টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল ইংল্যান্ড

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ২০:১২

জয় পেলেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত নিউজিল্যান্ডের। অন্যদিকে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থাকার সুযোগ ইংল্যান্ডের সামনে। অর্থাৎ ম্যাচটি ছিল ইংলিশদের জন্য কার্যত নকআউটপর্ব, হারলেই বাদ। এমন সমীকরণের ম্যাচে উদ্বোধনী জুটি জস বাটলার ও অ্যালেক্স হেলসের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ চারের লড়াই টিকিয়ে রাখল ইংল্যান্ড। এতে এক নম্বর গ্রুপের সমীকরণটা আবারও জটিল হয়ে দাঁড়াল। একটি করে ম্যাচ বাকি থাকতেই নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া তিন দলই সমান পয়েন্ট নিয়ে থাকলো সেমিফাইনালের দৌড়ে।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) ব্রিসবেনের গ্যাবায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ২০ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৭৯ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে নির্ধারিত ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। ব্যাট হাতে দারুণ খেলেছেন ইংলিশ নায়ক অধিনায়ক জস বাটলার, ৪৭ বলে ৭৩ রান করে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। তার সঙ্গে ওপেন করতে নেমে আলেক্স হেলস করেন ৪০ বলে ৫২ রানের ফিফটি। জবাবে গ্লেন ফিলিপসের ৩৬ বলে ৬২ রানের ঝড়ের পরও সমীকরণ মেলাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড।

ব্রিসবেনের উইকেটে যে স্পিন ধরবে, সেটা আগেই বোঝা যাচ্ছিল। প্রথম ইনিংসেই মিচেল স্যান্টনার ও ইশ সোধি ৮ ওভারে দেন মাত্র ৪৮ রান। বাটলার তাই প্রথম ওভারেই আনেন অফ স্পিনার মঈনকে, তৃতীয় ওভারে আসেন লেগ স্পিনার আদিল রশিদ। অবশ্য দ্বিতীয় ওভারে প্রথম ব্রেকথ্রু দেন ক্রিস ওকস, ডাউন দ্য লেগে কট বিহাইন্ড হন ডেভন কনওয়ে, বাটলার নেন ভালো ক্যাচ। ৯ বলে মাত্র ৩ রান করে ফেরেন কনওয়ে। ফিন অ্যালেনও স্বভাবসুলভ ঝড় তুলতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে স্যাম কারেনের গতির বৈচিত্র্যে হার মানেন অ্যালেন, পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন স্টোকসের হাতে। ১১ বলে ১ ছক্কায় ১৬ রান করে ফেরেন ফিন অ্যালেন। পাওয়ারপ্লে-তে নিউজিল্যান্ড ৪০ রান তুলতেই উইকেট হারায় দুটি।

এরপর মাত্র ৫৯ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন গ্লেন ফিলিপস ও উইলিয়ামসন। অধিনায়ক দেখে শুনে খেললেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ফিলিপস ছিলেন মারকুটে মেজাজেই। তাকে দ্রুত ফেরানোর সুযোগ দশম ওভারেই পেয়েছিল ইংল্যান্ড, কিন্তু কাভারে তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন মঈন আলী। বদলে যায় ম্যাচের চিত্র। জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাতে মোটেও ভুল করেননি ফিলিপস। যখন জীবন পেলেন তখন তার রান ছিল ১৫ আর উইলিয়ামসনের সঙ্গে জুটি ছিল ৩৭ রানের। এরপর ‘মোমেন্টাম’ কাজে লাগিয়ে ওই জুটি গেল ৯১ রান পর্যন্ত। ১৪তম ওভারে আদিল রশিদের বলে দুই রান নিয়ে ফিফটির স্বাদ পেয়ে যান আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা ফিলিপস। মাত্র ২৫ বলে ফিফটি করেন তিনি। ওই ওভারেই রশিদকে টানা দুটি ছক্কায় যেন বার্তাও দেন তিনি।

পরের ওভারেই অবশ্য ছন্দপতন ঘটে ব্ল্যাক ক্যাপসদের। ইংল্যান্ডকে আশা জোগান বেন স্টোকস। ১৫তম ওভারে নিজের প্রথম বলটি করতে এসেই ফেরান কেইন উইলিয়ামসনকে। শর্ট থার্ডম্যানে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে ৪০ বলে ৩ চারে ৪০ রান করেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। পরের ৩ ওভারে ইংল্যান্ডের ৩ পেসারের বলে ক্যাচ দেন আরও ৩ নিউজিল্যান্ড ব্যাটার-মার্ক উডের বলে ডিপ মিড উইকেটে জিমি নিশাম, ক্রিস ওকসের বলে লং অনে ড্যারিল মিচেল, কারেনের বলে ফিলিপস। শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৬ রান, কারেনের বলে কিউইরা নিতে পারেন মাত্র ৫ রান। অবশেষে ২০ রানে হেরে যায় নিউজিল্যান্ড। ইংলিশদের হয়ে ক্রিস ওকস ও স্যাম কারেন ২টি করে উইকেট নেন এবং মার্ক উড ও বেন স্টোকস ১টি করে উইকেট নেন।

এর আগে টসে জিতে ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডকে দারুণ সূচনা এনে দেন জস বাটলার-অ্যালেক্স হেলস। ক্রিকভিজের ডেটা অনুযায়ী, পাওয়ারপ্লে-তে প্রায় ৭৫ শতাংশ আক্রমণাত্মক শট খেলেন এ দুই ওপেনার। প্রথম ৬ ওভারে বিনা উইকেটে তোলেন ৪৮ রান। অবশ্য শুরুতেই উদ্বোধনী জুটি ভাঙার একটা সুযোগ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। এক্সট্রা কাভারে দারুণ ডাইভে বাটলারের ক্যাচ লুফে নেন কেইন উইলিয়ামসন। কিন্তু বিধি বাম, টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল মাটি ছুঁয়েছে। ব্যক্তিগত ৮ রানে জীবন পান ইংল্যান্ড দলপতি। এরপর ১০ ওভারে ৮১ রানের বেশ শক্ত একটা ভিতই পায় ইংল্যান্ড। পরের ওভারে ৩৯ বলে ফিফটি পান হেলস, সেটি পূর্ণ করেন স্যান্টনারকে চার মেরে। যদিও ঠিক তার পরের বলেই হন স্টাম্পড। স্যান্টনার-সোধির সঙ্গে ম্যাচআপে এগিয়ে থাকা মঈন আলীকে তিনে পাঠায় ইংল্যান্ড, যদিও সোধির শর্ট লেংথের বলে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তোলার আগে ৬ বলে ৫ রানের বেশি করতে পারেননি মঈন।

১৩তম ওভারে বাটলার দ্বিতীয়বার জীবন পান ৩৯ রানে। ফার্গুসনকে পুল করেছিলেন, তবে ডিপ মিড উইকেটে ড্যারিল মিচেল ফেলেন সহজ ক্যাচ। ৩৫ বলে ক্যারিয়ারের শততম ম্যাচে ফিফটি পান বাটলার। এ ইনিংসের পথে এউইন মরগানকে ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি রানের মালিকও হয়ে যান। ৮ বল বাকি থাকতে রানআউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে করেন ৭৩ রান। মঈনের পর আসেন লিয়াম লিভিংস্টোন, ফার্গুসনকে দ্বিতীয়বারের মতো স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে ১৪ বলে করেন ২০ রান। হ্যারি ব্রুক মারেন একটি ছয়। ছয়ে আসেন বেন স্টোকস, ডেভিড ম্যালানকে আসতে হয় আট নম্বরে। ডেথ ওভারে উইকেট নিয়ে লকি ফার্গুসনরা বেশ ভালোভাবেই ফিরিয়ে আনেন নিউজিল্যান্ডকে, তবে বাউন্ডারি না পেলেও সিঙ্গেল ডাবলসেই গ্যাবার ‘পার’ স্কোর পেরিয়ে যায় ইংল্যান্ড। শেষ ৪ ওভারে তোলে ৪২ রান। নিউজিল্যান্ড সেখানে তোলে ৩৩ রান। শুরুর মতো ইনিংসের শেষ ভাগেও দুই দলের মধ্যে পার্থক্য ছিল এমন। কিউইদের হয়ে লকি ফার্গুসন ২টি এবং সাউথি, স্যাটনার ও শোধি ১টি করে উইকেট নেন।

সুপার টুয়েলভে গ্রুপ ১ থেকে ৪ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট এবং +০.৫৪৭ রানরেট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে ইংল্যান্ড। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ও +২.২৩৩ রানরেট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে আছে নিউজিল্যান্ড। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ও -০.৩০৪ রানরেট নিয়ে টেবিলের তিনে অস্ট্রেলিয়া। সমান ম্যাচে ৪ পয়েন্ট এবং -০.৪৫৭ রানরেট নিয়ে টেবিলের চারে শ্রীলঙ্কা। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট ও -১.৫৪৪ রানরেট নিয়ে পাঁচে আয়ারল্যান্ড এবং সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট ও -০.৭১৮ রানরেট নিয়ে টেবিলের তলানিতে আফগানিস্তান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত