সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে

জিম্বাবুয়েকে ২৯১ রানের লক্ষ্য দিল বাংলাদেশ

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৭:১৭

সাহস ডেস্ক

শেষ ওভারে চতুর্থ বলে এসে প্রথমবারের মতো স্ট্রাইক পায় মাহমুদউল্লাহ। নিয়াউচির স্লোয়ার চতুর্থ বলটিতে ছক্কা মারেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ পঞ্চম বলটি মিস করার পর, শেষ বলে রানআউট হন শরীফুল। এই ওভারের প্রথম তিন বলে তাইজুল ইসলাম ফেরার পর শরীফুল ২ বলে নিতে পারেন একটি সিঙ্গেল। ফলে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রানে থামে বাংলাদেশ। ৮০ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন মাহমুদউল্লাহ।

রবিবার (৭ আগস্ট) হারারে স্পোর্টস ক্লাবে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক রেজিস চাকাভা। এ নিয়ে সফরে টানা ৫ ম্যাচেই টস জিতল স্বগতিকরা। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়েকে ২৯১ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ।

এদিন এনামুল হক বিজয়কে সঙ্গে নিয়ে ওপেনে নামেন তামিম ইকবাল। প্রথম ২ ওভারের ১২টি বলই খেলেছেন তামিম। এ ম্যাচে অভিষেক হওয়া ব্র্যাডলি এভান্সের করা প্রথম ওভারে দুটি চার ও দ্বিতীয় ওভারে ভিক্টর নিয়াউচির বলে একটি চার মেরেছেন বাঁহাতি ওপেনার। ইতিবাচকই শুরু করলেন তামিম। ৬ ওভার শেষে বাংলাদেশ যখন তুলেছে ৪০ রান, তখন তামিম ২৮ বলে ৩৩ রান নিয়ে ব্যাট করছিল। এরপর ১১তম ওভারে এসে ফিফটি করলেন তামিম। ওই ওভারে তানাকা চিভাঙ্গার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে দারুণ এক ড্রাইভে চার মেরে অর্ধশতক তুলে নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অর্ধশতক করেছেন তামিম ৪৩ বলে। আগের ম্যাচে ৪৮ রানে দাঁড়িয়ে তামিম খেলেছিলেন ৯টি ডট বল। এবার ৪৬ রান থেকে চার মেরে পৌঁছে গেলেন অর্ধশতকে। ক্যারিয়ারে এটি তার ৫৫তম ফিফটি। সর্বশেষ ৬ ইনিংসে চতুর্থ। এর দুই বল পরই তামিম আউট। ওই ওভারের শেষ বলে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে থাকা তাকুদজোয়ানাশে কাইতানোর হাতে ক্যাচ উঠিয়ে দেন। ফেরার আগে ৪৫ বলে ১০ চার ১ ছক্কায় ৫০ রান করেন তামিম ইকবাল। বাংলাদশ প্রথম উইকেট হারায় ৭১ রানে।

দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের! দুর্ভাগ্য এনামুল হক বিজয়ের! ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে জিম্বাবুয়ের পেসার তানাকা চিভাঙ্গাকে স্ট্রেট ড্রাইভ খেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বল চিভাঙ্গার হাত ছুয়ে নন স্ট্রাইকের স্টাম্প ভেঙে দেয়। ওই প্রান্তের ব্যাটসম্যান এনামুল ততক্ষণে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে যান। রান আউট! ফেরার আগে ২৫ বলে ২০ রান করেন এনামুল। বাংলাদেশ ১২.২ ওভারে ৭৭ রানে ২ উইকেট হারায়। পরে উইকেটে দুই নতুন ব্যাটসম্যান। ৬ বলে ৫ রান করা নাজমুল ও মুশফিকুর রহিম। এরপর ১৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের ২ উইকেটে ৮৭ রান। ওভারপ্রতি গড়ে ৫.৮ করে রান তোলে বাংলাদেশ। পরে ১৮তম ওভারে সিকান্দার রাজাকে স্কয়ার লেগে ঠেলে ১ রান নিয়ে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ১০০ পূর্ণ করেন মুশফিকুর রহিম। ১৮তম ওভার শেষে ২ উইকেটে ১০৪ রান বাংলাদেশের।

এরপর মুশফিক ও শান্তর ফিফটি জুটি। ৬ রানের ব্যবধানে ফিরেছিলেন তামিম ও এনামুল। এরপর বাংলাদেশ এগোচ্ছে মুশফিক ও নাজমুলের জুটিতে। ৬৩ বলে ৫০ রানের জুটি গড়ের দুজনে। ২৩ ওভার শেষে ২ উইকেটে ১২৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। পরের ওভারেই আউট মুশফিক। ২৪তম ওভারের প্রথম বলটি ঝুলিয়ে দেন মাধেভেরে। স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে থাকা মুনিয়োঙ্গার হাতে ধরা পড়েন মুশফিক। ফেরার আগে ৩১ বলে মাত্র ১টি চারে ২৫ রান করেন তিনি। আগের ম্যাচে ফিফটি করেছিলেন তবে এবার থামলেন আগেভাগেই। ৫০ রানেই থেমেছে নাজমুলের সঙ্গে মুশফিকের জুটি।

পরে ফিরলেন নাজমুলও। বেশ খানিকটা সময় ধরেই নড়বড়ে মনে হচ্ছিল নাজমুলকে। মাধেভেরের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে ধরা খেলেন তিনি। ৩০তম ওভারের তৃতীয় বলটি শরীরের বেশ কাছে ছিল, সেটিতেই কাটের মতো শট খেলতে গিয়ে কিপারের হাতে ধরা পড়েন নাজমুল। ফেরার আগে ৫৫ বলে ৫ চারে ৩৮ রান করেন তিনি। গত ১২ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এটিই তার সর্বোচ্চ স্কোর। নাজমুল ফেরার পর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন আফিফ হোসেন। ৩০ ওভার শেষে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ১৫১।

এরপর দেখেশুনে এগোতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ-আফিফ। বাংলাদেশ পেয়ে গেল তৃতীয় ফিফটি জুটির দেখা। তামিম-এনামুল। মুশফিক-নাজমুল। এরপর মাহমুদউল্লাহ-আফিফ। সর্বশেষ অর্ধশতরানের জুটিটি আসে ৫৬ বলে। পরে ফেরেন আফিফ। ৪৪তম ওভারে সিকান্দার রাজার প্রথম বলে রিভার্স সুইপের মতো করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানের হাতে তুলে দেন আফিফ। ফেরার আগে ৪১ বলে ৪১ রান করেন তিনি। ১০০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে ৪টি চার মেরেছেন আফিফ, তাও টানা ২ ওভারের মধ্যে। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে আফিফের জুটিতে আসে ৮২ বলে ৮১ রান।

এরপর এলবিডব্লু হয়ে ফেরেন মিরাজ। ৪৬তম ওভারের শেষ বলে এলবিডব্লু হন তিনি। যদিও সিকান্দার রাজা বলটি লেংথে দেননি, কিন্তু লেংথ ভুল করে এলবিডব্লু হন মিরাজ। ফেরার আগে ১২ বলে ২ চারে ১৫ রান করেন। ৪ ওভার বাকি থাকতে ষষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের ২৪৯ রান। এরপরেই মাহমুদউল্লাহর ফিফটি। চিভাঙ্গার হাই ফুলটসে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ, তবে সেটি ছিল পরিষ্কার নো। ওই সময় ডাবল রান নিয়ে ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। ফিফটিটি করেছেন ৬৯ বলে। এরপর চোটের কারণে মাঠে আবারও ঢুকল স্ট্রেচার। নিজের নবম ওভার করার সময় চোটে পড়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়েন তানাকা চিভাঙ্গা। প্রথম ম্যাচে এ দৃশ্য দেখা গেছে দুবার। স্ট্রেচারে করে মাঠ ছেড়েছিলেন লিটন দাস ও শরীফুল ইসলাম।

এরপর তাসকিন আহমেদকে ফিরিয়ে তৃতীয় উইকেটের দেখা পান সিকান্দার রাজা। ম্যাচের ৪৮তম ওভারেও বলে আসেন রাজা। তাসকিনকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন রাজা। এরপর শেষ ওভারের চতুর্থ বলে এসে স্ট্রাইক পান মাহমুদউল্লাহ। নিয়াউচির স্লোয়ার চতুর্থ বলটিতে ছক্কা মারেন তিনি। মাহমুদউল্লাহ পঞ্চম বলটি মিস করার পর, শেষ বলে রানআউট হন শরীফুল। এই ওভারের প্রথম তিন বলে তাইজুল ইসলাম ফেরার পর শরীফুল ২ বলে নিতে পারেন একটি সিঙ্গেল। ফলে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯০ রানে থামে বাংলাদেশ। ৮৪ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৮০ রানে অপরাজিত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

জিম্বাবুয়ের হয়ে সিকান্দার রাজা ৩টি, মাধেভেরে ২টি এবং নিয়াউচি ও তানাকা চিভাঙ্গা ১টি করে উইকেট নেন।

বাংলাদেশের দেয়া ২৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামবে জিম্বাবুয়ে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত