টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

স্টোকসের ব্যাটে চড়েই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২২, ১৮:০১

সাহস ডেস্ক

সেই বেন স্টোকসের ব্যাটে চড়েই চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড। যিনি ২০১৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের কাছে শেষ ওভারে চার ছক্কা হজম করায় হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি ইংল্যান্ডকে হারতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে। ছয় বছর পর সেই স্টোকসই ইংল্যান্ডকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানালেন। ওয়াসিমের বলটা মিডউইকেটে খেলেই জয়ের উল্লাসে মাতলেন তিনি। দলের বিপদের মুহূর্তে তার ব্যাটে চড়েই পাকিস্তানকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলো ইংল্যান্ড। প্রথম দল হিসেবে একইসঙ্গে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ট্রফি জিতল ইংলিশরা। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইংল্যান্ডকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিলেন এই বেন স্টোকসই। রবিবার (১৩ নভেম্বর) মেলবোর্নে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড।

এদিন টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। জবাবে বেন স্টোকসের ব্যাটে চড়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ৬ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড। ২০১২ সালে ১৩৭ রান করেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে সবচেয়ে কম রান করে জেতার রেকর্ড সেটিই।

পাকিস্তানের করা ১৩৭ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই শাহিন আফ্রিদির বলে ফিরলেন অ্যালেক্স হেলস। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলটি ছিল সিম আপ ডেলিভারি, ফুললেংথে পড়েই ঢুকল ভেতরের দিকে। এ বলের কোনো জবাবই দিতে পারলেন না হেলস। বোল্ড হয়ে ফিললেন তিনি। প্রথম ওভারে ৭ রান তুলতেই প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এতে আজ বাটলারের সঙ্গে জুটি গড়া হলো না তার। সেমিফাইনালে বাটলার-হেলসের রেকর্ড জুটিতে ভারতকে হারিয়েছিল ইংল্যান্ড। হেলস ফিরে যাওয়ার পরের ওভারে নাসিমকে তিন চার মারেন বাটলার। নাসিম শাহর প্রথম বলটা গুডলেংথে পড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বাটলারের কাছ থেকে, তবে পরের দুই বলে দারুণ দুটি কাভার ড্রাইভে চার মেরে জবাব দিলেন বাটলার। পঞ্চম বলে ইনসাইড-এজ বলটি পায়ের ওপর থেকে ফ্লিক করে আরেকটি চার মেরেছেন ফিল সল্ট। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ব্যাটিং করতে নেমেছিলেন সল্ট। নাসিমের ওভারে উঠেছে ১৪ রান। এরপরই নামে বৃষ্টি। যদি বৃষ্টি বা কোনো কারণে ম্যাচটি পণ্ড হয় তাহলে আছে রিজার্ভ ডে। আজ খেলা শেষ করার চেষ্টা ব্যর্থ হলেই শুধু ব্যবহার করা হবে সেটি। আজ যেখানে খেলা শেষ হয়েছে, কাল শুরু হবে সেখান থেকেই।

এরপর ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সল্টকে ফেরান হারিস রউফ। চতুর্থ ওভারে রউফের তৃতীয় বলটা ইনটু দ্য উইকেট ছিল। সে বলটি মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ইফতিখারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সল্ট, করেন ১০ রান। ক্রিজে আসেন বেন স্টোকস। তবে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফেরেন অধিনায়ক বাটলারও। ৬ষ্ঠ ওভারে হারিস রউফের তৃতীয় বলটিতে অফ স্টাম্পের বাইরে গুডলেংথ থেকে বাড়তি বাউন্স ছিল। সে বলে খোঁচা দিয়ে ইউকেটরক্ষকের হাতে ধরা দেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। ফেরার আগে ১৭ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ২৬ রান করেন বাটলার। পাওয়ার প্লেতে পাকিস্তানের এটি তৃতীয় আঘাত, রউফের দ্বিতীয়! পাওয়ার প্লে শেষে ইংল্যান্ডের ৩ উইকেটে ৪৯ রান। তখন পাকিস্তানের ছিল ১ উইকেটে ৩৯ রান। বাটলার ফিরে গেলে বেশ চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে দলের হাল ধরেন বেন স্টোকস। ব্রুকের সঙ্গে গড়েন ৩৯ রানের জুটি। দ্বাদশ ওভারের শেষ বলে নাসিম শাহর আউট স্যুইং ডেলিভারিতে পরাস্ত হন স্টোকস। একটুর জন্য ব্যাটের কানা ছোঁয়নি বল। ফলে রিভিউ নিলেও ব্যর্থ হয় পাকিস্তান। তবে পরের ওভারেই উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয় তারা। শাদাবের বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ২৩ বলে ২০ রান করা ব্রুক। ক্যাচ নিতে যেয়ে চোট পান শাহিন, দুশ্চিন্তা ভর করে পাক শিবিরে। তখন জয়ের জন্য ৪৫ বলে ৫৪ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের।

১৪তম ওভারে মাত্র দুই রান দিয়ে সমীকরণ আরও জটিল করে তোলেন নাসিম। পরের ওভারে রউফ আট রান দিলেও ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নেয় পাকিস্তান। তবে ইফতিখার আহমেদের ১৬তম ওভারে ম্যাচ বের করে আনেন স্টোকস। সেই ওভারে তার একটি করে ছক্কা-চারে ১৩ রান পায় ইংলিশরা। ১৭তম ওভারে উৎসবে যোগ দেন মঈন আলীও। মোহাম্মদ ওয়াসিমকে তিনটি বাউন্ডারি মেরে পাকিস্তানের জয়ের আশা কার্যত শেষ করে দেন তিনি। শেষ দুই ওভারে ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল মাত্র সাত রান। ১৯তম ওভারে ওয়াসিমের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মঈন আলী। ফেরার আগে ১৩ বলে ৩ চারে ১৯ রান করেন বাঁহাতি এ অলরাউন্ডার। তবে মঈন ফিরলেও দলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন স্টোকস। সেই ওভারের চতুর্থ বলে চার মেরে ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। শেষ বলে মিড উইকেটে এক রানের জন্য বল ঠেলে ইংল্যান্ডকে এনে দেন বিশ্বকাপ। ৪৯ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় হার না মানা ৫২ রানের ইনিংস খেলেন বেন স্টোকস। পাকিস্তানের হয়ে হ্যারিস রউফ ২টি এবং শাহিন আফ্রিদ্রি, শাদাব খান ও মোহাম্মদ ওয়াসিম ১টি করে উইকেট নেন।

ম্যাচ ও টুর্নামেন্ট সেরা স্যাম কারান।

এর আগে টস হরে ব্যাট করতে নেমে প্রত্যাশামাফিক শুরু করতে পারেনি পাকিস্তান। এদিকে স্টোকসের ঘটনাবহুল প্রথম ওভার। প্রথম বলটাই নো করেছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার, টুর্নামেন্টে ইংল্যান্ডের এটি প্রথম নো। পরের বলটি করেছেন ওয়াইড, তবে এরপর ফ্রি হিট কাজে লাগাতে পারেননি রিজওয়ান। অপর প্রান্তে বাবর যথারীতি শুরু করেন ঠান্ডা মেজাজে। পঞ্চম ওভারে ভাঙে পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি, কারানের বলে ইনসাইড এজ বোল্ড হয়ে ১৪ বলে ১৫ রান করে ফিরে যান রিজওয়ান। এরপর হারিস এসে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ক বাবরকে। আদিল রশিদের বলে লং অনে স্টোকসের হাতে ধরা পড়ার আগে করেন ১২ বলে ৮ রান। ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় পাকিস্তান। তৃতীয় উইকেটে মাসুদের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়েন বাবর। দুজন মিলে বাড়ান রানের গতি। ১০ ওভার শেষে পাকিস্তানের ২ উইকেটে ৬৮ রান।

১২তম ওভারে ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে প্রথম বলেই গুগলি করে পাক দলনেতাকে চমকে দেন ইংলিশ লেগ স্পিনার রশিদ। বল বুঝতে না পেরে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাবর। ২৮ বলে ৩২ রান করে বিদায় নেন পাক অধিনায়ক। সেই ওভারে আর কোন রান না দিয়ে উইকেট মেইডেন আদায় করে নেন রশিদ। পরের ওভারে আবারও চেপে ধরে ইংল্যান্ড, স্টোকস এসে ফেরান ইফতিখারকে। শূন্য রানে ফিরে যান মিডল অর্ডার এ ব্যাটার। তার বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শাদাব ও মাসুদ। তাদের কল্যাণে আবারও রানরেটে উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয় পাকিস্তান। তবে ১৭তম ওভারে ৩৮ রান করা মাসুদকে ফিরিয়ে ৩৬ রানের জুটি ভাঙেন কারান। পরের ওভারে জর্ডানের বলে শাদাব ফিরে গেলে চাপে পরে পাকিস্তান। ১৪ বলে ২০ রান করে ফিরে যান এই বোলিং অলরাউন্ডার। ১৯তম ওভারে পাকিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার নাওয়াজকেও আউট করেন কারান। মাত্র পাঁচ রান করে ফিরে যান এই অলরাউন্ডার। শেষ ওভারেও উইকেট হারায় পাকিস্তান, মোহাম্মদ ওয়াসিম পরিণত হন জর্ডানের দ্বিতীয় শিকারে। শেষ দুই ওভারে মাত্র ১০ রান করে ১৩৭ রানে থামে বাবরের দল। ইংলিশদের হয়ে ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান ৩ উইকেট নেন স্যাম কারান। ম্যাচ সেরা ও সিরিজ সেরার পুরস্কারটিও ওঠে তার হতে। এছাড়া আদিল রশিদ ও ক্রিস জর্দান নেন ২টি করে উইকেট এবং বেন স্টোকস নিয়েছেন ১টি উইকেট।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত