জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের জন্মদিন আজ

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০১৯, ১৮:২৩

সাহস ডেস্ক

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের জন্মদিন আজ। ১৯৪৪ সালের আজকের এই দিনে কোরিয়ার উত্তর জাংজিয়ং-এর ইয়ামসিয়ংয়ে জন্মগ্রহণ করেন বান কি মুন৷ জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।

বান কি মুন ছিলেন দ্বিতীয় এশিয়ান যিনি জাতিসংঘ মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে এশিয়া থেকে মহাসচিব নির্বাচিত হন বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার) উ থান্ট। 

বান কি মুন ১৯৭০ সালে সিউল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ তারপর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অফ গভর্নমেন্ট থেকে ১৯৮৫ সালে লোকপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন৷ কোরিয়ান ভাষার পাশাপাশি তিনি ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন৷ স্কুলে পড়ার সময় ১৯৬০ সালের প্রথমদিকে আমেরিকান রেডক্রস আয়োজিত একটি ইংরেজি ভাষা প্রতিযোগিতায় জয়ী হন বান কি মুন৷ সেই সুবাদে তৎকালীন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ কেনেডির সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন তার বান কি মুন৷ এই সাক্ষাতের পরই বান কি মুন কূটনীতিক হওয়ার ইচ্ছা মনে ধারণ করেন।

কূটনীতিক হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা বাস্তবায়নের সুযোগ পেয়ে যান ১৯৭০ সালে। দক্ষিন কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন মুন৷ বিদেশে তার প্রথম নিয়োগ হয় নয়াদিল্লীতে৷ তারপরই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র দফতরে জাতিসংঘ বিভাগে কাজ শুরু করেন৷ নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের দক্ষিণ কোরিয়ার স্থায়ী পর্যবেক্ষকের ফার্স্ট সেক্রেটারি পার্ক চুং হি গুপ্তহত্যার শিকার হলে বান কি মুন ঐ পদে যোগদান করেন৷ তার সময়কালে ১৯৯১ সালে ১৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য হয়৷ কাজের পুরস্কার হিসেবে বান কি মুন জাতিসংঘ বিভাগের পরিচালক পদে নিয়োগ পান৷ রিপাবলিক অফ কোরিয়ার ওয়াশিংটন ডিসির এমবাসিতে তিনি দু’বার নিয়োগপ্রাপ্ত হন৷ ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাজ্য বিষয়ক মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেন৷ ১৯৯৫ সালে বান কি মুন পলিসি প্ল্যানিং অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের ডেপুটি মিনিস্টার পদে উন্নীত হন৷ তার পরের বছরই তিনি রাষ্ট্রপতির ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন৷

বান কি মুন দুই কোরিয়ার আন্তঃসম্পর্ক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে চেষ্টা করেছেন৷ ১৯৯২ সালে তিনি সাউথ-নর্থ জয়েন্ট নিউক্লিয়ার কন্ট্রোল কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে বান কি মুন সাউথ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হন৷ মন্ত্রীত্ব থাকাকালে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে নর্থ কোরিয়ান নিউক্লিয়ার ইস্যু সমাধানে কূটনীতিক পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রাখেন বান কি মুন৷ এ সম্পর্কে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত সিক্স-পার্টি আলোচনা অনুষ্ঠানেও বান কি মুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন৷ বান কি মুন ১ নভেম্বর ২০০৬ পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন৷

কফি আনানের পর জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে বান কি মুন তার প্রার্থিতা ঘোষণা করেন ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব নির্বাচনের জন্য ইউএন সেক্রেটারি কাউন্সিলের চারবার ভোটাভুটি হয়৷ প্রতিটি ভোটাভুটিতেই বান কি মুন ছিলেন সকলের পছন্দের শীর্ষে৷

২ অক্টোবরের ভোটাভুটিতে বান কি মুন তার পক্ষে ১৪টি ভোট পান৷ তার সম্পর্কে একমাত্র জাপানি ডেলিগেশনই পুরোপুরি একমত হয়নি৷ তাই জাপান ভোটদানে বিরত থাকে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বানই একমাত্র প্রার্থী ছিলেন যাকে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য দেশের ভেটোর মুখোমুখি হতে হয়নি৷ তিনি ছাড়া বাকি পাঁচজন প্রার্থীর প্রত্যেকেই কোন না কোন স্থায়ী সদস্য দেশের ভেটো পেয়েছেন৷ জাতিসংঘের কাউন্সিলের স্থায়ী সদস্য দেশ চীনের প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বান কি মুনের প্রার্থীতার ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন৷ ৯ অক্টোবর নিরাপত্তা পরিষদ বান কি মুনকে প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে৷ তারপর ১৩ অক্টোবরে সাধারণ পরিষদের ১৯২ সদস্য রাষ্ট্রই বান কি মুনের মহাসচিব হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি মেনে নিলে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৬ বান কি মুন জাতিসংঘের অষ্টম মহাসচিব হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন৷

জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে বান কি মুন ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার প্রথম দফার মেয়াদকাল শেষ হলে, পরবর্তীতে কোনরূপ বিরোধিতা না আসায় ২০১১ সালের ২১ জুন বান কি মুন দ্বিতীয় মেয়াদে জাতিসংঘের মহাসচিবরূপে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর বান কি মুনের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়।

বর্তমানে তার উত্তরসূরি হিসেবে কাজ করছেন আন্তেনিও গুতেরেস।

সাহস২৪.কম/জয়

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত