কাশ্মীর হামলা

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে ভারত

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১৪:৩৩

সাহস ডেস্ক

কাশ্মীরের পুলওয়ামারে আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ জওয়ান নিহত হওয়ার পর প্রতিবেশী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে ভারত। ইতিমধ্যে পাকিস্তানি পণ্য আমদানিতে ২০০ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এদিকে কাশ্মীরের পাঁচ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে দেয়া নিরাপত্তা প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

হামলার পর বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ধরতে কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর অবিরাম তল্লাশি চলছে। ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দেশটির এক মেজরসহ পাঁচ সেনা নিহত হয়েছেন।
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে বৃহস্পতিবার।

এদিন পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদের এক সদস্য বিস্ফোরকবোঝাই একটি ভ্যান আধাসামরিক বাহিনী আড়াই হাজার জওয়ানকে বহন করে নিয়ে যাওয়া গাড়িবহরে ঢুকিয়ে দিলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

হামলার পর চিরবৈরী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ আর ক্ষোভে উত্তাল ভারত। রবিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিহারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আপনাদের হৃদয়ে যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছে, তা আমার হৃদয়েও আছে।

এর মধ্যে ভারতজুড়ে হামলা ও হয়রানির শিকার হতে শুরু করেছেন কাশ্মীরি লোকজন। তাদের মারধর, দোকান ভাঙচুর ও ভাড়া বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার খবর শোনা গেছে। উত্তরাঞ্চরীয় শহর দেরাদুনে ছাত্রীদের হোস্টেলে হামলার চেষ্টার ঘটনাও ঘটেছে। যদিও এমনটি যাতে আর না ঘটে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

কাশ্মীরের মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। রবিবার সেখানকার বাজার ও দোকানপাটেও লোকজনকে দেখা যায়নি। এদিন ভীতিপ্রদর্শন ও সহিংসতার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা হরতাল পালন করেন।

সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা অঞ্চলটিতে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর জওয়ানদের নামানো হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের গাড়ির আশপাশে বেসামরিক যান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া রয়েছে।

কাশ্মীরের কাছাকাছি জম্মুতে গত কয়েক দিনে কয়েক হাজার লোক আটকেপড়ায় ত্রাণশিবির বসানো হয়েছে। এ ছাড়া কাশ্মীরিদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে।

জম্মুতে ত্রাণশিবিরের স্বেচ্ছাসেবী মোহাম্মদ আকরাম বলেন, তিন হাজারেরও বেশি কাশ্মীরি মুসলমানকে আশ্রয় ও খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বিভিন্ন হোটেলে আটকেপড়া লোকজন এখানে আসছেন। কেউ কেউ রাতের বেলায় অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। মুম্বাইয়ের একটি ক্রিকেট ক্লাবের ঝোলানো পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ছবি ঢেকে দেয়া হয়েছে।

ক্লাবটির সভাপতি প্রেস ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালকে বলেন, হামলার প্রতিবাদেই এমনটি করা হয়েছে।

এ হামলার পর প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনা চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এর আগে ২০১৬ সালে সীমান্ত শহর উরিতে সেনাক্যাম্পে জইশ-ই-মোহাম্মদের হামলায় ১৯ জন নিহত হয়েছিলেন।

তখন পাকিস্তানি ভূখণ্ডে বিদ্রোহীদের ক্যাম্প ধ্বংস করে দিতে একদল সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিল ভারত। যেটিকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে এ নিয়ে একটি ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রও মুক্তি পেয়েছে।

পুলওয়ামার হামলার ঘটনায় প্রতিশোধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, এ নৃশংসতার জবাব দিতে নিরাপত্তা বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, অনেক বাগাড়ম্বরের পরও ভারতের হাতে সুযোগ একেবারে সীমিত।

কারণ পাকিস্তানি ভূখণ্ডের গভীরে সেনা পাঠালে সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়া, বিমান গুলি করে ভূপাতিত করা এবং সেনাদের ধরে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে দুই দেশেরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে সামরিক অঞ্চলের একটি হচ্ছে কাশ্মীর। ১৯৮৯ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়া বিদ্রোহী দমন করতে সেখানে পাঁচ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

সংঘর্ষে এ পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। কেবল ২০১৬ সাল থেকে ৬০০ জন নিহত হন। গত কয়েক দশকে এটিই সর্বোচ্চ নিহতের সংখ্যা।

সূত্র: গার্ডিয়ান ও এএফপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত