কেনিয়ায় মৎস্যজীবীদের জীবনে বিরাট ভূমিকা পালন করছে কনডম

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ১৩:৫৫

সাহস ডেস্ক

কেনিয়ার বন্দর নগরী মোম্বাসাতে মৎস্যজীবীরা নিজেদের সুরক্ষার জন্যই নিয়মিত ব্যবহার করছে কনডম। এখানকার জেলেদের জীবনে বিরাট ভূমিকা পালন করছে কনডম।

তবে কনডম বলতেই লোকে যে ধরনের সুরক্ষার কথা ভেবে নেয়- বিষয়টা সেরকম নয়। মোম্বাসাতের এই মৎস্যজীবীরা নিয়মিত সমুদ্রে মাছ ধরতে যান, তাদের মোবাইলটিকে ওয়াটারপ্রুভ করার জন্যই কনডমের ব্যবহার হঠাৎ করে খুব বেড়ে গেছে জেলেদের মধ্যে।

আলি কিবওয়ানা মোয়াতেলা মোম্বাসার একজন জেলে। মাছ ধরতে যাকে প্রতি সপ্তাহেই ট্রলার নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে হয়। একটা কনডম হাতে নিয়ে তিনি দেখাচ্ছিলেন, প্রথমে ওটা খুলেই নিজের টি-শার্টে ঘষে ঘষে কনডমের গায়ের লুব্রিক্যান্ট বা পিচ্ছিল পদার্থটা তারা তুলে ফেলেন। তারপর সেই শুকনো কনডমটা দিয়ে জড়িয়ে ফেলেন নিজের মোবাইল ফোন। তারপর ওপরে বেলুনের মতো একটা গিঁট মেরে নিলেই, ব্যাস কেল্লা ফতে!

এভাবে কনডমে জড়িয়ে নিলেই আসলে জেলেদের মোবাইল ফোনগুলো ওয়াটারপ্রুফ হয়ে যায়। ভারত মহাসাগরের ঢেউ আছড়ে পড়লেও পানি ঢুকে মোবাইলগুলোর কোনও ক্ষতি হয় না।

আর সমুদ্রে কেনিয়ার জেলেদের সুরক্ষার যেহেতু কোনও গ্যারান্টি নেই, তাই মোবাইল ফোন চালু থাকলে উদ্ধারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগে ভীষণ সুবিধে হয়।

আলি মোয়াতেলা বলছিলেন, ‘আমাদের নৌকা প্রায়ই উল্টে যায়, কিন্তু কনডমে মোড়ানো থাকলে মোবাইলগুলোর অন্তত কোনও ক্ষতি হয় না। আসলে আমরা গরিব মানুষ, বিপদে মোবাইলগুলো বাঁচানোর এই সহজ ও শস্তা উপায়টা আমরাই মাথা খাটিয়ে বের করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘মোবাইল চালু থাকলে সাগর থেকেই ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়, একটা সময় ফিক্স করে আমাদের মাছ সোজা এনে সৈকতে খদ্দেরের কাছে বেচেও দিতে পারি। এমন কী নৌকাডুবি হলেও উদ্ধারকারী যানকেও মোবাইল থেকে সঠিক লোকেশন পাঠাতে পারি। কাজেই কনডমই আমাদের মোবাইলগুলো বাঁচিয়ে দিয়েছে!’

মোম্বাসারই আর একজন মৎস্যজীবী জাফারি মাতানো। বছরকয়েক আগে সমুদ্রে তাদের নৌকা উল্টে গেলে তার সঙ্গী আরও চারজন জেলে ডুবে গেলেও তিনি রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন। প্রায় দশ ঘন্টা ধরে সারারাত একটানা সাঁতরে তিনি কোনও ক্রমে পাড়ে এসে ওঠেন।

জাফারি বলছিলেন, ‘আমাদের নৌকো যখন উল্টে যায়, তখন গভীর রাত। সকাল এগারোটা নাগাদ আমাদের তীরে এসে ভেড়ার কথা ছিল। প্রচন্ড ঢেউয়ে নৌকার মোট ছজন জেলেই আমরা জলে পড়ে যাই।’

‘বিরাট ঢেউ ঠেলে আমি আর আমার এক বন্ধু যে কীভাবে সাঁতরে পাড়ে এসেছিলাম ভাবাই যায় না। আমাদের বাকি চারজন কিন্তু মারা গিয়েছিল। অথচ সেদিন মোবাইল ফোন চালু থাকলে ওরাও হয়তো বেঁচে যেতে পারত!’

কনডম এভাবে আজ জেলেদের জীবন বাঁচালেও এর কিন্তু অন্য একটা বিচিত্র সমস্যাও আছে।

আলি মোয়াতেলা জানাচ্ছেন, ‘অনেক সময় এই কনডোমগুলো ভুল করে আমাদের পকেটেই রয়ে যায়। আর বাড়িতে সেটা দেখে ফেললেই সর্বনাশ। এই কনডোম তোমার কাছে কেন, এগুলো দিয়ে কী কর এসব নিয়ে বউয়ের সঙ্গে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। যতই বলি এগুলো আমরা পরিনি, আমাদের পেশার কাজে লাগে- কে শোনে কার কথা! শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কনডম জড়িয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখানোর পর অবশেষে শান্তি!’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত