টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

আফগানিস্তানকে বিদায় জানিয়ে আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা

প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২২, ১৮:৫৪

সমীকরণটা ছিল একদমই স্পষ্ট। সেমিফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান দুই দলকেই জিততে হবে। এমন সমীকরণের সামনে দু’দলের লড়াইয়ে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ফিফটি ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দুর্দান্ত বোলিং পারফরম্যান্সে সে আশা বাঁচিয়ে রাখল শ্রীলঙ্কা। তবে সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ বাকি আর একটি, ৫ নভেম্বর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচটি তো জিততেই হবে, সঙ্গে রানরেট আর অন্য সমীকরণের মারপ্যাঁচের ওপর নির্ভর করছে শ্রীলঙ্কার সেমিফাইনাল-ভাগ্য। আর লঙ্কানদের কাছে হেরে সেমিফাইনালে ওঠার পথ থেকে ছিটকে পড়ল আফগানিস্তান।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) গ্যাবায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেট ও ৯ বল হাতে রেখেই জিতে যায় শ্রীলঙ্কা। বাঁচা-মরার লড়াইয়ে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন আফগান অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী। ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪৪ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। জবাবে ১৯.৩ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৪৮ রান করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

পরিসংখ্যান বলছে, গ্যাবার এ মাঠে চলতি বিশ্বকাপের আগের দুই ম্যাচেই জয় পেয়েছে আগে ব্যাট করা দল। এছাড়া এই মাঠে গত দুই বছরে আগে ব্যাটিং করা দলই জয় পেয়েছে বেশি ৫৫ শতাংশ। হয়তো পরিসংখ্যানটি মাথায় রেখেই আজ টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আফগান অধিনায়ক। তবে আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই চোটের কারণে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় দলে এসেছেন গুলবদিন নাইব। কিন্তু তিনি ব্যাট করেছেন মিডল অর্ডারে। তাই আরেক ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটি বাঁধেন উসমান গণি। দুজনে মিলে শুরুটা ভালোই করেছিলেন। পাওয়ারপ্লে-তে এই ব্যাটারা তুলেছিলেন ৪২ রান। পাওয়ারপ্লে শেষে তাই বড় সংগ্রহ গড়ার স্বপ্নই দেখেছিল আফগানরা। তবে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো ও ব্যাটারদের ইনিংস বড় না হওয়া তার কারণ।

আফগান ব্যাটিং লাইনআপের প্রথম ছয় ব্যাটার দুই অঙ্কে পৌঁছালেও কেউ ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইনিংসের সপ্তম ওভারে গুরবাজ ২৮ রানে আউট হন। আফগান ইনিংসের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ এটাই। আরেক ওপেনার উসমান ফেরেন ২৭ করে। ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবউল্লাহ জাদরানরা ক্রিজে সেট হয়েছেন, কিন্তু তারাও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শেষ দিকে মোহাম্মদ নবী ও রশিদরাও নিজেদের কাজটা করতে পারেননি। ২০ ওভারে ১৪৪ রানেই থামে আফগানিস্তানের ইনিংস।

পার্থে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ ওভার করে দিয়েছিলেন ৫৩ রান। তবে এ ম্যাচে তিনি সফল। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩টি উইকেট। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন হাসারাঙ্গা। লাহিরু কুমারা নিয়েছেন ২টি উইকেট এবং রাজিথা ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

আফগানদের দেয়া ১৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি লঙ্কান দুই ওপেনার। দ্বিতীয় ওভারেই মুজিব উর রেহমানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন পাতুম নিশাঙ্কা, করেন ১০ রান। লঙ্কানদের রানের গতি আটকে রাখেন ফজলহক ফারুকি ও মুজিব উর রেহমান। পাওয়ারপ্লে-তে শ্রীলঙ্কা তুলতে পারে মাত্র ২৮ রান। পরে ৮ম ওভারে কুশাল মেন্ডিসকে ফেরান রশিদ খান। ২৭ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ২৫ রান করে ওই ওভারের ৫ম বলে উইকেটের পেছনে গুরবাজের গ্লাভসে ধরা পড়েন মেন্ডিস। প্রথম ১০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৬৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। এতে ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দারুণ শুরু করে আফগানিস্তান।

এরপরই খোলস ছেড়ে বের হন লঙ্কান ব্যাটাররা। রশিদ ও নবীর টানা ২ ওভারে ডি সিলভা ও চারিত আসালাঙ্কা তুলে নেন ২৬ রান। পরে ৩৪ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাদের জুটি ভাঙেন রশিদ খান। আসালাঙ্কাকে ক্যাচ দিয়ে ফেরান তিনি। ফেরার আগে ১৮ বলে ১৯ রান করেন আসালাঙ্কা। তখন লঙ্কানদের জিততে প্রয়োজন ৩৯ বলে ৪৫ রান, হাতে আরও ৭ উইকেট। এ সময় ভানুকা রাজাপাকসের সঙ্গে জুটি জমিয়ে তোলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। ইনিংসের ১৮তম ওভারে ৩৬ বলে ফিফটি করেন তিনি। ব্যক্তিগত মাইলফলক স্পর্শের পর মুজিবকে টানা দুই চার মারেন ডি সিলভা। জয় যখন হাতের নাগালে, তখন মুজিবের বলে কট বিহাইন্ড হন রাজাপাকসে। ভাঙে ২৭ বলে ৪২ রানের জুটি। ফেরার আগে ১৪ বলে ৩ চারে ১৮ রান করেন রাজাপাকসে। পরের ওভারে বাঁহাতি পেসার ফজল হক ফারুকিকে চার মেরে খেলা শেষ করেন সিলভা। ৪২ বলে ৬ চার ২ ছক্কায় ৬৬ রান করে অপরাজিত থাকেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। আফগানদের হয়ে মুজিব উর রেহমান ও রশিদ খান ২টি করে উইকেট নেন।

সুপার টুয়েলভে গ্রুপ ১ থেকে ৪ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট এবং -০.৪৫৭ রানরেট নিয়ে টেবিলের চারে আছে শ্রীলঙ্কা। সমান ম্যাচে ২ পয়েন্ট ও -০.৭১৮ রানরেট নিয়ে পাঁচ দলের এই গ্রুপের তলানিতে আফগানিস্তান। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ও -০.৩০৪ রানরেট নিয়ে টেবিলের তিনে অস্ট্রেলিয়া। সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ও +০.৫৪৭ রানরেট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে ইংল্যান্ড আর সমান ম্যাচে ৫ পয়েন্ট ও +২.২৩৩ রানরেট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে নিউজিল্যান্ড। টেবিলের নিচের সারির দল আয়ারল্যান্ড সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট ও -১.৫৪৪ রানরেট নিয়ে পাঁচে অবস্থান করছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত