কাশ্মীরিদের লাঠি ও তার দিয়ে পেটানো হচ্ছে: বিবিসি

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৯, ১৪:৪৪

বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের অভিযানে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভারত শাসিত কাশ্মীরের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মারধর এবং নির্যাতনের অভিযোগ অনেকদিন আগে থেকেই। ভূক্তভোগী সেসব মানুষের জবানিতে সাম্প্রতিক সেই নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেছে বিবিসি।

শুক্রবার (৩০ আগস্ট) বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরিদের লাঠি ও তার দিয়ে পেটানো হচ্ছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের সেনাবাহিনী এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও প্রমাণসাপেক্ষ নয়’ বলে দাবি করেছে। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাশ্মীরের যে পরিস্থিতি উঠে এসেছে তাতে সেনাবাহিনীর এমন দাবির কোনো ভিত্তিও থাকে না।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব আহতদের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টিরও বেশি গ্রামে রাতের আঁধারে ভারতীয় সেনাদের অভিযানে গ্রামগুলোতে একই রকমভাবে ব্যাপক মারধর ও জুলুম নির্যাতন চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব আহতদের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে ওই গ্রামগুলোর বহু বাসিন্দার গায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

অপর একটি গ্রামের ২০ বছর বয়সী এক যুবক জানান, ভারতীয় সেনারা তাকে সশস্ত্র যোদ্ধাদের সম্পর্কে গোপনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই যুবককে এমনভাবে পেটানো হয়েছে যে এখন তিনি পিঠে ভর করে শুয়ে থাকতেও পারছেন না। এমন চলতে থাকলে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। তারা আমাদের এমনভাবে মেরেছে, যেন আমরা পশু। তারা আমাদের মানুষ মনে করে না।

অন্য একটি গ্রামের একজনকে বন্দুক, তার, লাঠি ও রড দিয়ে পেটায় ১৫-১৬ জন ভারতীয় সেনাসদস্য। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি আধমরা হয়ে পড়েন।

আরেকটি গ্রামের এক যুবক বলেন, তারা আমার শরীরের সব জায়গায় পিটিয়েছে। আমাদের লাথি মেরেছে, লাঠি ও তার দিয়ে পিটিয়েছে, বিদ্যুতের শক দিয়েছে। পায়ের পেছন দিকে পিটিয়েছে। এমনকি পেটানোর সময় মুখে কাদামাটি পুরে দিয়েছে, যাতে আমরা চিৎকার করতে না পারি।

বিবিসিকে দেওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করা এমন ৩৭টি অভিযোগের ২০টিই ছিল ভিত্তিহীন। আর ১৫টির তদন্ত করা হলেও মাত্র তিনটি ঘটনায় অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হয়।

কাশ্মীর অঞ্চলকে ধারণা করা হয় এমন একটি এলাকা হিসেবে যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সামরিক সদস্যদের অবস্থান রয়েছে। অবশ্য ধারণা নয়, সেখানে প্রতি ৮ জনের জন্য একজন সেনা মোতায়েন রয়েছে। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে ও পরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে ।

কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, অ্যক্টিভিস্টসহ প্রায় তিন হাজারের বেশি মানুষকে আটকও করা হয়েছে। কাশ্মীরের কারাগারগুলোতে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় আটক অনেককে রাজ্যের বাইরের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত