কাতার বিশ্বকাপ: অভিবাসী শ্রমিকদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করছে

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৮:২০

সাহস ডেস্ক

২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে কাতারে। তবে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অনেক আগেই তোলা হয়েছিল। কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে আগেই আপত্তি তুলেছিল ইউরোপের দেশগুলো। তবু সব সমালোচনা পাশ কাটিয়ে আগামী নভেম্বরে হবে কাতার বিশ্বকাপ।

এর মধ্যে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে, কাতার বিশ্বকাপে শ্রমিকদের অত্যাচার করছে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা জোরপূর্বক শ্রমের অধীনে পড়ে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দেখেছে, কাতারে কাজ করা নিরাপত্তাকর্মী, যাদের মধ্যে ২০২২ বিশ্বকাপের প্রকল্পের লোকও আছেন, তারা যে পরিবেশে কাজ করেছেন, তা জোরপূর্বক শ্রমের পর্যায়ে পড়ে।’

নতুন প্রতিবেদনে এ সংস্থা জানিয়েছে, তারা কাতারে আটটি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মীর অভিজ্ঞতা নথিভুক্ত করেছে, ‘নিরাপত্তাকর্মীরা, তাঁরা সবাই অভিবাসী, জানিয়েছেন দিনে ১২ ঘণ্টা, সপ্তাহের সাত দিনই কাজ কাজ করতে হতো তাঁদের। প্রায়ই মাস এমনকি পুরো বছরও কোনো ছুটি ছাড়াই কাটিয়ে দিয়েছেন তারা। 

অধিকাংশই বলেছেন, তাদের চাকরিদাতারা কাতারের আইন অনুযায়ী সাপ্তাহিক ছুটি দিতে রাজি হতেন না এবং যে কর্মীরা ছুটি নিতেন, তাদের বেতন কেটে শাস্তি দেওয়া হতো। একজন কাতারে তার প্রথম বছরের বর্ণনায় বলেছেন, “যোগ্যরাই টিকে থাকে।”’

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আর্থিক ও সামাজিক বিচার বিভাগের প্রধান স্টেফান ককবার্ন বলেছেন, ‘আমরা যেসব অত্যাচার দেখেছি, এর পেছনে কাতারে অভিবাসী কর্মী ও চাকরিদাতাদের মধ্যে ক্ষমতার বিশাল পার্থক্যই প্রভাব ফেলেছে। এর অর্থ কর্তৃপক্ষ এখনো শ্রমিক আইন পুরোপুরি প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা যেসব নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁরা সবাই জানতেন চাকরিদাতার নিয়ম ভাঙছেন। কিন্তু এর প্রতিবাদ করার ক্ষমতা তাঁদের ছিল না। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত কর্মীরা প্রতিদিন কাজে হাজির হতেন। কারণ, তা না করলে তাঁদের আর্থিকভাবে শাস্তি দেওয়া হতো। চুক্তি বাতিল বা দেশে ফেরত পাঠানোর ভয় তো আরও ভয়ংকর।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে কাতার অনেক উন্নতি করেছে, কিন্তু আমাদের গবেষণায় আমরা অনেক অত্যাচারের নমুনা পেয়েছি। বিশ্বকাপের জন্য বেসরকারি খাতের চাহিদা অনেক বেড়েছে, আরও বাড়বে। চাকরিদাতারা এখনো প্রকাশ্যে শ্রমিকদের শোষণ করছে। কর্তৃপক্ষকে শ্রমিকদের রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে হবে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে। বিশ্বকাপ আর মাত্র কয়েক মাস দূরে, ফিফাকেও এমন অত্যাচার ঠেকাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। না হলে এমন ঘটনা এ টুর্নামেন্টের গায়ে কালি লেপে দেবে।’

স্টেফান ককবার্ন আরও বলেন, ‘আর ফিফার উচিত তাদের শক্তি কাজে লাগিয়ে কাতারকে চাপ দেওয়া। যেন কাতার নিজেদের আইন আরও ভালোভাবে প্রয়োগ করে। সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। এখনো যদি সঠিক চর্চা না করা হয়, ভক্তরা (বিশ্বকাপ দেখে) ঘরে ফেরার পরও অত্যাচার চলতে থাকবে।’

এ ব্যাপারে ফিফা বলেছে, কাতারে মানবাধিকার বিষয়ে অ্যামনেস্টির সঙ্গে বসবে তারা, ‘ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে জড়িত কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের অত্যাচার মেনে নেবে না। ক্লাব বিশ্বকাপ ও আরব কাপের সময় যেসব ঠিকাদার সঠিক মান বজায় রেখে কাজ করতে পারেনি, তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত