রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রাম গুঁড়িয়ে সরকারি স্থাপনা করেছে মিয়ানমার সরকার

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:১৩ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:১১

রাখাইনে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে পুলিশ ব্যারাক, সরকারি ভবন ও শরণার্থীশিবির গড়ে তুলেছে মিয়ানমার সরকার। এসব এলাকাকে পুরোপুরি সরকারি অবকাঠামোতে রূপান্তর করা হয়েছে। মিয়ানমারে এক সরকারি সফরে গিয়ে বিবিসির সাংবাদিকের চোখে বিষয়টি ধরা পড়েছে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিবিসি চারটি জায়গা দেখতে পেয়েছে, যেখানে স্থাপনাগুলো তৈরি করা হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, জায়গাগুলোতে আগে রোহিঙ্গাদের বাস ছিল। তবে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ রাখাইন রাজ্যের ওই গ্রামগুলোতে ভবন নির্মাণের কথা অস্বীকার করেছেন।

বিবিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেদক জোনাথন হেড জানান, রোহিঙ্গাদের অন্তত চারটি গ্রামে নতুন নিরাপত্তা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে, যেসব জায়গায় এক সময় রোহিঙ্গাদের গ্রাম থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

তিনি জানান, রাখাইনে বহিরাগত কাউকে ঢুকার অনুমতি দেয়া হয় না। তাদের ওই দলটিকে ব্যাপক সামরিক প্রহরার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। পুলিশের অনুমতি ছাড়া কারো সাক্ষাৎকার বা কোনো ভিডিও করার সুযোগ ছিল না।

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইনের হ্লা পো কং ট্রানজিট ক্যাম্পে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ তদের নিয়ে গিয়েছিল। মিয়ানমার সরকারের ভাষ্যমতে সেখানে ২৫ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে সহিংসতার পর দুইটি গুঁড়িয়ে দেওয়া রোহিঙ্গা গ্রাম হও রি তু লার এবং থার জেই কোনে’র পাশে ওই ক্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে কেউ ফিরলে এই ক্যাম্পে তাদের দুই মাস রেখে পরে স্থায়ী আবাসনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে শেষ হওয়া এই ক্যাম্পের এখন জঘন্য অবস্থা। গণশৌচাগারগুলো ভেঙে পড়েছে। ২০১৭ সালের সংঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাউ রি তু লার এবং থার জায় কোন এই দুই গ্রামে এটি তৈরি করা হয়েছে।

জোনাথানের ভাষায়, যখন আমি ক্যাম্প প্রশাসক সো শি অংয়ের কাছে জানতে চাইলাম তারা কেন গ্রামগুলো ধ্বংস করেছে, তখন তিনি তা অস্বীকার করে জানান, কোনো কিছুই ধ্বংস করা হয়নি। কিন্তু যখন আমি স্যাটেলাইট চিত্রে প্রদর্শিত ছবিগুলোর দিকে তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করি, তখন তিনি বলেন, তিনি সবে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাই এর উত্তর তার জানা নেই।

বিবিসির সাংবাদিক জানান, মূল শহর মংদাউয়ের ঠিক বাইরে অবস্থিত মিও থু গি এ আট হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারি সফরে এসে মিও থু গি গ্রামে তিনি দেখেছিলেন অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে বহুতল ভবনগুলো অক্ষত ছিল। রাখাইন গ্রামটিকে ঘিরে প্রচুর গাছ ছিল। এবার গিয়ে দেখেন যেখানে মিও থু গি ছিল, সেখানে এখন বড় আকারে সরকারি ও পুলিশ কমপ্লেক্স। গাছপালাও নেই।