ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাটডাউনের কবলে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ১৭:০৮

সাহস ডেস্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে শাটডাউন চলছে। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অধীনে ২১ দিনের শাটডাউনের রেকর্ডকে শনিবার পেছনে ফেলেছে ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান শাটডাউন। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে সমঝোতা করতে ট্রাম্প ব্যর্থ হওয়ায় বেতন ছাড়াই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে মার্কিন সরকারের লাখ লাখ কর্মী।

মার্কিন অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর। তার আগেই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও সমঝোতার অভাবে কখনও কখনও মার্কিন কংগ্রেস তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনার তহবিল জোগান দেওয়া হয়। অস্থায়ী এই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুই কক্ষের অনুমোদনসহ প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে। বাকি এক চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে গত ২১ ডিসেম্বর নতুন অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য। তবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ প্রশ্নে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সৃষ্টি হয় ‘অচলাবস্থা’। বরাদ্দ কম পড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১৫টি কেন্দ্রীয় দফতরের মধ্যে ৯টিতে আংশিক শাটডাউন শুরু হয়।

শাটডাউনে এবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিমানবন্দরের কর্মী, এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক, এফবিআই কর্মীরাও। এই শাটডাউন চলমান থাকলে জননিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর সয়াবিনের দাম পড়ে যাওয়ার পর আমেরিকার বহু কৃষক ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে ক্ষতিপুরণ পাওয়ার আশা করেছিলেন। তবে শাটডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে আছে সেই ক্ষতিপুরণও।

মার্কিন অর্থনীতিবিদেরা বলছেন চলমান শাটডাউনের কারণে গত শুক্রবার পর্যন্তই ক্ষতি হয়েছে ৩৬০ কোটি মার্কিন ডলার। আরও দুই সপ্তাহ ধরে এই শাটডাউন অব্যাহত থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ ৬০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে এর চেয়েও কম পরিমাণ অর্থ চেয়েছিলেন ট্রাম্প।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই শাটডাউনকে মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির আরও একটি পরিহাস হিসেবে দেখে আসলেও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এই শাটডাউন অব্যাহত থাকলে বাকি বিশ্বের ওপরেও প্রভাব ফেলতে শুরু করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মীরা কাজে যোগ না দিলে  বন্দরে কন্টেইনারগুলো অসহায় পড়ে থাকলে রফতানিকারক বা ব্যবসায়ীরা এই শাটডাউনের প্রভাব টের পেতে শুরু করবেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, তারা ভিসা ও পাসপোর্ট ইস্যু অব্যাহত রাখবে। তবে তারা সতর্ক করে দিয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত তহবিলের সমর্থন অব্যাহত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এসব কার্যক্রম চালাতে পারবে তারা। এই প্রভাব শুরু হলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাসে কর্মরত লাখ লাখ কর্মীও শাটডাউনের কবলে পড়তে পারেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শাটডাউনের কারণে মার্কিন জিওলোজিক্যাল সার্ভের আট হাজার কর্মীর মধ্যে মাত্র ৭৫ জন এখন কাজ করতে পারছেন। ফলে বিশ্বের ভূতাত্ত্বিক ঘটনাগুলোর অন্যতম তথ্যদাতা এই প্রতিষ্ঠানটি ইন্দোনেশিয়ার সুনামির কোনও তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি।

এছাড়া আশঙ্কা করা হচ্ছে এই শাটডাউন মানবিক সহায়তা এবং বৈদেশিক সাহায্যের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় শঙ্কার বিষয় হলো এটি চলা অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব হবে ভয়াবহ।

মার্কিন ইতিহাসে এর আগে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি শাটডাউন চলেছিল ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬সালের জানুয়ারিতে। বাজেট নিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হাউস স্পিকার নিউট গিংরিচের মধ্যকার বিরোধের কারণে ২১দিন পর্যন্ত চলেছিল সেই শাটডাউন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত