বাংলাদেশ ৮-০ ভুটান: সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে বাংলাদেশ

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম সেমিফাইনালে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হ্যাটট্রিকে ভুটানকে বিধ্বস্ত করে ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাফের ফাইনালে উঠল সাবিনা খাতুনের দল। শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নেপালের কাঠমুন্ডু দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে প্রথম সেমিফাইনালে ভুটানকে ৮-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে বাংলাদেশ। সাবিনার হ্যাটট্রিক ছাড়াও ১টি করে গোল করেছেন সিরাত জাহান, ঋতুপর্ণা চাকমা, কৃষ্ণা রানি সরকার, মাসুরা পারভীন ও তহুরা খাতুন। এর আগে ২০১৬ সালে শিলিগুড়ি সাফের ফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সেবার সেমিফাইনালে মালদ্বীপকে ৬-০ গোলে হারিয়েছিল সাবিনা খাতুনের দল। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ফাইনালে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে ভারত ও নেপালের মধ্যে জয়ী দল।

এদিন সকাল থেকেই কাঠমান্ডুর আকাশ মেঘলা। খেলা শুরুর আগে দুপুরে হয়েছে এক পশলা ভারী বৃষ্টি। আর সেই বৃষ্টিতে দশরথ স্টেডিয়ামের মাঠ হয়ে যায় পিচ্ছিল, কাদাময়। এমন কাদাভরা মাঠেও চোখ জুড়ানো ফুটবল উপহার দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। যদিও প্রতিপক্ষ হিসেবে ভুটান কখনোই বাংলাদেশের জন্য হুমকি ছিল না। মাঠের পারফরম্যান্সে ও র‌্যাঙ্কিংয়ে দুই দিক দিয়েই এগিয়ে বাংলাদেশ। ভুটানের বর্তমান র‌্যাঙ্কিং ১৭৬। বাংলাদেশের ১৪৭। ফাইনালে ওঠার পথে টুর্নামেন্টের গ্রুপপর্বের প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ হারায় মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে। পরের ম্যাচে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতও উড়ে গেছে বাংলাদেশের সামনে।

বাংলাদেশর মেয়েদের সামনে পাত্তাই পেল না ভুটানের মেয়েরা। ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে উঠে বাংলাদেশ। গোলরক্ষক সঙ্গীতা মঙ্গার কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভুটানের জালে জড়ায় প্রথম গোল। খেলার সময় চলে তখন মাত্র ২ মিনিট! মনিকার ডিফেন্স চেরা পাসে সিরাত জাহান খোলেন গোলের খাতা। কিন্তু বাংলাদেশ দলের জন্য অপেক্ষা করছিল দুঃসংবাদ। ১৩ মিনিটেই চোটে পড়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সিরাত। এরপর ১৮ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। এবার গোলটি করেন সাবিনা। মাঝ মাঠ থেকে মারিয়া মান্দার পাসে সাবিনা করেছেন নিজের প্রথম গোল। ভুটানের ভঙ্গুর রক্ষণ নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করল বাংলাদেশ। সাবিনা বক্সে ঢুকলে গোলরক্ষক সঙ্গীতা জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। তাকে ফাঁকি দিয়ে সহজেই গোল করেন সাবিনা।

ভুটানের কোরিয়ান কোচ কিউং সুক হং অবশ্য গোল খাওয়ার পরও খেলিয়েছেন প্রেসিং ফুটবল। তাতে কোনো লাভ হয়নি। বরং, ম্যাচের ৩০ মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার ক্রস থেকে দারুণ হেডে ৩-০ করেন কৃষ্ণা। এর ৪ মিনিট পরেই ভুটানের গোলরক্ষক সঙ্গীতার হাত ফসকে বেরিয়ে যাওয়া বলে টোকা দিয়ে ৪-০ করেন ঋতুপর্ণা। বিরতির আগে আর গোল না হলে এই ৪-০তে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশের মেয়েরা।

ভুটানের জালে বল জড়িয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস।

বিরতির পর ফাইনালের কথা ভেবেই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় মনিকা চাকমা, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, কৃষ্ণা রানী সরকারকে তুলে নেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তাদের বদলে মাঠে নামেন তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহার জুনিয়র, নীলুফার ইয়াসমিন ও স্বপ্না রানী। এই চারজন নামার পর খেলায় গতি বাড়ে আরও। আক্রমণে আক্রমণে জেরবার করেছে ভুটানের রক্ষণ। পরপর দুটি গোল করেন বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে সানজিদার পাসে সাবিনা করেন ৫-০ আর ৫৬ মিনিটে মাসুরা করেন ৬-০। এরপর ৮৭ মিনিটে বদলি হিসেবে নামা তহুরা করেন ৭-০। আর যোগ হওয়া সময়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাবিনা। চলতি সাফে এ নিয়ে দুটি হ্যাটট্রিক হয়ে গেল সাবিনার। গ্রুপপর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন প্রথম হ্যাটট্রিক। তবে ভুটানের বিপক্ষে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৮টি গোল করলেন সাবিনা। জাতীয় দলের হয়ে সাবিনার গোলসংখ্যা এখন ৩২।

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এই বাংলাদেশকে থামানোর মতো পারফরম্যান্স ভুটানের মেয়েদের একেবারেই নেই। ফিটনেস, গতি, স্কিল সব দিক দিয়েই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। তাই অনুমিতভাবেই হেরেছে ভুটান। এখন পর্যন্ত ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সাক্ষাৎ হয়েছে মোট চারবার। সব কটি ম্যাচই জিতেছে বাংলাদেশ। আগের চার ম্যাচে বাংলাদেশের মেয়েরা দিয়েছিল ১৯ গোল। আজও ভুটান তাদের গোলমুখ আগলে রাখতে পারেনি। রীতিমতো গোল উৎসব করেছে বাংলাদেশ।

এবারের সাফে টানা চার জয় পেল বাংলাদেশ। টানা চার ম্যাচে মালদ্বীপ, পাকিস্তান, ভারত ও ভুটানের জালে ২০ বার বল পাঠানোর বিপরীতে একটি গোলও হজম করেনি সাবিনার দল। মালদ্বীপকে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ পর্ব শুরু করা নারীরা পরে পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেয় ৬-০ গোলে। সাফের গত পাঁচ আসরের সবকটিতে শিরোপা জেতা ভারতকে শেষ ম্যাচে ৩-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। সেমিতে ভুটানকে খাওয়ালো ৮ গোল।

বাংলাদেশ দল:
রুপনা চাকমা, আঁখি খাতুন, শিউলি আজিম (নীলুফার ইয়াসমিন), মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা (স্বপ্না রানী), মনিকা চাকমা (শামসুন্নাহার জুনিয়র), সানজিদা আক্তার, শামসুন্নাহার, কৃষ্ণা রানী সরকার (তহুরা), সিরাত জাহান (ঋতুপর্ণা), সাবিনা খাতুন।