‘ভারতকে বাঁধতে পারে হিন্দিই’
এক রাষ্ট্র, এক ভাষা চান অমিত শাহ
প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:৪৫
'এক রাষ্ট্র, এক ভাষা। আর সেই ভাষা হোক হিন্দি' এমন মন্তব্য করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
অমিত শাহ বলেছেন, 'ভারতে বহু ভাষা রয়েছে। প্রত্যেকটির গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু দেশের একটি ভাষা থাকা প্রয়োজন, যাকে বিশ্ব স্বীকৃতি দেবে ভারতীয় ভাষা হিসেবে। যদি কোনও ভাষা দেশকে বাঁধতে পারে, তা হিন্দি।'
অমিত শাহের এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে ভারত জুড়েই। জুন মাসে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়ায় হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ নিয়ে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল, এ দিনও সেই ছবি দেখা গিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ডিএমকে সভাপতি এম কে স্ট্যালিন, পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী, কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী থেকে শুরু করে অনেক নেতাই একই সুরে অমিত শাহের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন।
এম কে স্ট্যালিন বলেছেন, 'নরেন্দ্র মোদীর উচিত অমিত শাহের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেওয়া। না হলে ডিএমকে আর একটি ভাষা আন্দোলনের প্রস্তুতি নেবে। এটা ইন্ডিয়া না কি হিন্দিয়া?'
টুইটারে মমতা লিখেছেন, 'আমাদের উচিত সব ভাষা, সংস্কৃতিকে সমান ভাবে সম্মান জানানো। আমরা অনেক ভাষাই শিখতে পারি, কিন্তু মাতৃভাষাকে ভোলা উচিত নয়।'
সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ দক্ষিণ ভারতে। রাস্তায় নেমেছে কর্নাটকের একাধিক সংগঠন। এর মধ্যেই স্ট্যালিন মন্তব্য করেছেন, 'তামিলনাড়ুর মানুষের রক্তে হিন্দি নেই। রেল, পোস্ট অফিসে নিয়োগ পরীক্ষায় হিন্দি বাধ্যতামূলক করার প্রশ্নেও আমরা সরব হয়েছিলাম।' কুমারস্বামী টুইট করে বলেছেন, 'আজ দেশ জুড়ে হিন্দি দিবস পালন করছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারি ভাষা হিসেবে কবে হিন্দির সঙ্গে কন্নড় ভাষা দিবসও পালিত হবে?' কংগ্রেস বলেছে, 'ত্রি-ভাষা তত্ত্বের সঙ্গে সংঘাতে যাওয়া ঠিক নয়। ভাষা আবেগের বিষয়।' সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমের প্রশ্ন, 'গুজরাট হাইকোর্ট যখন বলেছিল, গুজরাটিদের জন্য হিন্দি বিদেশি ভাষা, তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ কেন প্রতিবাদ করেননি? তারা এখন হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।'
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সব আরএসএসের 'হিন্দু-হিন্দি-হিন্দুস্তান' নীতিরই অংশ। সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলেন, 'ভাষাপ্রেম যে কী, তা অমিত শাহের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। দেশকে হিন্দি দিয়ে বাঁধার কথা বলছেন, কিন্তু আসলে তা বিভাজনের দিকেই যাবে।' আর ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য বলছে, দেশে ১০ জনের মধ্যে ৬ জনেরই মাতৃভাষা হিন্দি নয়।