তারা আমার কাছ থেকে কী লুকাতে চায়?” অস্ট্রেলিয়ার সরকারের ক্রমবর্ধমান গোপনীয়তার বিরুদ্ধে কেন আমাকে দাঁড়াতে হচ্ছে?"

দ্য সিডনী মর্নিং হেরাল্ড পত্রিকার লিসা ডেভিস টুইট করেছেন, 'এটা আমাদের কোনো কেম্পেইন নয়; বরং এটা অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রের জন্য।'

এবিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড অ্যান্ডারসন বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গোপনীয়তাপূর্ণ গণতন্ত্রের দেশ হওয়ার ঝুঁকিতে অস্ট্রেলিয়া।

প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার গণতন্ত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার গুরুত্ব অনেক। তবে আইনের শাসন ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘সেটা আমার বা কোনো সাংবাদিক বা যে কারও জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যম জগতে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মানসিকতা দেখা যায়। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে, এমন কোনো আইন করলেও তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পৃথকভাবে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। বাক্‌স্বাধীনতার পক্ষ অবলম্বন করে প্রকাশ করতে দেখা যায় বিভিন্ন নিবন্ধ। এমনকি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারের সম্মিলিত প্রতিবাদের নজিরও কম নয়। কিন্তু শীর্ষ গণমাধ্যমগুলোকে এক জোট হয়ে নিজেদের পত্রিকা মারফতই এর প্রতিবাদ জানানোর নজির খুব একটা নেই।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত