‘শান্তি উদ্যোগ’, তেহরান যাচ্ছেন আবে

প্রকাশ : ১১ জুন ২০১৯, ১৭:০৫

সাহস ডেস্ক

আগামীকাল (১২ জুন) দুই দিনের সফরে ইরান যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজু আবে। এ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে সৃষ্টি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। গত ৪১ বছরের মধ্যে জাপানের কোনো ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী ইরানে যাচ্ছেন বলে বিশ্লেষকদের মনে প্রশ্ন জেগেছে- উপসাগরীয় অঞ্চলে এমন সংকটময় মুহূর্তে আবের সফর থেকে কী পেতে পারে খনিজসমৃদ্ধ দেশটি বা তাদের জনগণের প্রত্যাশাই বা কী?

এ কথা সবাই জানেন যে বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে সরে এসে একের পর এক নতুন করে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর অবরোধ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। শুধু তাই নয়- যেসব দেশ ইরান থেকে তেল কেনে তাদের ওপরও খড়গহস্ত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর জাপান হচ্ছে ইরানের প্রধান তেল আমদানিকারক দেশগুলোর অন্যতম।

এমন পরিস্থিতির মুখেই গত মাসে জাপান সফর করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে গিয়ে তিনি বলেছেন- ইরান চাইলে আলোচনায় বসতে রাজি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর তখনই প্রশ্ন উঠে- তাহলে কি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সংঘাত প্রশমনে মধ্যস্থতা করতে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে?

গতকাল (১০ জুন) দ্য জাপান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা  গত ৭ জুন বলেছেন, “আবের ইরান সফরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমানো এবং তা যেনো আরো খারাপ পরিস্থিতির দিকে না যায়।”

“সবাইকে অবাক করার মতো কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই” বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই শীর্ষ কর্মকর্তা।

একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বা কোনো বিশেষ বার্তা নিয়ে আবে ইরানে যাচ্ছেন না। কেননা, জাপান কোনো দেশেরই পক্ষ নিচ্ছে না।– এমনটিও জানানো হয় জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।

এদিকে, ইরানের গণমাধ্যমগুলো আবের দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরকে তাদের সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছে। ১৯৭৯ সালে দেশটিতে ইসলামী বিপ্লবের পর একজন শীর্ষ জাপানী নেতা হিসেবে আবে প্রথম ইরান সফর করতে যাচ্ছেন। দুই দিনের সফরের প্রথমদিন আবে ইরানের রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি এবং দ্বিতীয় দিন দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা আলি খামেনির সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানায় দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী দৈনিক তেহরান টাইমস।

ইরানের গণমাধ্যমে আবের সফরের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশিত হয়। মজলিসের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ কমিটির প্রধান হেশমাতুল্লাহ ফালাহাতপিশেহ বলেন, “আবের এই সফরের লক্ষ্য হলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো জোরদার করা। ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতা করার বিষয়টি নিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইরানে আসলেও তারা এখনো কোনো প্রস্তাব আমাদেরকে দেয়নি।”

সেই কমিটির একজন সদস্য আলাদিন বোরোউজেরদি একটি বার্তা সংস্থাকে বলেন, “চলমান উত্তেজনা প্রশমনে আবের মধ্যস্থতা করার বিষয়টি আসলে কল্পনা প্রসূত। এটি সত্য নয়।”

তার মতে আবের সফরের মূল উদ্দেশ্য হলো দুই দেশর সম্পর্ককে আরো জোরদার করা।

আবের ইরান সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ আলাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এমিরিটাস অধ্যাপক নাদের ইন্তেসারের মন্তব্য, “জাপানি প্রধানমন্ত্রীর সফরকে নিয়ে তেহরানের খুব প্রত্যাশা করা উচিত হবে না।”

এদিকে, ইরান সফরের দুদিন আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফোন করেন আবেকে। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা না গেলেও ইরানে এ নিয়ে খানিক হৈচৈও হয়। ইরানি রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সমাবেশে জানান, আসন্ন সফরকে ভণ্ডুল করতেই না কী নেতানিয়াহু ফোন করছিলেন। সেসময় তারা একটি স্বাধীন দেশের সরকার প্রধান হিসেবে আবেকে কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের সিদ্ধান্তে অটুট থাকার পরামর্শও দেওয়া হয়।

তবে আবের সফর ইরানিদের জন্যে কী সুফল নিয়ে আসবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো দুদিন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত