বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজ

১৩ ওভার শেষেই ভেস্তে গেল প্রথম টি-টোয়েন্টি

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১৪:১৭

সাহস ডেস্ক

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি বৃষ্টির বাগড়ায় ভেস্তে গেছে। এর আগে দু’দিনের বৃষ্টিতে খেলা নিয়েই তৈরি হয় শঙ্কা। তবে ম্যাচের ঘণ্টা দেড়েক আগে বৃষ্টি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও মাঠ ভেজা থাকায় খেলা শুরু করা যাচ্ছিল না। মাঠ প্রস্তুত করতে তাই চলে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর স্থানীয় সময় ২টা ৪৫ মিনিটে হয় টস। টস জিতে প্রথমে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে পাঠায় স্বাগতিক অধিনায়ক।

শনিবার (২ জুলাই) রাতে ডমিনিকায় রোসেউর উইন্ডসর পার্কে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আবহাওয়া মেঘলা থাকায় টসে জিতে আগে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন স্বাগতিক অধিনায়ক নিকোলাস পুরান। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহও জানিয়েছেন, টস জিতলে তিনিও আগে বোলিং নিতেন।

বৃষ্টির কারণে ম্যাচের ব্যাপ্তি কমে যায়। ২০ ওভারের ম্যাচ ১৬ ওভারে নেমে আসে। পাওয়ার প্লে ৫ ওভার। কেবল একজন ৪ ওভার বোলিং করতে পারবেন। বাকিরা বল করতে পারবেন ৩ ওভার করে। এরপর আবারও বৃষ্টির বাগড়া। আরও এক দফা কমে যায় ওভার। ১৬ ওভারের পর নেমে আসে ১৪ ওভারে। তবে বাংলাদেশ ইনিংসে ১৩তম ওভার শেষ হওয়ার পরই আবারও নামে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে যা খেলা হলো তাতে সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহানের ব্যাটে একশো ছাড়ানো পুঁজি পায় বাংলাদেশ। কিন্তু সেই রান আর তাড়ার সুযোগই পেল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোদের দেখা মিললেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস শুরু হয়নি আর। টি-টোয়েন্টিতে ফল আনতে কমপক্ষে যে ৫ ওভার খেলা হতে হয়, সেটির জন্য পর্যাপ্ত সময় ছিল না বলে মনে করেছেন আম্পায়াররা। এ মাঠে কৃত্রিম আলোরও ব্যবস্থা নেই। তাই কাট অফ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা।

বৃষ্টি বাধার আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রটা অবশ্য উপভোগ্য ছিল না তেমন। সাকিব আল হাসানের ১৫ বলে ২৯ রানের ঝোড়ো ইনিংসে বেশ ভালো একটা ভিত পেলেও পথ হারায় বাংলাদেশ। ৬.১ ওভারে ২ উইকেটে ৫৬ রান করে বাংলাদেশ। এরপর ১১তম ওভারে পরিণত হয় ৭৭ রানে ৭ উইকেটের। আগেভাগেই গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কা তখন বাংলাদেশের, সেটি হয়নি মূলত নুরুল হাসানের কারণেই। ১৬ বলে ২৫ রানের ইনিংসে বাংলাদেশকে ১০০ পার করান তিনি।

এদিন টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফেরেন মুনিম শাহরিয়ার, আকিল হোসেনের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েন নিজের তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা মুনিম। তার সঙ্গে ওপেনিংয়ে আসেন সাত বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা এনামুল হক বিজয়। শুরুটা ইতিবাচকই হয় তার, আকিলকে কাট করে চার মারার পর শেফার্ডকে ডাউন দ্য লেগের বলে মারেন আরেকটি। তবে ১০ বলে ১৬ রান করে ওবেদ ম্যাকয়ের ফুললেংথের বল মিস করে এলবিডব্লু হন তিনি, রিভিউ নিলেও শেষরক্ষা হয়নি তার। এনামুল ও মুনিমকে হারালেও সাকিবের দারুণ ব্যাটিংয়ে পাওয়ারপ্লের ৫ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৪৬ রান। ওই সময়ে ৭টি চারের সঙ্গে আসে ১টি ছক্কা। পরে ১৫ বলে ২ চার ২ ছক্কায় ২৯ রানের একটি ঝড়ো ইনিংস খেলে হেইডেন ওয়ালশের বলে ক্যাচ হয়ে ফেরেন সাকিব। অষ্টম ওভারে অফ স্টাম্পের বাইরের গুগলিকে তাড়া করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হন তিনি। তার আগে চারে নামা লিটন দাস ছিলেন নরবরে। মাত্র ৯ রান করে রোমারিও শিফার্ডের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন লিটন।

সাকিব আউট হওয়ার এক বল পরই আবারও নামে বৃষ্টি। প্রায় আধঘণ্টার মতো তাতে বন্ধ ছিল খেলা। বিরতির পর পথ হারাতে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম বলেই হেইডেন ওয়ালশকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন আফিফ হোসেন, কোনো রান না করেই। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ঠিক ছন্দে ছিলেন না। রোমারিও শেফার্ডের বল তাড়া করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ধরা পড়েন ১৩ বলে ৮ রান করে। ওই ওভারের পঞ্চম বলে কট-বিহাইন্ড হন মেহেদী হাসান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সে উইকেট পায় রিভিউ নিয়ে। তবে সেখান থেকে কিছুটা হাল ধরেন নুরুল হাসান। টেস্ট সিরিজের মতো আবার লড়াই করেন তিনি। ওবেদ ম্যাকয়কে চারের পর ওডিন স্মিথের ৩ বলের ব্যবধানে মারেন ২টি ছয়-ফাইন লেগের পর মিডউইকেট দিয়ে। অবশ্য এরপর গতি কমিয়ে অফ স্টাম্পের বাইরে করেন স্মিথ, সেটি ঘুরিয়ে খেলতে গিয়ে ধরা পড়েন নুরুল। ১৩তম ওভার শেষ হওয়ার পর আবার নামে বৃষ্টি। নাসুম অপরাজিত ছিলেন ৪ বলে ৭ রান করে।

ক্যারিবীয়নদের হয়ে উইকেট নিয়েছেন সব বোলারই। ৩ ওভারে ২১ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন শেফার্ড। ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন হেইডেন ওয়ালশ। এছাড়া আকিল হোসেন, ওবেদ ম্যাককয় ও ওডিন স্মিথ ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।

যদিও রেকর্ডের খাতায় এসবের মূল্য নেই। বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ দিকের বৃষ্টির পর স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৮ অতিক্রম করলে ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হয় আম্পায়ারদের। কারণ ডমিনিকার এই মাঠে নেই কোন কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা। ম্যাচ পরিত্যাক্ত ঘোষণার সময় অবশ্য রোদ থাকলেও কাট অফ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়াররা। বিস্ময় আর হতশা প্রকাশ করেন দর্শকরা, হতাশা টিকরে বের হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষাতেও। কিন্তু কিছুই করার নেই। নিয়মে বাঁধা আম্পেয়ারদের সিদ্ধান্ত। ফ্লাড লাইট না থাকায় যেকোনো সময় নামবে অন্ধকার।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত