এবারে কি গদি নড়ছে এরদোগানের!

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০১৯, ১২:৪০

সাহস ডেস্ক

তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল। সেই শহর থেকেই রাজনৈতিক জীবন শুরু করেছিলেন এই সময়ের আলোচিত-সমালোচিত রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। নিজের রাজনৈতিক দল একেপি প্রতিষ্ঠার আগেই ১৯৯৪ সালে প্রথমবারের মত ইস্তাম্বুলের ক্ষমতার স্বাদ পান তিনি। একেপি প্রতিষ্ঠা করেন ২০০১ সালে।

তিলে তিলে এরদোগান তৈরী করেছেন তার রাজনৈতিক দুর্গ। ২০০২ সালের পরথেকেই তুরস্কের ক্ষমতায় আছে এরদোগানের রাজনৈতিক দল একেপি। কিন্তু এই জোয়ারে ভাটা লাগতে শুরু করেছে।

যেই ইস্তাম্বুল থেকে এরদোগান ও একেপি'র উঠে আসা সেই দুর্গেই ক্ষমতা হারালো তার রাজনৈতিক দল। আর ইস্তানবুল শহরের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল তুরস্কের গণতন্ত্র ও প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যতের উপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷ বিরোধী দলের প্রার্থীর জয় আন্তর্জাতিকভাবেই আলোড়ন তুলছে৷

মাত্র তিন মাস আগেই ইস্তাম্বুলে হওয়া মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন বিরোধী পার্টি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার রিপাবলিকান পিপলস পার্টির এক্রেম ইমামোলু। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল পছন্দ না হওয়ায় আবারোও নির্বাচন দেন এরদোগান। নতুন দেওয়া নির্বাচনে আরোও বড় ভরাডুবির সম্মুখীন হলো এরদোগানের একেপি। আর এতেই তুরস্কের শাসনে একেপি'র পতনের শুরু বলছে বিশ্লেষকেরা।  রাজনৈতিক জীবনে সবচেয়ে বড় এই পরাজয়ের ধাক্কা এরদোগান সামলাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনা শুরু হয়ে গেছে৷

এরদোগান প্রায়ই বলতেন, "ইস্তানবুলে জয় হলে তুরস্কেও জয় হবে৷"' প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের এই শহরে তুরস্কের প্রায় এক পঞ্চমাংশ মানুষের বসবাস৷ ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রাণকেন্দ্র ইস্তানবুল৷ আর এই ইস্তাম্বুলেই ১৬ বছরের ক্ষমতার ধ্বস নামলো কিছুটা হলেও।


জয়ের পর ইমামোলু বলেন, "আজ ১ কোটি ৬০ লক্ষ বাসিন্দা নতুন করে গণতন্ত্রের প্রতি আমাদের আস্থা, বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের আস্থা দেখিয়েছেন৷'' আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা না এলেও এরদোগানের একেপি দলের প্রার্থী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম পরাজয় মেনে নিয়ে ইমামোলুকে অভিনন্দনও জানান৷ স্বয়ং এরদোগানও এক টুইট বার্তায় নতুন মেয়রকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷


গত ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলগুলি এরদোগানের জয়যাত্রা থামাতে পারেন নি৷ তাই ইমামোলুর এই সাফল্য গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে৷ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য অভিনন্দনবার্তা পাচ্ছেন তিনি৷ নির্বাচনি প্রচারে তিনি সরাসরি এরদোগানের সমালোচনা করেননি৷ তার বদলে শহরের সমস্যাগুলির সমাধানের লক্ষ্যে সব শ্রেণির মানুষের সমর্থন চেয়েছিলেন৷ বেহিসাবি ব্যয় ও দুর্নীতি দূর করে তিনি আরও স্বচ্ছ এক প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ 

ক্ষমতাসীন একেপি দলের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ইস্তানবুলে দলের পরাজয়ের ফলে প্রেসিডেন্ট এরদোগান ঘর সামলাতে মন্ত্রিসভায় দ্রুত রদবদল করতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে৷ এমনকি ২০২৩ সালের জন্য নির্ধারিত সাধারণ নির্বাচনের তারিখও তিনি এগিয়ে আনতে পারেন বলে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ ১৬ বছর আগে ক্ষমতায় এসে এরদোগান দেশের অর্থনীতিকে বেশ চাঙ্গা করতে পারলেও সাম্প্রতিক কালে নানা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকটের কারণে তুরস্কের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে৷ অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব পড়ছে মানুষের জীবনযাত্রার উপর৷ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে বার বার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন এরদোগান৷ ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বিনিয়োগের মাত্রাও কমছে৷ 

সমালোচকদের মতে, ক্ষমতাকেন্দ্রের উপর নিজের কর্তৃত্ব জোরালো করার প্রক্রিয়ায় বিচার ব্যবস্থা, সংবাদ মাধ্যম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানকে কমজোর করে এরদোগান গণতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করছেন৷

সাহস২৪.কম/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত