ম্যাকমাস্টারকে সরিয়ে আগ্রাসী নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিয়োগ দিলেন ট্রাম্প

প্রকাশ | ২৩ মার্চ ২০১৮, ১২:২৮

অনলাইন ডেস্ক

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জন বোল্টনকে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।

ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় হামলায় সমর্থন করেন বোল্টন। ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের কাছে সব ধরনের বিকল্প আছে, এমনটি নিশ্চিত করাই হবে আমার কাজ।

বিদায়ী ম্যাকমাস্টারকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক টুইটবার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন- তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। তিনি সবসময় আমাদের বন্ধু হয়ে থাকবেন। ৫৫ বছর বয়সী তিন তারকা জেনারেল ম্যাকমাস্টার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে এক বছর কাজ করে বিদায় নিচ্ছেন। হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেয়া সর্বশেষ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা হলেন জেনারেল ম্যাকমাস্টার।

গত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনকে বরখাস্ত করেছেন। তার জায়গায় সিআইএর পরিচালক মাইক পোম্পেওকে স্থলাভিষিক্ত করেছেন।

কয়েক দশক ধরে রিপাবলিকান দলে পররাষ্ট্রনীতিতে বলপ্রয়োগের পক্ষপাতি ৬৯ বছর বয়সী বোল্টন রোনাল্ড রিগান, জর্জ এইচডব্লিউ বুশ ও জর্জ ডব্লিউ বুশের প্রশাসনে কাজ করেছেন।

জুনিয়র বুশ তাকে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তখন কূটনীতিকরা ঘরোয়া আলাপে তাকে কর্কশ ও রুক্ষ চরিত্রের লোক হিসেবে সমালোচনা করেছিলেন।

উগ্র অতিরক্ষণশীল বোল্টন ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র মজুতের মিথ্যা অভিযোগ তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। পরে অভিযোগটি যে ভুয়া ছিল তা প্রমাণিত হয়েছে।

মুখের দুই পাশে প্রলম্বিত গোঁফের অধিকারী বোল্টন সর্বশেষ যখন সরকারের দায়িত্ব পালন করেন, তখন তার ভেতরে কোনো উদার দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায়নি।

তিনি ইরাকে আগ্রাসনের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। উত্তর কোরিয়া ও ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগের উসকানি দিয়ে পত্রিকায় নিবন্ধ লিখেছেন।

চলতি মাসের শুরুতে টুইটারে ট্রাম্প লিখেছিলেন- আমার কাছে এখনও কিছু লোক আছেন, যাদের আমি পরিবর্তন করতে চাই। তারা কখনও ছ্যাবলামি করে না।

ঠিক তখন থেকেই একে একে প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোহন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, ব্যক্তিগত আইনজীবী জন ডোড ও বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারকে সরিয়ে দিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের কাজে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বলে মনে হচ্ছে। তার ঘনিষ্ঠ সহকারীরা তাকে যে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, সেই মোতাবেক তিনি আরও চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো সতর্কবার্তা না দিয়ে সরাসরি হামলায় তাকে উৎসাহিত করছেন তার চারপাশের লোকজন।

ইরানকে নিয়ে বোল্টন ও ট্রাম্পের অবস্থান একই রকম। টিলারসনের বিদায়ের পর ইসলামিক রিপাবলিকটির সঙ্গে আরও সংঘাতময় সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে সাবেক জাতিসংঘ রাষ্ট্রদূতকে বাছাই করা অস্বাভাবিক মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক। ইরাক যুদ্ধকে বারবার বড় ধরনের ভুল বলে আখ্যা দিয়ে আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

নির্বাচনী প্রচারে ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো ধরনের হস্তক্ষেপে পক্ষপাতি ছিলেন না। কিন্তু বোল্টন হচ্ছেন সবসময় হস্তক্ষেপ কিংবা হামলার সমর্থক।

হোয়াইট হাউস বলেছে, ট্রাম্পের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে সরে গেছেন ম্যাকমাস্টার। তার এই সরে যাওয়া নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে গুজব চলছিল।
রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসেই গ্রাহাম বলেন, বোল্টনের নিয়োগে মার্কিন মিত্রদের জন্য সুখবর ও শত্রুদের জন্য দুঃসংবাদ নিয়ে এসেছে।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনস বলেন, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার প্রতি নতুন নিরাপত্তা উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি অতিরিক্ত আগ্রাসী। যেটি সত্যিকার অর্থে ভয়ঙ্কর।

সাহস২৪.কম/আল মনসুর