লা ফাইনালিসিমা কাপ

মেসি-মর্টিনেজ-ডি মারিয়ার ঝলকে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২২, ২২:১৭

সাহস ডেস্ক

পুরো ম্যাচে ইতালিকে পাত্তাই দিলো না আর্জেন্টিনা! রক্ষণ জমাট রেখে ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপট দেখাল দলটি। জর্জো কিয়েল্লিনিসহ ইতালির চারজন খেলোয়াড় মেসিকে ঘিরে ধরেছিল, তাকে আটকাতে জার্সিও টেনে ধরেছেন কিয়েল্লিনি। তুব আটকাতে পারেননি আর্জেন্টাইন এই এলিয়েনকে। বার বার তার সাথে এরকম ঘটলেও সেই মেসিই হলেন ম্যাচ সেরা। গোল না পেলেও অসাধারণ নৈপুণ্যে দুটি গোলের সহায়তা করেছেন তিনি। পুরো ম্যাচে মেসি-মার্টিনেজ-দি মারিয়ারা উপহার দিলেন নজরকাড়া নৈপুণ্য। যার বেশির ভাগেরই শেষে বিজয়ীর নাম লিওনেল মেসি। তিন এই মহারথির নৈপুণ্যে ইতালিকে হারিয়ে আরও একটি শিরোপা ঘরে তুলল আলবিসেলেস্তারা।

বুধবার (০১ জুন) দিবাগত রাতে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ২০২২ সালের লা ফাইনালিসিমার ফাইনালে ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। দলের হয়ে গোল ৩টি করেন লাউতারো মার্টিনেজ, দি মারিয়া ও শেষদিকে বদলি নামা পাওলো দিবালা। এর দুটি গোলেই অবদার রাখেন লিওনেল মেসি।

এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে আর্জেন্টাইন বাহিনী। মেসি দেখা দিলেন মেসির রূপে। তবে এই ম্যাচে আলাদা করে নজর কেড়েছেন আনহেল দি মারিয়াও। ইতালির রক্ষণভাগে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছেন তারা। মাঝে অল্প কিছু সময় নিজেরা পরীক্ষা দিলেও আক্রমণের পর আক্রমণে তার ব্যতিব্যস্ত রাখল ইতালিকে। এর সুবাদে ম্যাচের ৫৬ শতাংশ সময়ে বল পায়ে রেখে গোলমুখে ১৭টি শট নেয় দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল নয়টি। অন্যদিকে, সাতটি শটের মধ্যে ইতালির লক্ষ্যে ছিল তিনটি। চারবারের এই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা কাতার বিশ্বকাপে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইতালির জমাট রক্ষণের কড়া পাহারা ভেদ করে বারবারই বেরিয়ে যাচ্ছিলেন মেসি। ১৫ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে তিন-তিনবার ইতালির রক্ষণ ভেদ করে বেরিয়ে গেছেন। কিন্তু গোল পাননি বা অন্য কাউকে দিয়েও গোল করাতে পারেননি। তবে মেসি সফল হলেন ২৮তম মিনিটে। ইতালির পেনাল্টি বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে রক্ষণচেরা এক পাস দিলেন লওতারো মার্তিনেজকে। ডান পায়ের আলতো ছোঁয়ায় আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিলেন মার্টিনেজ।

আনহেল দি মারিয়া

বিরতিতে যাওয়ার আগে আবারও এগিয়ে যায় স্কালোনির শিষ্যরা। ম্যাচের ৪৪তম মিনিটে লওতারো মার্তিনেজের অসাধারণ এক থ্রু পাস থেকে গোল করে দলকে আবারও এগিয়ে দনে আনহেল দি মারিয়া। এতে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা। এ গোলটি আরেকটি কথাও যেন অনুচ্চারে বলতে চেয়েছে...এই আর্জেন্টিনা একা মেসির ওপর নির্ভরশীল নয়, লিওনেল স্কালোনির এই আর্জেন্টিনা সত্যিকার অর্থেই একটি দল হিসেবে খেলে!

বিরতি থেকে ফিরে এসে আক্রমণের ধার মোটেও কমেনি স্কালোনির শিষ্যদের। ইতালিকে যেন আরও চেপে ধরতে চাইল তারা। টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব উতরাতে না পারা ইতালি এ ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর যে সংকল্প নিয়ে এসেছিল, তা কোনো পাত্তাই পেল না আর্জেন্টিনার দারুণ ফুটবলের কাছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণে ইতালিকে রীতিমতো বিপর্যস্ত করে ফেললেন মেসিরা। ৪৯ থেকে ৬১ এই ১২ মিনিটে তিনটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছে আর্জেন্টিনা। তিনটিরই শেষ দি মারিয়ার মাধ্যমে। ৪৯ ও ৫৯ মিনিটে দি মারিয়ার বাঁ পায়ের দুর্দান্ত দুটি শট দারুণ দক্ষতায় বাঁচিয়েছেন ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা। ৬১ মিনিটে দি মারিয়ার অসাধারণ বাঁকানো শটও গোলে ঢুকতে পারেনি দোনারুম্মার কারণেই। তিনটি সুযোগের দুটিই তৈরি হয়েছিল মেসির অসাধারণ ড্রিবলিং থেকে।

ম্যাচের ৫৬তম মিনিটে বোনুচ্চির ব্যাক পাসে জেগেছিল ইতালির আত্মঘাতী গোল হজমের সম্ভাবনা। তবে শেষ মুহূর্তে গোললাইন থেকে বল বিপদমুক্ত করেন দোন্নারুমা। ৬০তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে উঁচু করে বল বাড়ান নিকোলাস ওতামেন্দি। তা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে দি মারিয়ার শট কর্নারের বিনিময়ে বাঁচান দোন্নারুমা। পরের গল্পটা আর্জেন্টিনা ও তাদের অধিনায়ক মেসির একচ্ছত্র প্রাধান্যের। ৬৫তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে মেসি একাই আক্রমণে উঠে ডি-বক্সে ঢুকে শট নেন। তা কোনোমতে ঠেকিয়ে দেন দোন্নারুমা। চার মিনিট পর বাঁকানো শট আবারও ফিরিয়ে দেন দোন্নারুমা। ৮৩তম মিনিটে মেসির আরেকটি প্রচেষ্টা প্রতিহত হয় ইতালির ডি-বক্সে। দোন্নারুমা দৃঢ়তা না দেখালে ইতালির হারের ব্যবধান হতে পারত অনেক বড়। একের পর এক গোল বাঁচিয়ে গেছেন এই ইউরোপিয়ান গোলরক্ষক।

জর্জো কিয়েল্লিনিসহ ইতালির চারজন মেসিকে ঘিরে ধরেছিল, তাকে আটকাতে জার্সিও টেনে ধরেছেন কিয়েল্লিনি।

তবে একদম শেষ মুহুর্তে আর্জেন্টাইনদের আর প্রতিহত করতে পারলেন না এই গোলরক্ষক। ম্যাচের ৯৪তম মিনিটে দোন্নারুমাকে পরাস্ত করেন বদলি নামা দিবালা। গোলের খোঁজে থাকা মেসি ডি-বক্সের প্রান্তে গিয়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের চাপে বল হারিয়ে ফেলেন। তবে সৌভাগ্যবশত সেখানেই অবস্থান করছিলেন তিন মিনিট আগে বদলি নামা ফরোয়ার্ড দিবালা। সেখান থেকে নিচু শটে দোন্নারুমাকে পরস্ত করে ইতালির কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন দিবালা। গোলটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচ শেষের বাঁশি বাজান রেফারি। এতে ইউরোপিয়ান দল ইতালিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় লাতিন আমেরিকার দল আর্জেন্টিনা।

এ ম্যাচটি ছিল মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। ইউরোপ আর লাতিন আমেরিকার লড়াইয়ে অনেক বছর ধরেই ইউরোপের জয়জয়কার। সর্বশেষ ৪টি বিশ্বকাপই গেছে ইউরোপে। লাতিন আমেরিকান ফুটবল ইউরোপের সঙ্গে আর পেরে উঠবে কি না, এই প্রশ্ন উঠেই গিয়েছিল। সে প্রশ্নের দারুণ জবাবই দিল আর্জেন্টিনা। টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে ওয়েম্বলিতে নেমেছিল স্কালোনির দল। একদিক থেকে সেই দলের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জও ছিল এই ম্যাচ। স্কালোনি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান দলের সঙ্গে খেলা। তাতে ১৯৯৩ সালে এর আগে সর্বশেষ ফিনালিসিমার মতো এবারও জয়ী কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নরা। ১৯৯৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আর্জেন্টিনা। এবারের জয়টা হয়তো আরও বেশি আধিপত্য দেখিয়েছে তারা। ইতালি ততক্ষণে ম্যাচ থেকে অদৃশ্য। এমনই অদৃশ্য যে, আজ্জুরিদের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে না পারাটাকে আর দুর্ঘটনা বলে মনে হচ্ছে না। কোপা আমেরিকার পর লিওনেল মেসির হাতে আরেকটি ট্রফি কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে নিশ্চিতভাবেই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত