ছবি মিলেছে নিখোঁজ বিক্রমের, যোগাযোগের চেষ্টা

প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৬:২৩

চাঁদের পিঠে নিখোঁজ হয়নি ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর ঠিক কোন জায়গায় সে নেমেছে, কক্ষপথে থাকা অরবিটার তা জানতে পেরেছে। এমনকি ছবিও তুলে ফেলেছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা ছোঁয়ানো ল্যান্ডার বিক্রমের। সবগুলিই ‘থার্মাল ইমেজ’। সেই সব ছবিই অরবিটার বেঙ্গালুরুতে ইসরোর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।

রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) এই সংবাদ জানান ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত বিক্রমের কাছ থেকে কোনও রেডিয়ো সিগনাল অরবিটারের কাছে পৌঁছয়নি। কিন্তু সে কোথায় নেমেছে, তার খবর যখন পাওয়া গিয়েছে, তখন আশা, শীঘ্রই বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।

এখন বুঝে নেওয়া দরকার, থার্মাল ইমেজিং বলতে কী বোঝায়? কোনও ক্যামেরার মাধ্যমে থার্মাল ইমেজিং তখনই সম্ভব হয় যদি কোনও বস্তু থেকে বেরিয়ে আসা ইনফ্রারেড আলোক তরঙ্গের বিকিরণের ভিত্তিতে কোনও ছবি তোলা হয়। এই ইনফ্রারেড আলোক তরঙ্গের বিকিরণ আমাদের শরীর থেকেও প্রতি মুহূর্তে বেরিয়ে আসছে। রাতে নাইট ভিশন ক্যামেরায আমাদের ছবি তোলা হলেও সেই থার্মাল ইমেজিং পদ্ধতিরই সাহায্য নেওয়া হয়।

মোহনপুরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার-কলকাতা)-এর বিশিষ্ট সৌরপদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিব্যেন্দু নন্দী জানান, সূর্যের পিঠ থেকে বেরিয়ে আসা আলো প্রতি মুহূর্তেই এসে আছড়ে পড়ছে চাঁদ, পৃথিবী-সহ এই সৌরমণ্ডলের সব গ্রহে উপগ্রহেই। যে গ্রহের বায়ুমণ্ডল রয়েছে সেখানে সেই সূর্যের আলোর কিছুটা অংশ শোষিত হয়। কিন্তু চাঁদের কোনও বায়ুমন্ডল নেই তাই সূর্যের আলো, সূর্য থেকে বেরিয়ে আসা সব ধরনের বিকিরণ পুরোপুরিই এসে আছড়ে পরে চাঁদের পিঠে।

তিনি আরও জানান, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা ছোঁয়ানো বিক্রমের গায়েও এসে পড়েছে সূর্যের আলো। তাতে বিক্রমের গা গরম হয়েছে। তার মানে তাপের সৃষ্টি হয়েছে। তাপ এক ধরনের শক্তি। শক্তির ধর্ম এক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে বদলে যাওয়া। তাই গা গরম হওয়া বিক্রমের সেই বাড়তি তাপশক্তি ইনফ্রারেড আলোকশক্তিতে বদলে গিয়েছে। তৈরি করেছে ইনফ্রারেড আলোক তরঙ্গ। সেই তরঙ্গের মাধ্যমেই চন্দ্রযান-২-এ থাকা অরবিটার থার্মাল ইমেজ নিয়েছে বিক্রমের।

ইসরোর ‘অ্যাস্ট্রোস্যাট মিশনের’ সায়েন্স অপারেশন বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলছেন, ‘কতটা সম্ভব তা নিয়ে আমার খুব স্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ বিক্রমের আকার এক মিটারের (৩ ফুট ৩ ইঞ্চি) বেশি নয়। অরবিটার এখন রয়েছে চাঁদের পিঠ থেকে ১০১ কিমি উঁচুতে। ওই উচ্চতা থেকে এক মিটার আকারের বিক্রমের ছবি ইনফ্রারেড আলোক তরঙ্গে কতটা নিখুঁত ও স্বচ্ছভাবে অরবিটার তুলতে পেরেছে তা জানতে ও বুঝতে আমাদের আরেকটু সময় লাগবে।

দীপঙ্কর বলেন, ওই উচ্চতা থেকে ওই রেজোলিউশনের ক্যামেরা দিয়ে ল্যান্ডার বিক্রমের চেহারার একটি বস্তুর ছবি তোলা  যেতে পারে। কিন্তু তাঁর গঠনগত খুঁটিনাটির সব কিছু সেই ক্যামেরায় ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।তাই বিক্রম অক্ষত শরীরে আছে কি না বা পুরোপুরি সচল আছে কি না থার্মাল ইমেজিং-এর মাধ্যমে তা বোঝা কিছুটা দুরূহ।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত