টি-টোয়েন্টি সিরিজ

আমিরাতের বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় বাংলাদেশের

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:২৫

সাহস ডেস্ক
ছবি: বিসিবি

ম্যাচ জিততে শেষ ৬ বলে আরব আমিরাতের দরকার ১১ রান। বাকি ছিল দুই উইকেট। বলে ছিলেন শরীফুল ইসলাম। প্রথম বল ডট, দ্বিতীয় বলে কাভারে ক্যাচ তুলে দিলেন জুনাইদ সিদ্দিক। চরম উত্তেজনার সময়ে লোপ্পা ক্যাচ ছেড়ে হারের শঙ্কা জাগিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। পরের বলেই ক্যাচের মাধ্যমে আয়ান খানকে ফেরালেন শরীফুল। এর পরের বলেই আবারও জুনাইদ সিদ্দিকের ক্যাচ। সামনে আরাবও সাইফুদ্দিন। তবে এবার আর ফেললেন না, সহজেই ক্যাচটি লুফে নেন সাইফুদ্দিন। ২ বল বাকি থাকতেই জিতে যায় বাংলাদেশ। তবে আফিফ হোসেনের ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস, মেহেদী হাসান মিরাজের বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে দারুণ নৈপুণ্যের পরও প্রথম ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারাতে বেশ বেগই পেতে হলো বাংলাদেশকে।

রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৭ রানের হারিয়ে সিরিজ শুরু করেছে নুরুল হাসানের দল। এদিন টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৫১ রান তুলতে সক্ষম হয় আরব আমিরাত। ২ বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় স্বাগিতকরা।

রান তাড়ায় মাঝের ধস সামাল দিয়ে বেশ কাছাকাছি গিয়েছিল আরব আমিরাত। ইনিংসের প্রথম ভাগে ফিল্ডিং বেশ ভালো হলেও বাংলাদেশ খেই হারায় আবার। লিটন মিসফিল্ডে চার দেন, সাইফউদ্দিনের আগে ক্যাচ ছাড়েন মোসাদ্দেকও। আরব আমিরাত ব্যাটসম্যানরা অবশ্য সে সুযোগটা ঠিক কাজে লাগাতে পারেননি, তবে ১৬ বছর বয়সী আয়ানের সঙ্গে লড়াই করেছেন কার্তিক মিয়াপ্পন ও জুনাইদও।

বাংলাদেশের করা ১৫৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোই হয় আরব আমিরাতের। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে তোলে ৪৩ রান, হারা ১ উইকেট। যেখানে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৩ উইকেট হারিয়ে ৪২ রান। আমিরাতের প্রথম উইকেটের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ইনিংসের পঞ্চম ওভার পর্যন্ত। মারকুটে শুরুর পর মোহাম্মদ ওয়াসিমের আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে ভাঙে স্বাগতিকদের উদ্বোধনী জুটি। উইকেট তুলেও বাংলাদেশ স্বাগতিকদের রানের গতি কমাতে পারেনি চিরাগ সুরি ও আরিয়ান লাকরার কল্যাণে। মেহেদীর বলে দলীয় ৬৬ রানে সুরির সাজঘরে ফেরার পরই ধসে পড়া শুরু করে আমিরাতের ব্যাটিং লাইন আপ। লাকরা ১৯, ভৃত্য আরভিন্দ ১৬, আরিয়ান আফজাল ২৫ ও কার্তিক মেইয়াপান ১২ ছাড়া দুই অঙ্কের রান ছোঁয়া সম্ভব হয়নি আর কোনো ব্যাটারের পক্ষে। শেষ পর্যন্ত ১৫১ রানে থেমে যায় আরব আমিরাতের ইনিংস।

বাংলাদেশের হয়ে সেরা বল করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩ ওভার করে ১৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৩.৪ ওভার করে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন শরীফুল ইসলাম। আর মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভার করে ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

আফিফ হোসেন খেলেছেন ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। ছবি: বিসিবি

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং পায় বাংলাদেশ। আফিফ হোসেনের ৫৫ বলে ৭৭ রানের ইনিংসের সঙ্গে অধিনায়ক নুরুল হাসানের ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংসে ভর করে ১৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ। ৭৭ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দুজন মিলে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ৮১ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন। এদিন আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা ওপেনিং জুটিতে আসেন সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দ্বিতীয় ওভারে সাবির আলীর শর্ট বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মারতে গিয়ে কোনো রান না করেই স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন সাব্বির। চোট কাটিয়ে ফেরা লিটন দাসের শুরুটা ইতিবাচক হলেও শর্ট লেংথের বলে জোরের ওপর সুইপ করতে গিয়ে আয়ানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। শুরুতে বলের মুভমেন্টে অস্বস্তিতে পড়া মিরাজও বেশি দূর যেতে পারেননি, ১৪ বলে ১২ রান করে ফরিদের শর্ট বলে ক্যাচ তোলেন তিনি।

৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের স্কোরকার্ডের চিত্রটা বাজে হতে পারত আরও। ২ রানে দাঁড়িয়েই জীবন পান আফিফ। সে সুযোগ কাজেও লাগান দারুণভাবে। পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রান ওঠে, অবশ্য আফিফকে রেখে ইয়াসির আলী ও মোসাদ্দেক হোসেন ফেরেন দ্রুতই। চোট কাটিয়ে ফেরা ইয়াসির মিয়াপ্পনের গুগলির শিকার, মোসাদ্দেক একই বোলারের বলে হন স্টাম্পিং। পরে অধিনায়ক নুরুল হাসানকে নিয়ে দলীয় শতরান পার করেন আফিফ। পাশাপাশি মারকুটে ব্যাটিংয়ে অর্ধশতক তুলে নেন এ বাঁহাতি ব্যাটার। পরে ৬৩ রানে দাঁড়িয়ে আফিফ জীবন পান আরেকটি, ১৫তম ওভারে নুরুলকে রানআউট করার সুযোগও হারায় আরব আমিরাত। শেষ পর্যন্ত ৫৫ বলে ৭ চার ৩ ছক্কায় ৭৭ রান করেন আফিফ ও ২৫ বলে সমান দুটি চার-ছক্কায় ৩৫ রান করেন নুরুল হাসান। দুজুনেই থাকেন অপরাজিত। ৫ উইকেটে ১০৫ রান নিয়ে ডেথ ওভার শুরু করা বাংলাদেশ শেষ ৫ ওভারে তোলে ৫৩ রান। নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ওই ৫ উইকেট হারিয়েই বাংলাদেশ তোলে ১৫৮ রান। ম্যাচ সেরা হয়েছেন আফিফ হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত