টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

অবিশ্বাস্য কোহলির কাছে হারল পাকিস্তান

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২০:৩৪

সাহস ডেস্ক

নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা। ম্যাচটি না দেখলে নাটকের শেষ কোথায় বোঝা যেত না। ঢেউয়ের তালে হেলছিল ম্যাচটি। একবার পাকিস্তানের দিকে তো একবার ভারতের দিকে। শেষ ৬ বলে দরকার ছিল ১৬ রানের। প্রথম বলে হার্দিক পান্ডিয়াকে তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের মোহাম্মদ নওয়াজ। পরের দুই বলে দিলেন তিন। কিন্তু চার নম্বরটি ছক্কা হাঁকালেন বিরাট কোহলি। সে বলটি হলো আবার নো। আম্পায়ার দিলেন ফ্রিহিটের ইশারা। তখনই ভারতের দিকে ম্যাচটি ঝুক দেয়। তবে সে সময় আরেকবার নাটকীয়তার দেখা দেয়। পঞ্চম বলে দিনেশ কার্তিককে রানআউট করেন রিজওয়ান। শেষ বলে দরকার ২ রান। ওই সময় রিজওয়ান দিলেন ওয়াইড। ম্যাচ টাই। এরপর শেষ বলটি মিডঅফের ওপর দিয়ে উড়িয়ে নাটকীয়তার শেষ করলেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। শেষ পর্যন্ত জয়ের হাসি হাসল ভারত। রোমাঞ্চকর এ জয়ের নায়ক হলেন বিরাট কোহলি। ৫৩ বলে ৮২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ভারতকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দিলেন কোহলি।

রবিবার (২৩ অক্টোবর) মেলবোর্নে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে নিজেদের প্রথম দেখায় পাকিস্তানকে ৪ উইকেটে হারাল ভারত। এ নিয়ে চতুর্থবার টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের শেষ বলে জিতল ভারত। এদিন টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে পাকিস্তান। জবাবে ৬ উইকেট হারিয়ে ম্যাচটি জিততে শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয় ভারতকে। তবে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ভারত। পাওয়ার প্লে শেষেই ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পরে ভারত। তখন হার্দিক পান্ডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচটি মেরামত করেন বিরাট কোহলি। রানের গতিও সচল রেখে এগোতে থাকেন ধীর গতিতে। শেষ দিকে যখন ষোলতে রান রেট বেড়ে যায়, তখন রীতিমতো রুদ্ররূপ ধারণ করেন কোহলি।

এদিন শেষ তিন ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান। শাহিন শাহ আফ্রিদির করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে শুরু করেন কোহলি। সে ওভারে আরও দুটি বাউন্ডারি মেরে মোট ১৭ রান তুলে দলকে লড়াইয়ে রাখেন এ ব্যাটার। এরপর বোলিংয়ে আসেন হারিস রউফ। যার দুর্দান্ত বোলিংয়েই ম্যাচে দারুণভাবে টিকে ছিল পাকিস্তান। শুরুটাও করেন তেমনই। প্রথম চার বলে দেন মাত্র ৩ রান। তখন ম্যাচ হেলে যায় পাকিস্তানের দিকেই। কিন্তু পরের দুই বলে দুটি দুর্দান্ত শটে বল মাঠের বাইরে আছড়ে ফেলেন কোহলি। তাতে ফের ম্যাচে ফেরে ভারত। এরপর হয় নাটকের চূড়ান্ত পরিণতি। ক্ষণে ক্ষণে বদলায় ম্যাচের চিত্র। যেখানে দুটি উইকেট হারিয়েও প্রয়োজনীয় ১৬ রান তুলে নেয় ভারত। মূলত একটি নো-বলের খেসারৎটা দিতে হয় পাকিস্তানকে। তারপরও ম্যাচ ঝুলেছিল পেন্ডুলামের মতো। কার্তিক রানআউট হওয়ার পর শেষ বলে প্রয়োজন ছিল দুই রান। একটি ওয়াইড দিয়েই ভারতের চাপ কমিয়ে দেন নওয়াজ। এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিনের আলতো চিপ। উল্লাসে মাতে ভারতীয় শিবির।

অথচ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতে বড় চাপে পড়েছিল ভারতীয়রা। দলীয় ৩১ রানেই হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের ৪টি উইকেট। লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করে ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাসিম শাহ। এরপর মঞ্চে আসেন হারিস রউফ। আরেক ওপেনার অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে ফেরান তিনি। তবে স্লিপে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ ধরেন ইফতেখার আহমেদ। চার নম্বরে নেমে দুই বাউন্ডারি মেরে ভালো শুরু করা সূর্যকুমার যাদবকেও ফেরান রউফ। দুর্ভাগ্যটা আরও বড় হয় আকসার প্যাটেলের রানআউটে। মিডউইকেটে ঠেলে রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে কোহলি ফিরিয়ে দেন তাকে। ঝাঁপিয়ে পড়ে চেষ্টা করলেও ক্রিজে ফিরতে পারেননি আকসার। চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলের হাল হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে ধরেন কোহলি। শুরুতে কিছুটা ধীর গতিতে খেলে চাপ কাটিয়ে ওঠেন তারা। মোহাম্মদ নাওয়াজের করা ১২তম ওভারে চড়াও হন এ দুই ব্যাটার। সে ওভারে আসে ২০ রান। এরপর নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। নাওয়াজের বলে জুটি ভাঙার আগে স্কোরবোর্ডে ১১৩ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। ততক্ষণে জয়ের ভিত মিলে যায় তাদের।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮২ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। ৫৩ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। ৩৭ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া। মারেন ১টি চার ও ২টি ছক্কা। এ দুই ব্যাটার ছাড়া দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন কেবল সূর্যকুমার (১৫)। পাকিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ ও মোহাম্মদ নওয়াজ।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানের সূচনাটাও ছিল বিবর্ণ। দলীয় ১৫ রানেই দুই ইনফর্ম ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও অধিনায়ক বাবর আজমকে হারায় দলটি। দুই ওপেনারকেই ফেরান আর্শদিপ সিং। বাবরকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলার পর রিজওয়ানকে ভুবনেশ্বর কুমারের ক্যাচে পরিণত করেন। এরপর ইফতেখার আহমেদকে নিয়ে দলের হাল ধরেন শান মাসুদ। রানের গতি বাড়াতে না পারলেও শুরুর ধাক্কাটা সামলে নেন এ দুই ব্যাটার। তবে অক্ষর প্যাটেলের করা ১২তম ওভারে চড়াও হন ইফতেখার। সে ওভারে তিন ছক্কায় তুলে নেন ২১ রান। তাতে গতি বাড়ে পাকিস্তানের ইনিংসে। তবে পরের ওভারে বল হাতে ফিরে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এ জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ শামি। ইফতেখারকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৭৬ রানের এ জুটি ভাঙার পর পান্ডিয়ার তোপে পড়ে স্কোরবোর্ডে ২৯ রান যোগ হতেই ৫টি উইকেট হারিয়ে লেজ বেরিয়ে যায় পাকিস্তানের। অষ্টম উইকেটে মাসুদকে কিছুটা সঙ্গ দিতে পারেন শাহিন শাহ। ৩১ রানের জুটি গড়েন তারা। তাতেই লড়াইয়ের পুঁজি পায় পাকিস্তান।

দলের হয়ে ৪২ বলে ৫টি চারে সর্বোচ্চ ৫২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মাসুদ। আর ৩৪ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫১ রান করেন ইফতেখার আহমেদ। ৮ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ১৬ রানের ক্যামিও খেলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। ভারতের হয়ে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন আর্শদিপ সিং ও হার্দিক পান্ডিয়া। ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত